ইজিবাইক ছিনিয়ে নিতেই সাইদুলকে হত্যা করা হয়েছিল-পুলিশ সুপার

বিশেষ প্রতিনিধি: পুলিশ সুপারের নির্দেশে উন্মোচিত হয়েছে নেত্রকোণার দুর্গাপুর থানার অটোচালক সাইদুল ইসলাম (২৭) এর হত্যার রহস্যের ঘটনা। দুর্গাপুরের পশ্চিম বিলাশপুর গ্রামের ইজিবাইক চালক মো. সাইদুল ইসলাম (২৭) হত্যার পর লাশ উদ্ধার ও আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছ। হত্যায় জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই রহস্য উন্মোচন হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন, শেরপুরের পাকুরিয়া গনই মমিনাকান্দা গ্রামের আশরাফুল মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া (২৭), দুর্গাপুরের লক্ষিপুর গ্রামের কমর উদ্দিনের ছেলে সেকুল ইসলাম (২৭) ও ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা বাজারের ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া (৩৫)।
এ নিয়ে বুধবার বিকেলে শহরের কুড়পাড় এলাকায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং করা হয়। এ সময় পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এস এম আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী জানান, সায়েদুল ইসলাম প্রতিদিনের গত ২ সেপ্টম্বর তাঁর শ্বশুরবাড়ি পার্শ¦বর্তী বাকলজোড়ার গাভাউতা গ্রাম থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হন। এর পর থেকে তাঁকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। দুই দিন পর তাঁর বড় ভাই হাদিস মিয়া দুর্গাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ সীমান্তবর্তী মেনকিকান্দা এলাকায় মরাখলা পাহাড়ের পাশে বান্দরের টিলা থেকে সাইদুলের হাত-পা বাধা অবস্থায় অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গত রোববার নিহতের স্ত্রী আকলিমা আক্তার বাদী দুর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ হত্যায় জড়িত অভিযোগে দুর্গাপুরের লক্ষ্মীপুর থেকে সেকুল ইসলাম, ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা বাজার থেকে সবুজ মিয়া ও শেরপুর থেকে মানিক মিয়াকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য পূর্ব পরিল্পিতভাবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কাঠালডাংড়ি গ্রামের আব্দুর রহমান এর ছেলে শাহিন মোল্লার (৩৫) নেতৃত্বে সেকুল ও মানিক তিনজন মিলে সাইদুলকে হত্যা করে ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নেন। এর জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর শাহীন মোল্লা ও মানিক মিয়া গাজীপুর থেকে দুর্গাপুরে সেকুলের কাছে আসেন। পরে সাইদুল ইসলামের ইজিবাইক ভাড়া করে বিভিন্ন স্থানে দিনব্যাপী ঘুরেন। কিন্তু ছিনতাইয়ের কোন সুযোগ না পেয়ে রাতে সাইদুলের মুঠোফোন নম্বর রেখে বিরিশিরি এলাকায় স্বর্না গেস্ট হাউজে রাত কাটান। পরদিন দুপুরে মুঠোফোনে সাইদুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে পুনরায় ইজিবাইকে ঘুরতে থাকেন। এক পর্যায়ে ওই তিনজন সাইদুলের সঙ্গে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে বান্দর টিলা পাহাড়ে ঘুরতে যান। হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সেকুল, মানিক ও শাহিন দুর্গাপুর বাজার হতে গামছা ও স্কচটেপ কিনে সঙ্গে নিয়ে যান। পরে সন্ধ্যার দিকে দুর্গম বান্দর টিলা পাহাড়ে নিয়ে স্কচটেপ দিয়ে হাত পা বেঁধে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে সাইদুলকে হত্যা করে ইজিবাইকটি ঈশ্বরগঞ্জের উঁচাখিলা বাজারের হক্কানি সাউন্ড এন্ড ব্যাটারির মালিক সবুজ মিয়ার কাছে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। সেকুল মানিক ও শাহিন তিনজন আগে এক সঙ্গে গাজিপুরে একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। সেই সুবাদে তাঁরা একে অপরের পরিচিত। পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে গত মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে আদালতের আসামিরা ১৬৪ ধারায় নিজেকে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই হত্যাকা-ের অন্যতম আসামি শাহিন মোল্লাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
নেত্রকোণা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আকবর আলী মুন্সী এঁর তদারকিতে নেত্রকোণা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) এসএম আশরাফুল আলম, পিপিএম-সেবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আলামিন হোসাইন (দূর্গাপুর সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত)এঁর সমন্বয়ে একটি চৌকস টীম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে সেকুলকে দূর্গাপুর থানাধীন লক্ষীপুর বাজার হতে আটক করে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন উঁচাখিলা বাজার হতে আসামী সবুজ মিয়ার হেফাজত হতে চোরাই অটোটি উদ্ধার করে এবং আসামী সবুজ মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ধৃত আসামীদের দেয়া তথ্যমতে ওইদিন গভীর রাতে শেরপুর জেলার সদর থানাধীন পাকুরিয়া গণই মমিনাকান্দা হতে হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যতম আসামী মানিক মিয়াকে গ্রেফতার করে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।