ছাত্রলীগ থেকে মুজিব বাহিনী-বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী

বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির স্বাধীনতা অর্জন। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা বাঙালী জাতি হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক, স্বপ্ন-স্বাদ পূরণের গর্বিত অশংশীদার। দ্বি-খন্ডিত মানচিত্র নিয়ে দ্বি-জাতি তথ্যের ভিত্তিতে ধর্মীয় আবরণে সৃষ্ট পাকিস্থান নামক রাষ্ট্র যন্ত্রটি বাঙালী অধ্যুষিত পূর্ব বাংলাকে পূর্ব পাকিস্থান বানিয়ে ব্রিটিশ আমলের মত করে স্বায়তশাসন বিহীন প্রদেশের মর্যাদা দিয়ে শাসন ও শোষণ করতে শুরু করে। পাকিস্থান প্রতিষ্ঠায় বাঙালীদের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। বাঙালী ভাষাভাষি জনগোষ্ঠী ছিল সংখ্যা গরিষ্ঠ। অথচ অবাঙালী পাকিস্থানীদের ষড়যন্ত্রে বাঙালীরা ২য় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়। বাঙালীর মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তারা প্রথমে আঘাত হানে বাঙালীর ভাষা ও সংষ্কৃতির উপর। বাঙালী ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল যাতে বাঙালীর মেধা ও মননশক্তি ধ্বংস হয়ে যায়। বুদ্ধিবৃত্তি ্র সচেতনতার বিকাশ না ঘটে। পরবির্তিতে ৫২’র ভাষা আন্দোলনে চরম আত্ম ত্যাগের মধ্য দিয়ে সফল সমাপ্তি ঘটে।
দেশ ভাগের পর থেকে পাকিস্থান মুসলিম লীগের সামন্তযুগীয় রাজনীতির একচেটিয়া আধিপত্য, স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন শোষণের যাতাকল থেকে পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে পাকিস্থান কায়েমের আন্দোলনে অংশ নেয়া কতিপয় বাঙালী ছাত্র-যুবকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং পাকিস্থান সম্পর্কে তাদের মোহ ভাঙতে শুরু হয়। পাকিস্থান সৃষ্টির পর পাাকিস্থান মুসলিম লীগের উদারনৈতিক প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দকে পাশ কাটিয়ে কেন্দ্রীয় কাঠামো গঠন ও নব গঠিত পাকিস্থানের কেন্দ্রী সরকারে অবাঙালী মুসলিম লীগ নেতাদের একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার, সেই সাথে বঙ্গীয় মুসলিমলীগ প্রাদেশিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সহ কতিপয় মুসলিমলীগ নেতৃবকৃন্দকে পাশ কাটিয়ে মি. জিন্নাহর অনুগত খাজা নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিমলীগ এর একাংশ কলকাতা ছেড়ে তরিগরি করে ঢাকায় এসে পূর্ব পাকিস্থান প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা গঠন করে। সেই সময়ে মুসলিমলীগের অবাঙালী নেতৃবৃন্দের অনৈতিক ও অসংহতি কার্যকলাপের দরুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিমলীগের নেতৃবৃন্দের কাছে নব্য পাকিস্থানী শাসকদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে। এ নিয়ে পাকিস্থান কায়েমের আন্দোলনে অংশ নেওয়া বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্রলীগের প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দ নবগঠিত পাকিস্থান রাষ্ট্রে অবাঙালী মুসলিমলীগ নেতাদের একচেটিয়া আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ আজিজুর রহমানের সাথে শেখ মুজিবুুর রহমানের দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে কলকাতায় অবস্থানকারী মুসলিম রাজনৈতক ও ছাত্র যুব নেতারা ঢাকায় এসে স্থানীয় ছাত্রনেতা কামরুদ্দিন আহমেদ, শামছুল হক, তাজউদ্দিন আহমেদ, মোঃ তোহা ও আলী  আহাদ প্রমুখদের নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান নতুন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক আন্দোলন দাঁড়া করানোর প্রশ্নে আলোচনা শুরু করে। তাদের আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৮ সালে ৪ঠা জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগ নামে একটি জাতীয়তাবাদী প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা হয়। পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগ নামের এই সংগঠনটি পূর্বপাকিস্থানের ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে তৎকালীন ছাত্র ও যুব নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে নবগঠিত পাকিস্থানের ক্ষমতাসীন মুসলিমলীগের সামন্তযুগীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন-শোষণের ছেদ ঘটিয়ে অবিভক্ত বাংলা মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাষানী, শামছুল হক, শেখ মুজিবুর রহমানসহ বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিমলীগ থেকে বেরিয়ে আসা কতিপয় প্রগতিশীল বঙ্গীয় মুসলিমলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিমলীগ নামে নতুন একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। আওয়ামী মুসলিমলীগ এর সহযোগী সংগঠন হিসাবে পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগ ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলনের নামে গড়ে উঠা গণ আান্দোলন পাকিস্থান ঔপনিবেশিক শাসন- শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালী অধ্যুষিত পূর্ব বাংলার বাঙালী জনগোষ্ঠির স্বদেশিকতা ও স্বজাত্যবোধ জাগ্রত করে বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করে। ৫৪’র নির্বাচনে মুসলিমলীগ বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গঠনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৫৮ সালে আউয়ূব খানের মার্শাল ‘ল’ বিরোধী গোপন ছাত্র আন্দোলন, ৬২’র শরীফ শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবীতে দেশব্যাপী ছাত্র সমাজের শিক্ষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এর-ই পথ ধরে ৬৬’র ৬দফা আন্দোলন, ৬৯’র সর্বদলীয় ছাত্র সমাজের ৬দফা ও ১১ দফা আন্দোলনের মাধ্যমে গণ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পাকিস্থানের স্বৈরশাসক আইয়ূব খানের পতন ঘটিয়ে আগড়তলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে শেখ মুজিবসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের মুক্ত করে।

৬৯’র ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে আইয়ূব খানের পতন, সেই সাথে আরেক সেনা শাসক ইয়াহিয়া খানের আগমন ঘটে। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ছাত্র গণআন্দোলনের মুখে ৭০’র জাতীয় নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ৬০ দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এই বাংলাদেশে যত ছাত্র গণআন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছে তার প্রতিটিতেই পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র সমাজের ঐতিহাসিক ভূমিকা বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ৬০ দশকের ছাত্র রাজনীতি ছিল ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে আসে ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন সহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন পাকিস্থানের মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করেছিল। জাতীয়তাবাদের ধারক বাহক ছাত্রলীগ ও শ্রেণিসংগ্রামের পতাকাবাহী ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনের মহামিলন সত্যি এক আদর্শিক জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক চেতনার অকল্পনীয় দৃষ্টান্ত। এই আদর্শিক চেতনায় পাকিস্থানে বাঙালী অধ্যুষিত পূর্ব বাংলা জনগণকে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। বাংলাদেশের স্বাধথীনতা আন্দোলনের উদ্বুদ্ধ করার পিছনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিউক্লিয়ারস নামে একটি ছায়া সংগঠনের অবদানের ইতিহাস অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সহ ছাত্র গণআন্দোলন যখন একটা পর্যায়ে চলছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে আন্দোলনরত ছাত্রলীগের একটি অংশ সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরিফ আহমেদ সহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার সমন্বয়ে একটি গোপন সাংগঠনিক প্রক্রিয়া সূচনা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের ভেতর গোপন একটি নিউক্লিয়ারসের কাজ ধীর গতিতে চলে আসছিল ১৯৬২ সাল থেকে। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের পর পরই নিউক্লিয়ারসের কার্যক্রম জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে গোপন যোগাযোগের মাধ্যমে দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। ৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ বাংলার মানুষের ঐতিহাসিক সমর্থন ও নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। ৬দফার প্রতি বাংলার জনগণের ম্যান্ডেট হিসাবে গ্রহণ করার সুযোগ নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগের নিউক্লিয়ারস গ্রুপের বিল্পবী সদস্যগণ মাঠ পর্যায়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং ডেডিকেটেড কর্মী বাহিনী গড়ে তোলার কর্মসূচী হাতে নেয়। সেই সাথে বাংলাদেশের লিবারেশন ফোর্স অর্থ্যাৎ বি.এল.এফ নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলে।

৬০ এর দশকে ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা ছাত্রলীগের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনীতি ছিল প্রধানত আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসনের দাবীকে কেন্দ্র করে। যার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছিল ৬দফা দাবীর মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ৬দফা আন্দোলন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের বাঙালী জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে ছাত্রলীগের গোপন সংগঠন নিউক্লিয়ারস কর্তৃক গঠিত ছাত্রলীগের জঙ্গীকর্মী বাহিনী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ৭১ এর ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খানের জাতীয় পরিষদ স্থগিত ঘোষণা শুনার সাথে সাথেই ১লা মার্চ থেকেই পূর্ব বাংলা দাবানলের মত ছাত্র জনতার যে জঙ্গী

মিছিল গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মিছিলের স্লোগান ছিল- “সংহতিতে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।” কৃষক-শ্রমিক অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর; জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু।” ২রা মার্চ ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় চত্বরে ছাত্র গণজমায়েতে স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ৩রা মার্চ পল্টনে ছাত্র গণসমাবেশে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ইশতিহার পাঠ ও জয় বাংলা বাহিনীর সশস্ত্র কুঁচকাওয়াজ। পরবর্তীতে ২৩ শে মার্চ পাকিস্থান দিবসের পরিবর্তে বাংলাদেশ দিবস ও প্রতিরোধ দিবস হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এইসব বীরোচিত কর্মকান্ডের নেপথ্যে ছিল ছাত্রলীগের ছায়া সংগঠন নিউক্লিয়ারসের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা। ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতা শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আসম আব্দুর রব, আব্দুল কদ্দুছ মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ এর যৌথ নেতৃত্বে বা কামান্ডে নির্বাচন পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। ২৫ শে মার্চ ক্রেকডাউনের পর ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতা শেখ ফজলুল হক মণি সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ এই চার যুবনেতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধীর সহযোগিতায় ভারতীয় জেনারেল সুজন সিং উভান সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স ‘মুজিব বাহিনী’ গঠনের উদ্যোগ নেয়। শুধুমাত্র ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠন করা হয় মুজিব বাহিনী। ভারতের দেরাদুন ও আসামের হাফলং থেকে বিশেষ গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে পাঠানো হত মুজিব বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের। এই বিশেষ বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছিল জেনারেন সুজন সিং উভান এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার্স ফোর্স (এস .এফ.এফ) এর একদল প্রশিক্ষকের অধীন মুজিব বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। প্রায় ১০ হাজার প্রশিক্ষণার্থী বিশেষ গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রত্যেক সদস্যকে আরো ১০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রায় ১ লক্ষ সদস্য নিয়ে গেরিলা যুদ্ধে এক বিশাল বাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছিল। গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষণার্থী সদস্যরা (গ্রুপ কমান্ডার) দেশের ভেতর ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের খুঁজে বের করা বাংলাদেশের ভেতর ও ভারতের বেইস ক্যাম্পগুলো চালানো, প্রশিক্ষণার্থীদের বেইস ক্যাম্পে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা প্রদান সহ বিভিন্ন ধরণের কর্মকান্ড চালানো হত। গেরিলা যুদ্ধের কৌশল ও অস্ত্র চালানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক মতাদর্শের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। প্রতিটি বেইস ক্যাম্প সহ ভারতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রাজনৈতিক মতাদর্শে ক্লাশ পরিচালনার জন্য ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হাসানুল হক ইনু, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, আফম মাহমুদুল হক, কাজী আরিফ আহমেদ ও মাসুদ আহমেদ রুমী কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাত্ত্বিক ছাত্র নেতা হিসাবে সে সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে তাদের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ছিল।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার্স ফোর্স ‘এস.এফ.এফ’ সার্বিক ও সরাসরি কমান্ডে গঠিত মুজিব বাহিনী বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত করার পেছনে ১৯৬৯ সালে লন্ডন হামস্টেড হিতের বাড়িতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্ধিরা গান্ধীর সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাকপ্রস্তুতির বস্তুনিষ্ঠ কথোপকথনের ঘটনা এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্থানীরা ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। ঠিক ৫৪ সালের মত অবস্থা সৃষ্টি করবে। তাই তিনি সেদিন ইন্ধিরা গান্ধীর সাক্ষাতে বলেছিলেন ওরা আমাদেরকে ক্ষমতায় বসতে দেবে না। কিন্তু এবার আমি তা হতে দেব না। আমার অনুসারী ছেলেদেরকে তোমাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে আমার অনুসারী ছেলেরা যুদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীন করতে পারে। এখানে রয়েছে মুজিব বাহিনী গঠনের মূলসূত্র।

এই সূত্র ধরেই ২৫শে মার্চ কালরাত্রে মুজিব আদর্শের অনুসারী শেখ ফজলুলহক মণি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুল রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ এি চার যুব নেতা মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মুজিব আদর্শের অনুসারী ছাত্রলীগের ছাত্র যুবকদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক সশস্ত্র বাহিনী ((Political force) গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে ভারতে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধীর সঙ্গে সাাক্ষাৎ করে এ ধরণের প্রস্তাব রাখেন। ইন্ধিরা গান্ধীর নির্দেশেই মুজিব বাহিনী গঠন প্রক্রিয়া ভারতীয় ‘র’ এর মাধ্যমে শুরু হয়। এখানে এ.কে খন্দকারের লেখা থেকে জানা যায়“ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি কোন মাধ্যম দিয়ে আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর একটি যোগাযোগ হয়েছিল বলেই মনে হয়। এ কথা এ জন্যই বলছি যে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হওয়া ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগেই মুজিব বাহিনী সদস্যরা প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র পেতে শুরু করে।” মুজিব বাহিনী প্রশিক্ষণার্থী বাচাই করার জন্য ভারতের ৪টি ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এগুলোর অবস্থান ছিল দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জন্য ব্যারাকপুর, কলকাতা আঞ্চলিক অধিনায়ক ছিলেন তোফায়েল আহমেদ, তার সহকারি ছিলেন নূরে আলম জিকু। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ট্রানজিট ক্যাম্প ছিল জলপাইগুড়ির পাঙ্গা নামক স্থানে; এই অঞ্চলের অধিনায়ক ছিলেন সিরাজুল আলম খান তার সহকারি ছিলেন মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মণি)। মধ্যাঞ্চল ক্যাম্প ছিল মেঘালয়ের তুরা সংলগ্ন খেরা পাড়া নামক স্থানে। এর অধিনায়ক ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক তার সহকারি ছিলেন সৈয়দ আহমেদ। পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক ছিলন শেখ ফজলুল হক মণি ক্যাম্প ছিল আগড়তলা সহকারি ছিলেন আসম আব্দুর রব। কাজী আরিফ আহমদ ছিলেন বি.এল.এফ এর গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান। বি.এল.এফ এর পক্ষ থেকে প্রবাসী সরকারে সঙ্গে যোগাযোগের কাজটি করতেন শাহজাহান সিরাজ ও শেখ শহীদুল ইসলাম। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাদরে সকলেই বি.এল.এফ এর কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশেরে ভেতরে কাজ করতেন। অক্টোবরের বি.এল.এফ এর বিশেষ গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধি ৮০জন ছাত্র নেতা যারা ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সম্পাদক। এসব নেতাদের নিয়ে ভারতে দেরাদুনে কালশীতে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই কালশী ছিল ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের একটি অস্থায়ী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। বি.এল.এফ নেতারা জানতেন শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে তারা একটি বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। জয় লাভের পর বঙ্গবন্ধু যদি ফিরে না আসেন (যদিও এটা কারো কাম্য ছিল না) তবুও সেরকম একটা আশংকা থেকে ঐ সম্মেলনে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সামরিক বাহিনী ও আমলাতন্ত্র থেকে সম্ভাব্য যে আক্রমণগুলো আসতে পারে তা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যত রাজনীতি ও রণ কৌশল নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে সকল নেতৃবৃন্দ রাজিৈনতক ও সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ফিরে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করবে এবং জনযুদ্ধের মাধ্যমে সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতিকে এগিয়ে নেবে। এ ছাড়া মুক্তি সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিপেক্ষতা বাস্তবায়নের লড়াই যে দর্শন কে কেন্দ্র করে তাকে মুজিবের নামে পরিচিতি দিয়ে এ দর্শনকে মুজিববাদ হিসাবে প্রচার করা হবে। এছাড়া বি.এল.এফ এর নাম বদল করে মুজিব বাহিনী রাখার সিদ্ধান্ত ঐ সম্মেলনেই নেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের মুজিব বাহিনীর মূল রণকৌশল ছিল প্রথাগত যুদ্ধে ((Convetional War) না জরিয়ে র্দীঘ মেয়াদী যুদ্ধের অনুকূলে জনযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করে সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করা। এ জন্যই মুজিব অনুসারী ছাত্র যুবকদের ভারতীয় সেনা বাহিনী বিশেষ করে গেরিলা যুদ্ধের বিশেষজ্ঞ যারা ছিলেন তারা প্রশিক্ষণরত সদস্যদের উদ্দেশ্য একটি বিষয় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতেন। বিষয়টি হলো, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা যারা প্রশিক্ষক হিসাবে ক্যাম্পগুলোতে প্রশিক্ষণ দিতেন তারা প্রায়ই বলতেন বাংলাদেশ মুক্তির লড়াইয়ে গেরিলা যুদ্ধের রণনীতি বা রণকৌশল কি হবে ? বঙ্গবন্ধুর তার ইঙ্গিত দিয়ে

রেখেছেন।“প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রর মোকাবেলা করো এবং ভাতে মারা ও পানিতে মারার ঘোষণা” বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার এই বিষয়বস্তুকে ভারতীয় গেরিলা যুদ্ধের সামরিক বিশেষজ্ঞগণ এনালাইসিস করে মুক্তিযুদ্ধের মুজিব বাহিনীর রণকৌশল নির্ধারণ করেন। যার ফলে যারা মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সদস্য ছিল তারা বাংলাদেশের অভন্তরে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে এলাকার মুজিব অনুসারী ছাত্র-যুবকদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রামে গ্রামে গেরিলা ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এছাড়া এলাকার মুক্তিকামী মানুষকে মুজিব আর্দশ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের মাধ্যমে সৎ, নিষ্ঠাবান, দেশ প্রেমিক, জনযোদ্ধা হিসাবে সংগঠিত করে এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে জনযুদ্ধের মাধ্যমে সার্বিক মুক্তির লড়াইয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এছাড়া শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য রাখা, স্থানীয় দালাল ও শত্রুকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, মুক্ত অঞ্চল গড়ে তোলা, মুক্ত অঞ্চলে প্রাশাসনিক ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়া, মেডিক্যাল টিম গঠন করা, শত্রু অবস্থানের উপর চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে নাস্তানাবুদ করা ও তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিনষ্ট করে শত্রুর রসদ সরবরাহে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা, সেই সাথে অব্যাহত হামলা চালিয়ে হানাদার বাহিনীকে ক্যাস্পের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রেখে খাদ্য, পানি, ঔষধসহ সামরিক সরঞ্জামাদি সাপ্লাই বন্ধ করে দেওয়াসহ নানামুখী আক্রমণের মাধ্যমে শত্রুসেনাকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা, এই রণকৌশলকে সামনে রেখেই মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জনগণের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে জনযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে মুক্ত করা ও দেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়াই ছিলো বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত মুজিব বাহিনী রণকৌশল।

শুরু থেকেই মুজিব বাহিনীকে নিয়ে বহু বির্তকের সৃষ্টি হয়েছিল। তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্ব গঠিত অস্থায়ী সরকারের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা দ্বন্দের ফলে হয়তো মুজিব বাহিনী গঠনে অনুপ্রাণিত করেছিল মুজিব অনুসারীদের। এমন একটি ধারনা মুজিবনগর অস্থায়ী সরকার ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দর মাঝে বিরাজ করেছিল। তবে মুজিব বাহিনী ছিলো অস্থায়ী সরকার ও বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনী থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রনের বাহিরে। মুজিব বাহিনী সৃষ্টি হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’- এর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে। মুজিব বাহিনী গঠন প্রক্রিয়াও ছিলো আলাদা। এ বাহিনীর সমম্নয়কারী ও প্রশিক্ষক ছিলেন ‘র’- এর কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের প্রধান জেনারেল সুজন সিং উভান। তার নেতৃত্ব ও প্রত্যক্ষ সহায়তা মুজিব বাহিনী প্রশিক্ষিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যদের ভারতে প্রধান সেনাপতি জেনারেল মানেকশাহ নাম অনুসারে ‘স্যাম’স বয়; নামে’ উল্লেখ করা হতো। জেনারেল উভানের বর্ণনায় জানা যায় ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল মানেকশাহ নাকি বাংলাদেশে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদকে বলেছিলেন মুজিব বাহিনীকে তিনি গঠন করেছেন, তার বাহিনী হয়ে বিশেষ বিশেষ অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য।ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে মুজিব বাহিনী গঠন ও প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন। এলিট র্ফোস হিসাবে গঠিত এই বাহিনীকে প্রশিক্ষণ শেষে গোপনীয়তার সঙ্গে অত্যাধুনিক অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত করে অভিযানে পাঠানো হতো।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধা ও জনযোদ্ধাদের আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পশ্চিম পাকিস্থান বেসামাল সামরিক সরকার বিনা উস্কানিতে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দেয়। ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্থান ভারত আক্রমণ করে। ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্থানের আক্রমণ প্রতিহত করে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ড গঠন করে পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্থান হানাদার বাহিনী ভারত-বাংলাদেশ মিত্র বাহিনীর নিকট ৯৩ হাজার সৈন্যসহ আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। মিত্রবাহিনীর আক্রমণের মুখে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থানরত মুজিববাহিনী যোদ্ধারা দীর্ঘ মেয়াদী জনযুদ্ধের রণ কৌশল বন্ধ রেখে মিত্র বাহিনীর নেতৃত্বে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পরপরই মুজিববাহিনী যোদ্ধারা সদ্য

স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তির দাবীতে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু বিহীন এ স্বাধীনতা অর্থহীন। তাই মুজিব সেনারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি স্লোগান উঠায় ‘শেখ মুজিবকে ছাড়তে হবে, নইলে বিশ্বে আগুন জ্বলবে’ এ ধরণের শপথে বলীয়মান মুজিব সেনারা মিত্র বাহিনীর অস্ত্র সমর্পনের নির্দেশ অমান্য করে তাদের আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। ১০ ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু পাকিস্থানের কারাগার থেকেস মুক্তি পেয়ে বীর বেশে লন্ডন ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং মুজিব বাহিনীর চার অধিনায়কের সাথে আলোচনাক্রমে ৩১ শে জানুয়ারী মুজিব বাহিনীর অস্ত্র সমর্পনের তারিখ নির্ধারণ করেন। ৩১ শে জানুয়ারী, ১৯৭২ সালে ঢাকা স্টেডিয়াম মাঠে মুজিব বাহিনীর অস্ত্র সমর্পন কালে বঙ্গবন্ধু আবেগ তাড়িত কন্ঠে তার ভাষণে মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর ভূঁয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন- মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা গঠিত সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন মুজিব বাহিনীর সকল সদস্যদের প্রতি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ষাট দশক থেকে তৎকালীন উপনিবেসিক পাকিস্থানের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত থেকে রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় সংগঠিত করে বঙ্গবন্ধুর আর্দশ আনুসারী হিসাবে আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতার দ্বার পৌঁছে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে রূপান্তরিত করে স্বাধীনতার সোনালী সূর্যটা কে চিনিয়ে এনেছে। লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।