খালিয়াজুরি আ’লীগের কমিটি নিয়ে উত্তেজনা: রুদ্ধধার বৈঠকের পর সমঝোতা

বিশেষ প্রতিনিধি: জেলার খালিয়াজুরিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলা সদরে উত্তেজনা চলছিল। উপজেলার সদরে পদ বঞ্চিতদের দেশীয় অস্ত্র সহ মহড়া দিতে দেখা গেছে।

সকাল থেকে শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের টহল ছিল। পরে সমস্যা সমাধানে ইউএনও এবং পুলিশ কর্তাদের সাথে দুই পক্ষের নেতাদের সাথে চার ঘণ্টার রুদ্ধধার বৈঠক হয়। এসময় হাওর উপজেলার ওই উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে জনসাধারণের চলাচলে করতে দেয়নি পুলিশ।

বিষয়টির সমাধান করতে শুক্রবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুয়েল সাংমা, খালিয়াজুরি সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, বারহাট্টা সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল বাশারসহ দুই পক্ষের পাঁচ জন করে নেতাকে ডেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সমাধানে বসেন।
নতুন কমিটির পক্ষে সভাপতি আজিত বরণ সরকার, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সাদেক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামছুজাজামান শোয়েব, এড মঈনুল হক তালুকদার ও সাবেক উপজেলার কমিটির সাংগঠনিকব সম্পাদক নূরুল হুদা চৌধুরী।
অন্যদিকে পদ বঞ্চিত নেতাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতাউর রহমান, সাবেক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান ও আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম আবু ইসহাক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুমন চক্রবর্তী,উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম ফালাক উপস্থিত ছিলেন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে প্রশাসন দুপক্ষের মাঝে সমঝোতা করে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যান।
ঘটনা প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্নদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি মানিনা। ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য এই কমিটি করা হয়েছে। তবে জেলা ও কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দেয় তা আমরা মেনে নেব।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে নতুন কমিটির সভাপতি সভাপতি আজিত বরণ সরকার ও সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সাদেক বলেন, ‘কিছু অশৃংখল লোক দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের বাইরে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তৃণমূলের নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। আমরা তা হতে দেব না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুয়েল সাংমা বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে অসন্তোষ চলছিল। দুই পক্ষের নেতাদের নিয়ে বসে আলোচনা করে কোনো সংঘাত যাতে না হয় তা নিষেধ করেছি। বিষয়টি আলোচনা করে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি।
গত বুধবার বিকেলে খালিয়াজুরি উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের কমিটি ঘোষণার পর প্যান্ডেলে হামলা ও মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষোব্ধ লোকজন কয়েক নেতাকে বেশকিছুক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখে। গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে খালিয়াজুরি কলেজমাঠে এ ঘটনা ঘটে।
জেলা কমিটির কয়েক শীর্ষ নেতা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের (জেলা কমিটির) সঙ্গে কোনো রকম পরামর্শ না করেই কমিটি ঘোষণা দেওয়ায় খালিয়াজুরিতে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে খালিয়াজুরি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতিয়র রহমান খান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সমাকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ও প্রধান বক্তা ছাড়াও বক্তব্য দেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার, কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমেদ ও তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সাজ্জাদুল হাসান প্রমুখ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অজিত বরণ সরকারকে সভাপতি ও খালিয়াজুরি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। নয়া কমিটি ঘোষণার সঙ্গেসঙ্গে বঞ্চিতরা ‘এই কমিটি মানিনা, মানব না’বলে স্লোগান দিতে থাকেন এবং মঞ্চ ও প্যান্ডেলের চেয়ার ভাঙচুর চালান।
পরে পুলিশ তাদের মাঠসংলগ্ন ডাকবাংলোয় নিয়ে যায়। তখন নেতা-কর্মীরা ডাকবাংলো ঘেরাও করেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।