হাওরাঞ্চলে আড়াই লাখ মে.টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা : আবহাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

বিশেষ প্রতিনিধি: আবহাওয়া অনুকূল থাকায় নেত্রকোণায় বোরোর বাম্পার ফলন হতে পারে বলে জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এখন জেলায় হাওরের বোরো জমিতে সবুজের সমারোহ। যেন সবুজ কার্পেট।
নেত্রকোণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, নেত্রকোণা জেলার পাঁচটি হাওর উপজেলাসহ ১০টি উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৮১ হাজার ৯৫২ হেক্টর। আবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ছয়শত হেক্টর। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান, এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল এবং ৩২০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের বোরো আবাদ করা হয়েছে। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ২৫ হাজার ৮২১ টন। আর হাওরাঞ্চলে বোরোর আবাদ হয়েছে চল্লিশ হাজার পাঁচশ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগের হিসেবে হাওরাঞ্চলে এবছর প্রায় আড়াই লাখ মে.টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান জানান, নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় চারটি,খালিয়াজুরীতে ছয়টি,মদনে চারটি, আটপাড়ায় একটি, ধর্মপাশায় একটি,কলমাকান্দায় একটি এবং বারহাট্টায় তিনটি হাওরের ১০৫টি ছোট-বড় বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ প্রায় শেষের দিকে।’
বুধবার সকালে মদন এবং খালিয়াজুরীর কয়েকটি হাওর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাঁধগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে।
খালিয়াজুরী এলাকার হাওররক্ষা আন্দোলনের নেতা স্বাগত সরকার শুভ জানান,পিআইসি কমিটিগুলো নির্ধারিত সময়ে গঠন না হওয়ায় কাজ বিলম্বে শেষ হয়। ফলে বাঁধ নির্মাণের কাজও বিলম্বে শেষ হয়। একারণে বছরের একমাত্র ফসল হুমকীতে থাকে। এবছর ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। বড় ধরণের দুর্যোগ না হলে ফসল ঘরে তুলতে পারবে।
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর এলাকার হাওররক্ষা পরিষদের নেতা কাজল চৌধুরী জানান,এখন পর্যন্ত হাওরগুলোর পরিস্থিতি ভালো। ধান পাকতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনূকূল থাকলে কোনো সমস্যা হবেনা। যদি কোনো বড় ধরনের প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি না হয়, তাহলে বোরো আবাদ ভালো হবে।
নেত্রকোণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান জানান, তিনি হাওরের কয়েকটি বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। বাঁধগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন আগাম পানি আসলেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ না করে বাঁধ নির্মাণে উন্নত প্রযুক্তি বের করে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা দরকার। এতে করে আগাম বা আকস্মিক কোনো বন্যা হলেও ধানের কোনো ক্ষতি নাও হতে পারে।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন থেকে হাওরের বাঁধ নির্মাণ মনিটরিংও করা হচ্ছে। আমি নিজেও বেশ কয়েকবার হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছি। বাঁধে মাটি কাটার কাজ শেষ হলেও দূর্বাঘাস লাগানোর পাশাপাশি তদারকি বাড়ানো হয়েছে। ফসল না উঠানো পর্যন্ত সবাইকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। নেত্রকোণা খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে চিহ্নিত হলেও বিগত কয়েকবারের বন্যায় ফসলের বেশ ক্ষতিসাধিত হয়। এজন্যই এবার বাঁধ নির্মাণের দিকে জোর দেয়া হয়েছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।