
বিশেষ প্রতিনিধি: প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছর পর নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে সিজারিয়ান বিভাগ চালু করা করা হয়েছে। এতে করে হাওরাঞ্চলের উপজেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। একারণে এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে আনন্দের বন্যা। রোববার (১৪ আগষ্ট) সকাল ১০টার দিকে প্রথম সিজারের মাধ্যমে এ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো।
প্রথম দিন মোহনগঞ্জ পৌরশহরে দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা মশিউর রহমান দিপনের স্ত্রী পলি চৌধুরী সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এটি তাদের দ্বিতীয় সন্তান। তবে সন্তান ও প্রসূতি সম্পুর্ণ সুস্থ্য ও স্বাভাবিক আছে বলে জানা গেছে। প্রথম সিজারে ওই দম্পতির কাছ থেকে কোন খরচ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পুরো খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই বহন করেছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মাহমুদা খাতুনের নেতৃত্বে ছয় সদসস্যের একটি চিকিৎসক দল এই সিজার কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন- জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া ডা. ফয়জুল আলম, ডা. সাবিহা সিফাত, সেবিকা শিল্পী রানী কর, তানিয়া মল্লিক ও মার্জিয়া আক্তার। এছাড়াও এ কাজের সার্বিক সহযোগীতায় ছিলেন আসাবিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহারিয়ার জাহান ওসমানী।
মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম সিজার হচ্ছে জেনে এ কার্যক্রম দেখতে আসেন এলাকার সন্তান ও রাজধানীর শেখ রাসেল হাসপাতালের আইসিউ প্রধান ডা. রেহান উদ্দিন খান। এছাড়া তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকাস্থ মোহনগঞ্জ সমিতির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন ইসলাম মনি।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৮৪ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ধাপে ধাপে ৫০ শয্যা, শেষে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে এই প্রথম সিজার বিভাগ চালু করা হয়। এরআগে এই এলাকার প্রসূতিদের সিজারের জন্য নেত্রকোনায় ও ময়মনসিংহ যেতে হতো।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন সম্প্রতি যোগ দেওয়ার পরপরই এই সিজার বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যাবতীয় সরঞ্জাম যোগাড় করে অপারেশন থিয়েটার কক্ষ পুনুরুজ্জীবিত করেন।
সিজারে সফলভাবে দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়ায় মশিউর রহমান দিপন ও তার স্ত্রী পলি চৌধুরী। দিপন জানান, ‘এই হাসপাতালে এটিই প্রথম সিজার তাই কি জানি কি হয় এই ভেবে শঙ্কায় ছিলাম। তবে সুস্থ্য ও সুন্দরভাবে সিজার সম্পন্ন হওয়ায় এখন খুশি লাগছে। তবে শুরু থেকেই আরএমও ডা. ওসামানী স্যার আমাকে ভরসা দিয়ে গেছেন। মুলত তার অনুপ্রেরণায় আমি স্ত্রীর সিজারের বিষয়ে রাজি হয়েছি। এই সিজারে আমার এক টাকাও খরচ করতে হয়নি। এ ধারা অব্যাহত থাকুক। তবে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। আর দুরে কোথাও যেতে হবে না।’
সদ্য যোগ দেওয়া জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া ডা. ফয়জুল আলম বলেন, ইউএইচএফপিওর নির্দেশে ও তার সার্বিক সহযোগীতায় অপারেশন থিয়েটার চালু করতে বেশ কয়েকদিন ধরেই অক্লান্ত শ্রম দিয়েছি। অবশেষে আজ সফল সিজার করতে পেরে খুব খুশি লাগছে। এ ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। এতে হাওরাঞ্চলের প্রসূতি নারীরা উপকৃত হবেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন জানান, ‘এখানে যোগদানের পর থেকেই হাওরাঞ্চলের প্রসূতি নারীদের সিজারের দুর্ভোগের বিষয়টি লাগব করতে এখানে সিজারের উদ্যোগ নেই। এজন্য অপারেশন থিয়োটার চালুসহ এর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যোগাড় করি। সিজারের সময়ে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে আইপিএস স্থাপন করি। তবে আজকে প্রথমবারের মতো এক নারীর সিজার সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরে গর্ববোধ করছি। পাশাপাশি সকলের সহযোগীতায় এ ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো।’