মহাদেও নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার মহাদেও নদ থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংছাতি ইউনিয়নের পাতলাবন এলাকায় ‘মহাদেও নদ রক্ষা কমিটি’ ও ‘রংছাতি ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহযোগিতা করে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা।
এ ছাড়াও সংগঠনের ব্যানার নিয়ে সংহতি প্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস)’ বাংলাদেশ গারো লিঙাম ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু), গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন (জিএসএফ), লিঙাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, রংছাতি মানবতার সংগঠন, পাতলাবন গ্রাম উন্নয়ন কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন। মহাদেও নদ রক্ষা কমিটির সভাপতি লুয়ের নংমিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ঘণ্টাবাপী কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন, গারো লিঙাম ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি সুরঞ্জন হাজং, সাধারণ সম্পাদক পিটারসন কুবি, গারো স্টুডেন্স ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল ঘাঘড়া, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য শফিকুল আলম, রংছাতি মানবতার সংগঠনের সভাপতি রিপন খান, পাতলাবনের বাসিন্দা সেলিনা ঘাঘড়া, সন্ন্যাসীপাড়ার জেুসেফ নাফাক, ইউনিয়ন বাগাছাসের সভাপতি অরবিল রিছিল, ইউনিয়ন লিঙামের সাধারণ সম্পাদক নবীন কুবি, আদিবাসী নেতা অঙ্কুর ঘাঘড়া, আদিবাসী নেতা মোহন রংখেং প্রমুখ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলমাকান্দার মহাদেও নদের ওমরগাঁও, হাসানোয়াগাঁও এবং বিশাউতি মৌজায় ৩৫ দশমিক ১৫ একর বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়। প্রায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় ইজারা পান মো. চান মিয়া নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু ইজারাদারের সঙ্গে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত রয়েছেন। তারা ইজারাকৃত নিদৃষ্ট জায়গা থেকে বালু উত্তোলন না করে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী পর্যটন এলাকাখ্যাত মহাদেও, সন্নাসীপাড়া, চিকনটুপ, বড়ুয়াকোনা, পাতলাবনসহ নদের বিভিন্ন এলাকা থেকে খনন যন্ত্র (ড্রেজার মেশিন) বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করে আসছে। এতে করে এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি নদের তীরের বাড়ি ঘর, স্থানীয় বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া বালু ও পাথর পরিবহনের ফলে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

কলমাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন বিশ্বাস বলেন, ‘অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে আমি গত বছরের ২৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
কলমাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তাহেরা খাতুন বলেন, ‘মহাদেও নদের বালু এখন আমাদের কাছে রীতিমতো দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে আদালতে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি পূরণ মামলা করেছিলাম। বালু ব্যবসায়ীরা খুবই প্রভাবশালী। আমার ছেলেরা বালু উত্তোলন ও পরিবহণে বাধা দেওয়ায় গত তিনদিন আগে ডায়ারকান্দা বাজারে কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী হামলা চালিয়ে ব্যক্তিগত চেম্বার ভাংচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

আদিবাসী পিটারসন কুবি বলেন, ‘বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কোন রকম নিয়ম-নীতি না মেনে ইজারা বর্হিভুত স্থান থেকে শত শত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে। এর ফলে নদের ভাঙনে আমাদের আদিবাসী অনেক পরিবার তাদের বসত ভিটা হারাচ্ছে।’

এ ব্যাপারে ইজারাদার চান মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পলাশ বিশ্বাস বলেন, ‘বালু মহালের সীমানা নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। জেলা প্রশাসন থেকে যে স্থানটি গত কয়েক বছর ধরে বালু মহাল হিসেবে ইজারা দিয়ে আসছে তাতে তেমন বালু নেই। ইজারাদারকে অনেক টাকা রাজস্বতে জমা দিতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে অন্য স্থান থেকে বালু উত্তোলন করতে হয়। তবে আমি বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না।’
এ ব্যাপারে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, ‘প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইজারা বর্হিভুত স্থান থেকে লুকিয়ে মাঝে মধ্যে বালু-পাথর উত্তোলনের খবর পেয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। গত এক মাসে ১৫টি মোবাই কোর্ট পরিচালনা করে ২০টি ড্রেজার ধ্বংস, ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও দু’জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।