কলমাকান্দায় আমেনা’র পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন প্রশাসন

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি :
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় মানসিক ভারসাম্যহীন আমেনাদের পাশে দাঁড়ালেন উপজেলা প্রশাসন। করা হয়েছে আমেনা’র চিকিৎসার ব্যবস্থা। থাকার জন্য দেওয়া হচ্ছে জায়গাসহ একটি সরকারি ঘর। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে ভাইকে দেওয়া হচ্ছে দোকান ঘর। আর টাকার অভাবে যাতে বোন মনিকার পড়াশুনা বন্ধ না হয় এ বিষয়েও নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান আমেনা’র বাড়িতে গিয়ে এ সকল কিছুর ব্যবস্থা করেন।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কলমাকান্দা থানার ওসি আবুল কালাম পিপিএম, উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুমন পাল, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা একেএম মোছা, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভ‚ইয়া ও যুগান্তর প্রতিনিধি প্রান্ত সাহা বিভাস প্রমুখ।

ইউএনও আসাদুজ্জামান আমেনার বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন অসুস্থ আমেনার বোন মনিকা, ভাই আল আমিনসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে। তারা জানান, আমেনাদের তিন ভাই-বোনের মধ্যে আমেনা সবার বড়। ১৫ বছর আগে ছোট থাকতেই তাদের বাবা মো. জসিম উদ্দিন তাদেরকে নানার বাড়ি উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামে রেখে ঢাকায় চলে যান। পাঁচ বছর আগে তাদের মা মমতাজ বেগমও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মা মারা যাওয়ার দুই বছর পর আমেনা শারিরিকভাবে অসুস্থ পড়েন। চিকিৎসা করানোর জন্য নেওয়া হয় দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানের চিকিৎসক পরামর্শ দেন আমেনাকে নিয়ে ঢাকায় যেতে। কিন্তু পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে স্থানীয় কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় তার। কিছুদিন পর সে মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলে। বর্তমানে সে বিছানায় মৃত্যুযন্ত্রায় কাতরাচ্ছে।

মনিকা আক্তার বলেন, আমাদের এক ভাই দুই বোনের মধ্যে আমেনা সবার বড়। বর্তমানে সে বিছানায় মৃত্যুযন্ত্রায় কাতরাচ্ছে। এ অবস্থা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তাকে নিয়ে আমরা অনেক কষ্টে আছি। ভাই আল আমিন ইলেকট্রিকের কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসার খরচ চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারমধ্যে আবার বোনের চিকিৎসা ও আমার পড়াশুনার খরচ বহন করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এখন প্রশাসনের মাধ্যমে বোনের চিকিৎসা, থাকার জন্য বাড়ি, ভাইয়ের জন্য দোকান ঘর ও আমার পড়াশোনার ব্যবস্থা হওয়ায় খুবই ভালো লাগছে। এজন্যে আমরা সরকারের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।

ভাই আল আমিন বলেন, নিজের ঘর না থাকায় নানার বাড়িতে ভাঙা একটি ঘরে আমাদের থাকতে হচ্ছে। টাকার অভাবে অসুস্থ বোনের চিকিৎসা করাতে পারতাছিলাম না। এখন ইউএনও স্যারের মাধ্যমে বোনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের থাকার জন্য সরকারিভাবে একটি ঘরও দেওয়া হচ্ছে। বোন মনিকার পড়াশোনার খরচ নিয়েও এখন আর আমাদের চিন্তা করতে হবেনা। সরকারের এ সহযোগিতার কথা আমরা কখনই ভুলবোনা।

ওসি আবুল কালাম বলেন, আমেনা’র পরিবারটি খুবই হতদরিদ্র। উপজেলা প্রশানের এমন উদ্যোগে তিনি স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমেনার বোন মনিকা বড় হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হতে চান। শুনে খুবই ভালো লাগলো। দোয়া করি তার আশা যেন পুরন হয়। পরে তিনি মনিকার পড়াশোনাার জন্য তার হাতে আর্থিক সহযোগিতা তোলে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, আমেনার বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ স্যারের নির্দেশ মোতাবেক সেখানে গিয়ে আমেনা’র চিকিৎসার ব্যবস্থা, মনিকার পড়াশোনার খরচ, তাদের থাকার জন্য একটি সরকারি ঘর ও পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে একটি দোকান ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।