নেত্রকোণায় ৪৩৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা: ৯৮ মেডিকেল টিম গঠন

স্টাফ রির্পোটার: নেত্রকোণায় বন্যার পরিস্থিতি ক্রমেই আরো অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে নয়টি উপজেলাই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলার মধ্যে সড়ক, ঘরবাড়ি, পুকুর-মৎস্য খামার, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।
এ দিকে কলমাকান্দায় বন্যার পানিতে ডুবে নিখোঁজ হওয়া শিশু উজ্জ্বল মিয়ার (৫) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধা সাতটার দিকে স্থানীয়রা শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে। উজ্জ্বল মিয়া বিশরপাশা নানীয়া গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে। সে সোমবার বিকেল তিনটার দিকে ঘর থেকে নিঁখোজ হয়। ওই ঘরটিতে বন্যার পানি উঠে ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পযন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন করে খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যায় কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, পূর্বধলা, মোহনগঞ্জ, আটপাড়া ও সদর উপজেলায় নতুন করে বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় সবচেয়ে এখনো বেশি খারাপ অবস্থা কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলাতে। এর মধ্যে কলমাকান্দার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। ওই উপজেলায় গত তিন পৌঁছানো যায়নি। পানিবন্দি মানুষ গরু-ছাগলসহ গৃহপালিত প্রাণি নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। বন্যাকবলিত ওই সব এলাকায় কয়েক হাজার পুকুর ও মাছের খামার ডুবে মাছ পানিতে ভেসে গেছে। স্থানীয় বেশ কিছু গ্রামীণ বাজার এখনো পানির নিচে রয়েছে। কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি থাকায় অন্তত ৪৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে।


জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জানান, ‘সারা জেলায় ৩৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় ১৫৫টি, সদরে ২৫টি, বারহাট্টায় ৮০টি, দুর্গাপুরে ৪১টি, মোহনগঞ্জে ২১টি, আটপাড়ায় ১০টি রয়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষ ও যোগাযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।’

নেত্রকোণা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাকিকুল ইসলাম বলেন, ‘কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোণা সড়কের সাড়ে ৫ কিলোমিটার পথের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ বেশি হচ্ছে।’
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, ‘সোমশ্বরী ও ধনু নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার কিছুটা নিচে থাকলেও কংস ও উব্দাখালি নদীর পানি এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে। কংস নদীর জারিয়া পয়েন্টে ২.১০ মিটার এবং উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যায় জেলার ১০টি উপজেলাতে ৯৮টি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। বন্যাকবলিত মানুষদের খাবার স্যালাইন,পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট, সর্দি-জর ও পানি বাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হচ্ছে।
নেত্রকোণা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া আছে। একই সঙ্গে বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ পযন্ত ১১০ মেট্রিকটন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।