সীমান্তে বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা: ৩৩৩তে ফোন করে চাচ্ছেন খাদ্য সহায়তা

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণার সীমান্ত উপজেলা দুর্গাপুরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ত্রিফল ত্রি থেকে কল করে খাদ্য চাওয়া মানুষের সংখ্যা। সীমান্তের দুটি ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন খাদ্য সহায়তা চেয়ে ফোন যাচ্ছে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ জনের। উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত তাদের করা হচ্ছে খাদ্য সহায়তা। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিষয়টি আশংকাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় তাদের কর্মসংস্থানে বিষয়টি ভাবছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, দুর্গাপুর সীমান্তের কোল্লাগড়া এবং দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের নির্দিষ্ট দুটি এলাকা থেকে প্রতিদিন চাওয়া হচ্ছে খাদ্য সহায়তা। জাতীয় কল সেন্টারে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ফোন করে খাদ্য সংকটের কথা বলছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সোমবার বিকেলে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের পিছনের পুকুর পাড়ে প্রায় ষাট থেকে সত্তর জন উপকারভোগি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করছেন। প্রতিজনকে দেয়া হচ্ছে, ১০ কেজি চাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি ১ লিটার তৈল, ১ প্যাকেট নূডলসও মুড়ি দেয়া হয়।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, করোনা পরিস্থতিতে কাজ কাম হারিয়ে পরিবার নিয়ে তারা পড়েছেন বিপাকে। টিভিতে দেখে সরকারের দেয়া ৩৩৩ নাম্বারে খাদ্য সমস্যার কথা জানিয়ে ফোন করে খাদ্য সামগ্রি সংগ্রহ করছেন। দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনকে থেকে এভাবেই দেয়া হচ্ছে খাদ্য সামগ্রি। করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা, তাই সীমান্তের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির মানুষ প্রতিদিন সরকারের দেয়া নাম্বারে ফোন করে জানাচ্ছেন খাদ্য সংকটের কথা।
কোল্লাগড়া ইউনিয়নের একটি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আঁখি রিছিল বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। সীমান্তের পাহাড়ে কাঠ কেটে লাকড়ী কুঁড়িয়ে জীবন যাপন করতাম। এখন সীমান্ত লকডাউন। ওইদিকে যেতে দেয়না বিজিবি। পরে পাশের বাড়িতে টিভিতে দেখলাম ৩৩৩ ফোন করলে খাবার পাওয়া যায়। তাই ফোন করেছি। তারা গত রাত নয়টার দিকে বলেছেন, খাবার নিতে এসে আমি তাই এসেছি। খাবার নিয়ে যাচ্ছি।’
উপজেরার কোল্লাগড়া গোচ্ছগ্রামের বাসিন্দা এপ্রিল তাম্বুগং, দিপালি হাজং, ত্রাপিট রেমা বলেন, ‘আমরা পরিবারের লোকদের খাদ্য দিতে পারছিলাম না। খাবার নিয়ে কষ্ট করছিলাম। প্রতিবেশির এক জনের কাছে শুনে ৩৩৩ ফোন করি। তারা অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে। আমরা উত্তর দিই। শেষে আমাদের বললেন। আপনারা খাবার পাবেন। পরে ইউএনও অফিস থেকে আমাদের ফোন করে খাবার দিয়েছে। খাবার পেয়ে আমরা খুব খুশি।’
দুর্গাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন,‘ প্রথম দিকে একজন দুজন করে এই সহযোগিতা চাইতো। এখন প্রতিদিন পঞ্চাশ ষাট জন ফোন করে যোগাযোগ করছে। এক জনের কাছে থেকে শোনে আরেকজন ফোন করছে। এর সংখ্যা বাড়তে থাকলে আমরা সমস্যায় পড়বো। মাত্র দ’ুটি ইউনিয়নের গারো, হাজং সম্প্রদায়ের মানুষেরা খাদ্য সংকটের কথা জানিয়ে খাবার চাচ্ছেন।’
দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাজীব উল আহসান বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে দুর্গাপুর ১ নং বালুঘাটটি বন্ধ রয়েছে। এজন্য অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে গেছে। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টির মানুষজন পাহাড় থেকে কাঠ/লাকড়ি সংগ্রহ করে জীবন জীবিকা চালাতো। করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা সংকটে পড়ে খাবার চাইছেন। আমরা সরকারের নির্দেশনা মতে, তাদের কাছে খাবার পৌছে দিচ্ছি। যারা সমস্যায় পড়বেন, আমাদের জানালে আমরা সহযোগিতা করবো। সীমান্তের দুটি ইউনিয়নের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন জানিয়ে বিষয়টি পর্যক্ষেণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান বলেন, ‘সরকারী নির্দেশেনা মতে আমরা তাদের মাঝে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি ভাবছি, যারা কর্মহীন হয়ে গেছেন তাদের কর্মসংস্থান নিয়েও। যাতে তারা এই সংকট থেকে উত্তরণ হতে পারে আমরা সেই চেষ্টা করছি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।