সুনামগঞ্জে সীমান্ত নদী মাহারামের ওপর দিয়ে উড়াল সড়ক নির্মাণ!

হাবিব সরোয়ার আজাদ: সুনামগঞ্জের পর্যটন শিল্প বিকাশে এবার সীমান্তনদী মাহারামের ওপর দিয়ে উড়াল সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।’ এ সড়ক নির্মাণ করা হলে এটি হবে দেশের মধ্যে কোন নদীর ওপর প্রথম কোন উড়াল সড়ক নির্মাণ কাজ।’
মঙ্গলবার থেকে এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সমীক্ষা শুরু করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্প গ্রহণ ও প্রাক্কলন ব্যায় নির্ধারণ করে পাঠাবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সুত্র বুধবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, প্রাচীন বাংলার রাজধানী লাউড়, ওপারের মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিরে বেড়িয়ে আসা প্রাকৃতিক সম্পদ’র ভান্ডার সীমান্তনদী জাদুকাঁটা, সবুজ বৃক্ষের অনিন্দ্য সুন্দর বারেকটিলা (বড়গোপ) টিলা ও মাহারাম নদীর দক্ষিণ তীরে গড়ে উঠা এশিযার সবৃহৎ হাজী জয়নাল আবেদীনের শিমুল বাগান, বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত টেকেরঘাট চুনপাথর খনি প্রকল্প, মুক্তিযোদ্ধা উপত্যকা, শহীদ সিরাজ লেক, লাকমা ছড়া, লালঘাট ঝরণাধারা এবং ওয়ার্ল্ড হেরিটেইজ রামসার সাইট অব টাঙ্গুয়ার হাওরকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প বিকাশে মাহরাম নদীতে উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে) নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।
সুত্র জানায়, তাহিরপুরে পর্যটন শিল্পের অবকাঠামো বিকাশের জন্য ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাহিরপুরে কৃষক সমাবেশে টাঙ্গুয়ার হাওর , ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের পতিত ভুমি, বারেকটিলা কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর কিছুদিন চিঠি চালাচালি হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে ঢিমেতালে চলছিল কাজটি। তবে তিন বছর আগে পর্যটন করপোরেশন টাঙ্গুয়ার হাওর ও বারেকটিলা (বড়গোপ টিলায়) ভূমি অধিগ্রহন সম্পন্ন করেছে। চলতি বছর জাদুকাঁটা নদীতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগের ৭৫০ মিটার দীর্ঘ তম দৃষ্টিনন্দন সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী ২ বছরের মধ্যেই সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সেতুটির একটি পিলারের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। আরো ১৪টি পিলারের কাজ পানি কমলে শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে মাহারাম নদীতে সেতু বা সড়ক না হলে দেশী -বিদেশী পর্যটক ও ভ্রমনপিপাসুদের সীমান্তের সৌন্দর্য্য অবলোকন কিংবা পর্যটন শিল্প বিকাশের পথে অন্তরায় বা বাধা হয়ে দাড়িয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে। জাদুকাঁটা নদী পুরো সীমান্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনতে ব্যর্থ হবে এমনটা মনে করেন স্থানীয় লোকজনসহ সংশ্লিষ্টরা ও বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রেেকৗশলী মো. ইকবাল আহমেদ সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর মাাহরাম নদীতে ৩০০ মিটার এলাকা জুড়ে উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন দিয়েছেন। এই প্রস্তাবনার আলোকে উড়াল সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করেছে সমীক্ষা দল।
জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরেই বছরই মাহারাম নদীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন লাভ করবে। এটি বাস্তবায়ন হলে জাদুকাঁটা নদীতে নির্মিতব্য শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মহাপ্রভু সেতুর সুফল ভোগ করতে পারবে পুরো সীমান্তবাসী। যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হলে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পও বিকাশ লাভ করবে এবং দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে নতুন মাত্রায় আকর্ষণ বাড়বে গোটা সুনামগঞ্জ অঞ্চলের প্রতি। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার হাওর ও ট্যাকেরঘাট খনি প্রকল্পের সৌন্দর্য্য ভোগান্তি ছাড়াই সড়কপথে যাতায়াতের মাধ্যমে সহজে উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উওর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ও বাদাঘাট উওর ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, বিন্নাকুলি এলাকায় জাদুকাঁটা নদীতে সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য আনন্দের। কিন্তু মাহারাম নদী পারাপাড়ের জন্য কোন সেতু বা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকলে পুরো সীমান্তের মানুষ সরাসরি যোগাযোগের আওতায় আসবেনা। যে কারণে ওই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশও আদৌ ঘটবেনা। তাই মাহারাম নদীতে উড়াল সড়ক নির্মাণ অবশ্যই জরুরি বলে মনে করছি আমরা।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারেম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন খাঁন বলেন, জেলা ১১ টি উপজেলার মধ্যে একমাত্র তাহিরপুর উপজেলাই দেশ বিদেশে পুরো জেলার পর্যটনের ব্র্যান্ডিং করে। বিন্নাকুলিতে যে সেতু হচ্ছে সেটা পুরো সীমান্তকে সরাসরি যোগাযোগের আওতায় আনতে পারবেনা।’
সুনামগঞ্জ জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার এম এনামুল কবীর ইমন বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ১১০ কিলোমটির সীমান্ত সড়ক সরাসরি যোগাযোগের আওতায় আনতে হলে মাহারাম নদীতে উড়াল সড়ক নির্মাণ করা ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নাই। তিনি মনে করেন, ওই নদীর ওপর দিয়ে এলিভেটেড সড়ক নির্মিত হলে যোগাযোগ সহজ হবে এবং দৃষ্টিনন্দন পর্যটন শিল্প’র বিকাশে অবকাঠামো হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়াও গোট বিশ্বের পর্যটকদের নতুন এক আকর্ষণ সৃষ্টি করবে। তিনি আরো বলেন, আমি চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই যত দ্রুত সম্ভব এ উড়াল সড়ক নির্মান কাজ উদ্ভোধনের পর নির্মাণ কাজ শুরু হোক। সুনামগঞ্জে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প হিসেবে মাহারাম নদীতে ৩০০ মিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। শীঘ্রই ওই এলাকার পর্যটন শিল্প বিকাশে ওই নদীর ওপর উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।