মোহনগঞ্জে মরমী সাধক উকিল মুন্সি স্মরণে ‘বাউল উৎসব’

বিশেষ প্রতিনিধি: মসজিদের ঈমাম এবং আসরে বাউল গান দুটাই করতেন তিনি। যারা তাঁর সাথে নামাজ পড়েছেন, তারাই আবার আসরে গিয়ে শুনেছেন তার কণ্ঠে গান! এই দুই কাজ এক সাথে চললেও কখনো পড়তে হয়নি রোষানলে! নেত্রকোণার খালিয়াজরী উপজেলার নূরপুর বোয়ালী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এই মরমী সাধক।

নাম উকিল মুন্সি। তাঁর পাারিবারিক নাম আব্দুল হক আকন্দ। ১৮৮৫ সালে ১১ জুন জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবার নাম গোলাম রসুল আকন্দ। মা উকিলেন্নেসা। শৈশবে ঘেটুগানে যোগ দেন তিনি। পরে গজল ও পরিণত বয়স থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাউল সাধনায় লিপ্ত ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি মসজিদের ইমামতি করতেন। ৯৩ বছর বয়সে ১৯৭৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মারা যান এই বাউল সাধক। গান ও ইমামতি একসঙ্গে করার বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও উকিল মুন্সি তা সম্ভব করেছিলেন। তার ছেলে আবদুল ছাত্তারও এই অঞ্চলের জনপ্রিয় বাউল ছিলেন।

‘পূবালী বাতাসে, আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, সোয়াচাঁন পাখি, প্রাণ বন্ধু আসিয়া’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা মরমী বাউল সাধক উকিল মুন্সি স্মরণে বাউল উৎসব ও নবনির্মিত স্মৃতিকেন্দ্র উদ্বোধন করা হয় রোববার বিকেলে। ওই দিন রাতভর হয় বাউল উৎসব। রবিবার (১২ মার্চ) বিকেলে জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার জৈনপুরে বাউল উৎসব উদযাপন পর্ষদ ও উকিল মুন্সি স্মৃতি পরিষদ এ উৎসবের আয়োজন করে।
প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারিত ০.৫৩ একর ভূমিতে নবনির্মিত স্মৃতিকেন্দ্র প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।

বাউল সাধক উকিল মুন্সি স্মৃতিকেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে বাউল উৎসব উপলক্ষে মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ আকুঞ্জির সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, সংসদ সদস্য হাবীবা রহমান খান শেফালী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অসিত কুমার সরকার সজল, সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা প্রমুখ।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, ‘উকিল মুন্সি একই সঙ্গে ইমামতি ও বাউল গান করেছেন। এটা আজকের সমাজ ব্যবস্থায় সম্ভব কিনা ভেবে দেখতে হবে। কিন্তু তিনি তা সম্ভব করেছিলেন। এবং সফলভাবেই তিনি তা করতে পেরেছিলেন। বলা যায় তিনি সমাজকে দেখিয়েছিলেন কিভাবে সাধনা করতে হয়, নিজেকে মুক্ত করতে হয়! হাওর-বাওর এলাকার সরল বাউলিয়ানা সাধনায় তিনি একজন সফল মানুষ বালা যায় তাকে। ’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।