
বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায় বিজ্ঞান মেলা এবং বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অব্যবস্থাপনা অভিযোগ ওঠেছে। দায়সারা আয়োজনের কারণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা কোনো পুরস্কার না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছে হয়েছে। এতে করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪৪তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরের সহযোগিতায় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন দু‘দিনব্যাপী বিজ্ঞান মেলা এবং বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে। গত মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে পরিষদ প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধন করেন উদ্যাপন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স। এতে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৪টি ও কলেজ পর্যায়ের ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। কিন্তু মেলার প্রথম দিন থেকেই কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপার কারণে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উৎযাপন কমিটি গঠনের কথা থাকলেও কমিটিতে কাদের রাখা হয়েছে সে সম্পর্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাউকে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি মেলা উদযাপন সংক্রান্ত প্রস্তুুতি সভাও করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তারপরও প্রথম দিন সকাল থেকেই উৎসাহ ও উদ্দিপনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা মেলায় আসলেও মেলার আয়োজন ছিল একেবারেই দায়সারা। বিকেলে চারটা পর্যন্ত তারা মেলায় অবস্থান করলেও কর্তৃপক্ষের কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগ একাধিক শিক্ষকশিক্ষার্থীর। মেলাতে বির্তক, বিজ্ঞান ভিত্তিক উপস্থিত বক্তৃতা, সিম্পোজিয়াম আয়োজনের নির্দেশনা থাকলেও তা করা হয়নি।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের তৈরি প্রজেক্ট সংরক্ষণের জন্য মেলায় কোনো ব্যবস্থা বা কোনো নিরাপত্তা না থাকায় বিপাকে পড়ে তারা। বাধ্য হয়ে তারা তাদের তৈরি প্রজেক্ট ঘুচিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। বেশকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপন সংক্রান্ত নিয়মাবলী অনুযায়ী মেলার দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। শিক্ষার্থী প্রস্তুতি নিয়ে আসলেও তারা অংশ নিতে পারেনি। মেলায় অংশগ্রহণকারীদের জানানো হয় দ্বিতীয় দিন দুপুর দুইটায় ফলাফল ঘোষণা ও বিজয়ীসহ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। কিন্তু বিকেলে তিনটা পর্যন্ত মেলাস্থলে কর্তৃপক্ষের কাউকে না পেয়ে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা পুরস্কার না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পরে বিকেল চারটায় মাত্র দু‘টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রেখে দায়সারাভাবে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়। এছাড়া মেলায় অংশ নিতে প্রজেক্ট তৈরি, যাতায়াত ও শিক্ষার্থীদের খাবারসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা কয়েকদিনের পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে প্রজেক্ট তৈরি করে মেলায় আসলেও তাদের যথাযথ মূলায়ন করা হয়নি। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে এ আয়োজন নিয়ে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি পূর্বধলা উপজেলা শাখার সভাপতি ও আগিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদরুজ্জামান বলেন, ‘মেলার আয়োজনটি একেবারেই দায়সারা। ফলে পুরস্কার তো দূরের কথা শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে মেলা থেকে খালি হাতে ফিরেছে।‘
পূর্বধলা জগৎমণি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, মেলা সম্পর্কে আমাদেরকে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তারপরও একজন শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে পাঠানো হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি ও অব্যবস্থাপনার ফলে মেলাটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।‘
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আলম তালুকদার বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানটি একটু সমস্যা হয়েছিল। তবে মেলা সফল হয়েছে।
ইউএনও শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, দাপ্তরিক কাজ থাকায় আমি দ্বিতীয় দিন নেত্রকোনায় ছিলাম। তাই আসতে একটু দেরি হয়েছিল। আর অংশগ্রহণকারীরা সময় শেষ হওয়ার আগেই চলে গেছে। যা উচিত হয়নি। তবে বিচারকরা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের নির্বাচন করে তাদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। অন্য সবাইকে শান্তনা পুরস্কার দেওয়া হবে।’