নাটোর মুক্ত দিবস আজ

নাটোর প্রতিনিধি: ২১ ডিসেম্বর, আজ নাটোর মুক্ত দিবস। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকা হানাদার মুক্ত হলেও নাটোর মুক্ত হয় ২১ ডিসেম্বর। কারণ নাটোর ছিলো পাক হানাদারদের ২নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার। এখান থেকেই দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যুদ্ধ পরিচালনা করতো পাক বাহিনী। ২১ ডিসেম্বর আত্নসমর্পনের আগ পর্যন্ত পুরো নাটোর ছিল তাদের দখলে। নাটোরের উত্তরা গণভবন ছাড়াও নাটোর আনছার হেডকোয়ার্টার, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি, পিটিআই ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ছিল পাক সেনাদের নিরাপদ ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধে নাটোরে বড় ধরনের কোন লড়াই না হলেও একাধিক স্থানে চালানো হয় গণহত্যা। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোর সদর উপজেলার ফুলবাগান, মোহনপুর, লালবাজার, কাপুড়িয়াপট্টি, শুকোলপট্রি, মলি¬কহাটি, ফতেঙ্গাপাড়া, ছাতনী, দত্তপাড়া, বড়াইগ্রামের বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়ি, সিংড়ার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরে গণহত্যা চালায়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান পাক হানাদার মুক্ত হলেও নাটোর মুক্ত হয় ২১ ডিসেম্বর। ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন গভর্নর হাউজ বর্তমান উত্তরা গণভবনে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে পাক সেনা গ্যারিসনের টু আইসি ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফের নেতৃত্বে পাক সেনাবাহিনীর অফিসার, জেসিও এবং মিলিশিয়া সহ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার সৈন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্নসমর্পণ করে । এ সময় নাটোর সেনা গ্যারিসনের কমান্ডেন্ট মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ ও মিত্র বাহিনীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডেন্ট লে.জেনারেল লছমন সিং। আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মসমর্পণের পর পাক সেনাদের ট্যাঙ্ক, কামান সহ প্রায় ১১ হাজার অস্ত্র মিত্র বাহিনীর হস্তগত হয়। আত্নসমর্পণের খবর পেয়ে ওইদিন বিকেলে আনন্দে জয় বাংলা ধ্বনী দিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে আসে সাধারণ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধে নিহত হতভাগ্যদের গনকবরের আজও মেলেনি কোন সরকারী স্বীকৃতি। সরকারীভাবে তৈরী করা হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। তবে বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষে ফাঁসির রায় কার্যকর করায় এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সহ স্বাধীনতার স্বপক্ষের সাধারণ মানুষ খুশী। তারা অনতিবিলম্বে অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান। তারা আরো দাবী জানান, সকল গণকবর ও শহীদদের স্বীকৃতি এবং সেসব স্থানে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করে পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ব্যবস্থা করা হোক।
এদিকে দিবসটি পালনে সকালে নাটোর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড জেলা শাখা, সাবেক জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ও সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম যৌথ আয়োজনে বের করা শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহরের মাদ্রাসা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অবস্থিত বিজয় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় বক্তারা সম্প্রতি প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় জড়িত নয় এমন অনেকের নাম আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে তালিকা প্রকাশের দাবী জানান।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।