মদন পৌরসড়কের পাশেই ময়লার ভাগাড়

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণার মদন পৌরসভার বয়স ২২ বছর। কিন্তু পৌরবাসীর শহুরে জীবনে তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। চারদিকে গ্রামীণ আবহ। বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়। সড়কবাতি, নালা ব্যবস্থাপনা একেবারেই অপ্রতুল। বেশির ভাগ রাস্তা-ঘাট ভাঙ্গা ও কাঁচা। আর্সেনিকের ঝুঁকি থাকলেও নলকূপের পানিই ভরসা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি কেবল নামেই পৌরসভা। নিয়মিত কর দিয়েও মিলছে না নাগরিক সেবা।
মদন পৌরসভার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ১ অক্টোবর এই পৌরসভার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাইয়ে ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা থেকে ‘খ’ শ্রেনিতে উন্নীত হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পৌর এলাকার জনসংখ্যা ১৭ হাজার ৩৮৮ জন। তবে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। আয়তন ১০ দশমিক ১১ বর্গকিলোমিটার।

অবশ্য পৌরসভা আইনের (২০০৯) শর্ত মানতে হলে মদনকে পৌরসভা বা শহর বলাও কঠিন। ওই আইনে আছে, ‘পৌর এলাকার জনসংখ্যা ৫০ হাজারের কম হবে না, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে দেড় হাজারের কম নয়। ৩৩ শতাংশ ভূমি অকৃষি প্রকৃতির, তিন-চতুর্থাংশ ব্যক্তি অকৃষি পেশায় নিয়োজিত থাকতে হবে।’ কিন্তু মদন পৌরসভার মানুষ কৃষিনির্ভরশীল। মোট ভূমির অর্ধেক কৃষিজমি। ‘খ’ শ্রেনির পৌরসভার জনবল ৯৬ জন থাকার কথা থাকলেও মদন পৌরসভায় সব মিলিয়ে জনবল রয়েছে ১৫ জন।

রবিবার (১৫ জানুয়ারি) সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তিনতলা পৌর ভবনের সামনে ছোট সড়ক। তারপর মগড়া নদী। ভবনের এক পাশে জলাশয়, আরেক পাশে কৃষিজমি। সামনে ব্যবসায়ীদের কাঠসহ নানান জিনিসপত্র পড়ে আছে। নেই সেবাগ্রহীতাদের বা কর্মকর্তাদের ভীড়। ভবন থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে সরকারি খাদ্যগুদাম। ওই খাদ্যগুদামের সামনের প্রধান সড়কের পাশে বিশাল বড় আকারের ময়লার ভাগাড়। প্রধান সড়কের পাশে এমন ময়লার ভাগাড়ের র্দূগন্ধে মানুষ নাকে মুখে কাপড় চেপে যাতায়াত করছেন। এ ছাড়াও মদন প্রেসক্লাব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের পাশে ময়লা স্তুপ হয়ে পড়ে আছে। মদন শহীদ স্মরণিকা বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ময়লা আর্বজনায় ভরপুর। পৌরসভার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরা যেখানে খুশি সেখানেই ময়লা ফেলছে। বর্জ্য সরবরাহের জন্য একটি ট্রাক থাকলেও তা কাজে আসে না।

তাছাড়া পৌরশহরে ইজিবাইক, অটোরিকশা, সিএনজির জন্য কোন নির্ধারিত স্ট্যান্ড নেই। মোড়ে মোড়ে রাস্তার ওপর স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। স্ট্যান্ড না থাকলেও পৌরসভার রিসিট দিয়ে আবার এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় করতেও দেখা গেছে। রাস্তার ওপর গাড়ি রাখায় সারাক্ষণেই পৌরসদরে যানযট লেগেই থাকে। এসব ভোগান্তির মধ্যে দিয়েই চলছে পৌরবাসীর জন-জীবন।
পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোহাগ আহমেদ জানান, পৌরসভার পক্ষ থেকে ময়লা রাখার কোন নির্ধারিত জায়গা না দেওয়ায় আমাদের বাসার সামনের খেলার মাঠ এখন ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। দূর্গন্ধের কারণে নিজ বাসায় বসবাস করা এখন কঠিন হয়েছে। এসব দেখার কেউ নেই।

পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বপন, আল আমিন, সাইদুরসহ কয়েকজন জানান, মদন পৌরসভা আর ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। বেশী খাজনা দিয়েও সেবা পেতে ভোগান্তির শেষ নেই। ভোটের সময় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা উন্নয়নের জোয়ার আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কখনো বাস্তবায়ন হয় না।

পৌরবাসীর দূর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে মেয়র সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, ‘পৌরসভার কয়েকটি রাস্তা, ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে। বেশ কয়েকটার কাজ চলমান আছে। ময়লা রাখার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করতে না পাড়ায় ডাস্টবিন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পৌরসভায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে একটি প্রকল্পের বরাদ্দের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পৌরবাসীর জীবন-মান উন্নয়ন ও যথাযথ সেবা দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।