ধর্মপাশায় হারিয়ে যেতে বসেছে পাটি শিল্প

ধর্মপাশা প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের একটি প্রসিদ্ধ গ্রামের নাম মহদীপুর দাসপাড়া। শীতল পাটি শিল্প গ্রামটিকে প্রসিদ্ধ করেছে। ওই সময় গ্রামটির জৌলুস ছিল মানুষ ছিল সুখে স্বাচ্ছন্দে। সারা বছর ধরে চলত তাদের কর্মযজ্ঞ। কালের বিবর্তনে আধুনিক সভ্যতার চাপে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প। কিন্তু মহদীপুরের দাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা পূর্ব পূরুষের পেশার শেষ প্রান্তটি ধরে রেখে এখনও পাটি শিল্পের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। যুগ যুগ ধরে প্রায় ১৫০বছর থেকে ২০০ বছর যাবৎ ১৭০ থেকে ২১০ টি পরিবার পাটি শিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। পরিবারের পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। দাস পাড়া গ্রামের পাটিকর সত্যবান জানান,আমরা বাড়ির সামনে পতিত জমিতে জ্যৈষ্ঠ মাসে চারা রোপণ করি যার আঞ্চলিক নাম (মুক্তা গাছ)। মুক্তা গাছ বেতের পরিপক্ব হতে সময় লাগে ৩ বছর। বছরে দুই বার কাটা যায়, আর রোপণ করতে হয় না। তার পর বার বার কাটা যায়। মুক্তা গাছ কাটার উপযোগী হলে তা কেটে মাঝ খানের অংশটুকু ফেলে দিয়ে বাকি অংশ রৌদ্রে শুকিয়ে বেতের জন্য সাইজ করা হয়। বেত থেকে বেতি তৈরি হলে ওই বেতী প্রথমে আটি বেধে ভাতের মার মেশানো পানিতে ৬ থেকে ৭দিন ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর তুলে পরিমানমত সেদ্ধ করতে হয়। সেদ্ধ করার পর রোদে শুকিয়ে মহিলা শ্রমিকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন পাটি তৈরির কাজে। সত্যবান আরও বলেন,আমরা পাটি তিন ধরনের তৈরি করি শীতল পাটি, রঙ্গিন পাটি ও জামদানী পাটি। এর মধ্যে শীতল পাটির চাহিদা নেই বল্লেই চলে। আমাদের তৈরিকৃত পাটি ছড়িয়ে পড়ছে জেলাসহ সারাদেশে। বর্তমানে পাটির কদর কম থাকায় লাভ খুব কম হচ্ছে একটি ৪ হাত ৫ হাত মাপের পাটি ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া আতি ও বেতি মিলিয়ে রং করে তৈরি করা পাটি ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকয় বিক্রি হয়। আমাদের গ্রামের সকল পাটি শিল্পিরা সপ্তাহে বৃহস্পতি বার ধর্মপাশা সদর, শনিবার মধ্যনগর,রবিবার বাদশাগঞ্জ, ও বুধবার পার্শ্ববর্তী উপজেলা মোহনগঞ্জে হাট বার করে থাকেন।
আরেক পাটিকর বারেশ চন্দ্র কর জানান, এক সময় নিম্ন মধ্যম শ্রেনী থেকে বিত্ত্ববানদের বিয়ের আয়োজনে শীতল পাটি না হলে কনে বসতনা বিয়ের পিড়িতে। কিন্তু এখন এর প্রচলন নেই বল্লেই চলে। তবে শুস্ক মৌসুমে বেচা কেনা ভাল হয় বর্ষা কালে বিয়ে উপলক্ষে কিছু পাটি বিক্রি করা যায় কিন্তু অন্যান্য সময় পাটি খুব কম বেচা কেনা হয়।তার পরও বাপ দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এ শিল্প নামে মাত্র চালিয়ে যাচ্ছি ।
পাটিকর সুনিল সরকার, পাটিকর নিশি কান্ত কর ও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় উপকণের দাম অন্যদিকে বৈষম্যের কারণে এ শিল্প এখন চরম ভাবে বিপর্যস্ত।গরম মৌসুমে পাটির চাহিদা থাকলেও শীতে পাটির চাহিদা না থাকায় তাদের খুব দর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একজন শ্রমিক ১৫ দিন শ্রম দিয়ে একটি পাটি তৈরি করতে পারেন। বেত ও শ্রমিকের দাম দিয়ে ১০০০ টাকার একটি রঙ্গিন পাটিতে লাভ হয় মাত্র ৮০ থেকে ১০০টাকা।আর একটি জামদানী পাটিতে লাভ হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।পাশাপাশি একটি শীতল পাটি বিক্রি করে লাভ হয় মাত্র ২০০ টাকা।সব মিলিয়ে লাভ কম হওয়ায় শ্রমিকদের মূলধন হারিয়ে যাচ্ছে।অনেক পাটি শিল্পি এনজিও সমিতির মাধ্যমে ঋন নিয়ে পাটি শিল্পকে টিকিয়ের্ খছেন। দিন রাত শ্রম দিয়েও তাদের থাকতে হচ্ছে অর্ধাহারে-অনাহারে। কিন্তু পাটিকরদের মুল সমস্যা সমাধানের কোন ব্যবস্থা কেউই করেননি। পাটি শ্রমিকরা সরকারি ভাবে উপজেলা কিংবা ব্যাংক থেকে অর্থনৈতিক কোন ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না।তারা মনে করেন সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমিয়ে অনলে ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যাবস্থা করলে এ পাটি শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।