বিদেশে উচ্চ শিক্ষা শেষে কৃষি কাজে সফলতার মুখ দেখলেন আজাদ

স্টাফ রির্পোটার: নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলার সদর ইউনিয়নের গড়মা গ্রামের আজাদ মিয়া। বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে গ্রামের বাড়িতে এসে কৃষি কাজে যোগ দিয়েছেন। সাথে যুক্ত করেছেন তার ছোট ভাই সাদ ইবনে সাইদকেও। বিদেশি জাতের সবজি চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন তারা। সবজি চাষ করে বদলে দিয়েছেন পুরো গ্রামের চেহারা।

প্রথমে নিজেদের দেড় একর জমিতে বিদেশী জাতের স্ট্রবেরি, ভিয়েতনামী লাল কাঠাল, কাজু বাদামসহ প্রায় অর্ধশতাধিক জাতের নানা রকমের ফলের চাষ করেছেন। এছাড়া দেশি জাতের টমেটো, শিম, বরবটি, করলা, ফুল কপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, পুইশাখ, লালশাখ, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গা, বেগুনসহ নানা প্রকারের সবজি। সবজি ফার্মের ভেতর নিজে নিজেই তৈরি করেছেন একটি গ্রীণ হাউজ। এতে বিদেশী অনেক ধরণের ফল চাষ করা হচ্ছে।

তাদের দেখে উদ্ধুদ্ধ হয়ে ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার জড়িত হয়েছেন কৃষি কাজে। তবে এই গ্রামে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে নিজস্ব পতিত জমিতে দেশীয় পদ্ধতিতে মৌসুমী টমেটো, শিম, বরবটি, করলা, ফুল কপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, পুইশাখ, লালশাখ, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গা, বেগুনসহ নানা প্রকার সবজি চাষ করছেন স্থানীয় চাষিরা।

এই গ্রামের চাষিরা প্রথমে ধান আবাদের ওপর নির্ভর ছিল। ঝড় বৃষ্টি বন্যাসহ নানা প্রতিকুলতায় প্রতি বছর ধান চাষে লোকসান হওয়ায় এ চাষ ছেড়ে সবাই শাক সবজিতে মনোযোগী হন কৃষকরা। শাকসবজি চাষে কম শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বি। বর্তমানে এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে। এবছর সবজির ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষকরাও। এখন গড়মা গ্রামে সবজি চাষ করে না এমন পরিবার খোঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। ক্ষুদ্র পরিসরে করা হলেও এখন বছর জুড়ে চাষ করে পারিবারিক পুষ্টিচাহিদা মিটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয় করছেন এখানকার কৃষকরা।

বারহাট্টা উপজেলা শহরে বারহাট্টা সরকারি কলেজের পাশেই গড়মা গ্রামে খোরাক এগ্রোফার্ম। এ গ্রামটি ছোট হলেও বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে সবজি চাষ। এখন শীতের সবজি ভরা মৌসুম হওয়ায় মাঠ জুড়ে শুধু সবজি আর সবজি। এ গ্রামের কৃষক দুই ভাই আজাদ মিয়া ও সাদ ইবনে হুসাইন বিদেশি সবজি চাষে যেন এক নিরব বিল্পব ঘটিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই কৃষক আজাদ মিয়া ও সাদ ইবনে হুসাইন সবজি পরিচর্যাসহ বাজার জাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের পাশাপাশি নারীরাও বসে নেই ঘরে। তারাও সবজির পরিচর্যাসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছেন।
এসব বিদেশি সবজি চাষ গোটা গ্রামটিকে সাজিয়েছে যেন সবুজের ছাদরে। তাছাড়া এই গ্রামের হতদরিদ্র অনেক লোকজন তাদের জমিতে সবজির চাষ করে তাদের বেকারত্ব দূর করেছেন।

জানতে চাইলে মো. আজাদ মিয়া বলেন, এ মৌসুমে ৩০ শতক জায়গায় বিদেশি সবজি সহ দেশীয় পদ্ধতিতে তিনি শীত কালীন ফুলকপি, মুলা, লাল শাক পুঁইশাকসহ নানা জাতের সবজির আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবজি গাছের অবস্থা এখন পর্যন্ত খুব ভালো রয়েছে। অন্যদিকে মুলা, লাল শাক পুঁইশাক স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খরচ বাদে আশা করছি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ওপর আয় হবে। ওই জমিতে যদি ধান আবাদ করা হতো তাহলে ১৫ হাজার টাকার বেশি ধান পাওয়া যেতো না। তাই ধান ছেড়ে সবজি আবাদ করছি।

সবজি চাষি সাদ ইবনে হুসাইন বলেন, সারা বছরই তিনি মৌসুম অনুযায়ী সবজির চাষ করছেন। এবার তিনি ৩০ শতক জায়গায় বিদেশি সবজি সহ শীতকালীন ফুলকপি, মুলা, লালশাক পুইশাক বেগুনসহ নানা জাতের সবজির আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে মুলা, লালশাক বিক্রি শুরু করেছেন। আগাম সবজি চাষ করায় অন্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে শাকসবজি চাষ করে এ বছর যাবতীয় খরচ বাদে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, এই প্রথম বারহাট্টায় খোরাক এগ্রোফার্মের মালিক আজাদ মিয়া ও সাদ ইবনে হুসাইন দুই ভাই মিলে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় বিদেশি জাতের সবজি চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন তারা, কৃষি অফিস তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য পাশে আছি এবং থাকবো। গড়মা গ্রাম সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। দীর্ঘ বছর ধরে স্থানীয় কৃষকরা নানা জাতের শাকসবজি চাষ করছেন।

তিনি আরো বলেন উপজেলা কৃষি অধিদফতরের মাধ্যমে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ, সার, বীজ, কীটনাশকসহ বিভিন্ন সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অচিরেই আরো নতুন করে কৃষকরা বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধার আওতায় আসবে। আবহাওয়া অনুকূল এবং বাজার দর ভালো থাকলে শীতকালীন সবজি আবাদে লাভবান হবেন বারহাট্টা উপজেলার কৃষকরা। তবে ফলন ভাল করতে সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।