বাড়ছে করোনার উপসর্গ: নেত্রকোণায় ১ বছরের চালু হয়নি ৪ ভেন্টিলেটর

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণায় প্রতিদিন বাড়ছে করোনার প্রকোপ। সীমান্তের চারটি ইউনিয়নে ঘরে ঘরে রয়েছে করোনার লক্ষণ। সর্দি, জ¦র, কাশি ও গলা ব্যথার রোগীরা ভিড় করছে বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে। সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না বলছেন করোনা আক্রান্ত রোগীর স্বজনরা। আক্রান্তদের বাড়িঘরে নেই তদারকির বালাই। কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। স্থানীয়দের অভিযোগ,সদর হাসপাতালসহ উপজেলা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় সংশ্লিষ্টদের রয়েছে অনীহা। ৪ টি ভেন্টিলেটর মেশিন সরবরাহ করা হলেও এনেসথেটিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ১ বছর ধরে পড়ে অচল আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে গতবছর করোনা পরিস্থিতির শুরুতে হাসপাতালটিতে ৩৬টি শয্যা নিয়ে চালু করা হয় করোনা ওয়ার্ড। কেবল ৩৬টি শয্যা, তিনটি পালস অক্সিমিটার আর ১১টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ছাড়া আর কিছুই নেই করোনা ইউনিটে। শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য অক্সিজেন-সহায়তা অপরিহার্য হলেও পুরো হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা চালু করা হয়নি। গণপূর্ত বিভাগ সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালুর জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন করছে। তবে এখনো শেষ হয়নি এর কাজ।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ জুন রোববার জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ জন। জেলায় মোট আক্রান্ত রোগী ১৪৭৫ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১১৪৯ জন। জেলায় এখনো করোনা শনাক্ত রয়েছে ৩২৬ জনের। শনাক্তের হার ৮.১০। জেলায় মারা গেছেন ২৯ জন।
করোনার নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে স্থানীয়দের রয়েছে নানান অভিযোগ। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে গেলে অতিরিক্ত টাকা না দিলে নমুনা না নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে, সদর হাসপাতালের ল্যাবে কর্মরতদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া নমুনা দেয়ার পর রিপোর্ট প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও পোহাতে হয় বিড়ম্বনা। প্রায় এক বছর আগে জেলার সদর হাসপাতালটির জন্য চারটি ভেন্টিলেটর মেশিন সরবরাহ করা হলেও এনেসথেটিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেনের অভাবে সেগুলোও চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার এক রোগীর স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গুরুত্বর অসুস্থ হলেও হাসপাতলে রোগীকে ভর্তি করতে চায়নি। তারা বলছে, বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা নিতে। বাড়িতে কেউ খোঁজ খবর নেয়নি। মাত্র একদিন একজন ফোন করে নাম ঠিকানা নিয়েছে। বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা গেছে। এমন যেনো আর কারো ভাগ্যে না হয়।’
নেত্রকোণা দুর্গাপুর পৌর শহরের বাসিন্দা জাহাঙ্গির মাহমুদ বলেন,‘ সীমান্তের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখার জন্য তৈরী থাকতে হবে। সীমান্তের মানুষ, করোনার ভয়াবহতা বুঝে না। এমনকি ঘরে ঘরে উপসর্গ থাকলেও কেউ হাসপাতালে যাচ্ছে না। এবং এসব কারণে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে যাচ্ছে।’
জেলা সূজনের সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল বলেন,‘ প্রশাসন থেকে বারবার স্বাস্থ্য বিধির কথা বললেও কেউ তা পরোয়া করছে না। মাস্ক ব্যবহার করছেনা কেউ। স্বাস্থ্য বিধি মানছে না। শহরের মানুষ করোনার প্রকোপ কিছুটা বিশ^াস করলেও গ্রামের মানুষ একেবাইরেই বিশ^াস করেনা। অবাধে চলা ফেরা করছে সবাই। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ছাত্রছাত্রী, সুশীল সমাজ সকলকে একত্রে এগিয়ে না এলে খুব শিগ্রুই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।’
বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজু বলেন, ‘ কেউ করোনা আক্রান্ত হলেই আমরা প্রশাসনের লোকজনকে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে বাড়ি লকডাউন করে আসি। ফলমূল, খাবার দিয়ে এসে বাড়ি থেকে কেউ না বেরুতে নিষেধ করে দিয়ে আসি। কিন্তু কেউ কথা মানছেন না। এই অবস্থায় আইনের কঠোর প্রয়োগ না হলে এর প্রকোপ অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া প্রায় বাড়িতেই করোনার লক্ষণের রোগী আছে কিন্তু তারা নমুনা দিচ্ছে না, নিয়মও মানছে না।’
তবে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এএসএম মাহবুবুর রহমান বলেন, সমস্যা সমাধানে জন্য প্রযোজনীয় সরঞ্জাম চেয়ে বিভাগীয় পরিচালকের কাছে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। ‘সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। ভেন্টিলেটর চারটি চালু করতেও কমপক্ষে তিনজন এনেসথেটিস্ট এবং অন্তত একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। চলতি মাসের মধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ শেষ হবে। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে চালু করতে পারবো।’
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে একাধিক বার ভার্চয়াল সভা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মানতে প্রতিদিন মাইকিং করা হচ্ছে। উন্মুক্ত স্থানে কাঁচা বাজার বসাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাম লকডাউন দেয়া হয়েছে। তারপরও যারা স্বাস্থ্য বিধি মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। চার ভেন্টিলেটর মেশিন রয়েছে। এগুলো চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।