চলে গেলেন কেন্দুয়ার বাউল ইসলাম উদ্দিন বায়াতি

স্টাফ রির্পোটার: দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থেকে আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় নিজ বাড়িতে মারা গেছেন বাউল ইসলাম উদ্দিন (৬৬)। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ স্ট্রোক করে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন। কিছুদিন ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর থেকে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে চরম অনটনে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি।
নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের একাধিক নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে গান গেয়ে খ্যাতি অর্জন করেন বাউল ইসলাম উদ্দিন। প্রায় তিন বছর ধরে জনপ্রিয় এই শিল্পী অসুস্থ ছিলেন। অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে পারছিলেন না।
কিছু দিন আগেও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন ইসলাম উদ্দিন বয়াতি। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অন্যত্র স্থানান্তরের পরামর্শ দিলেও অর্থাভাবে তা হয়ে ওঠেনি। এরপর থেকে বাড়িতেই অবস্থান করেন তিনি।
বাস্তুভিটা ছাড়া আর কোনো সহায় সম্পদও নেই এই গুণী মানুষের। অর্থাভাবে তার একমাত্র মেয়ের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে গেছে। স্বামীর চিকিৎসা, মেয়ের পড়ালেখা আর সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী লিয়া খানম।
তিনি শৈশবকাল থেকেই গানে মগ্ন ছিলেন। ছাত্রজীবনে মামা রঙ্গু মিয়ার কণ্ঠে গান শুনে সঙ্গীতের প্রতি আসক্ত হন। এর পর প্রখ্যাত বাউল আবেদ আলীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে বাউল গান ও বাউল শাস্ত্রের তালিম নেন। কৈশোরেই তিনি সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে গানকেই বেছে নেন জীবিকার অবলম্বন হিসেবে।


১৯৯২ সালে কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামের এক আসরে বাউল গান গেয়ে তিনি জননন্দিত কথা সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের দৃষ্টিতে আসেন। পরবর্তীতে তার ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে ওঠেন। হুমায়ূন আহমেদের ‘উড়ে যায় বক পক্ষী’, ‘চন্দ্র কারিগর’, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘এনায়েত আলীর ছাগল’, ‘অদেখা ভুবন’, ‘চৌধুরী খালেকুজ্জামানের বিশ্ব রেকর্ড’, ‘চৌধুরী খালেকুজ্জামানের এভারেস্ট জয়’, ‘থ্রি-টু-ওয়ান জিরো এ্যাকশান’সহ ১৩টি নাটক, দুটি চলচিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ও ‘নয়ন নম্বর বিপদ সংকেত’ এবং তিনটি বিজ্ঞাপন চিত্রে গান ও অভিনয় করেছেন তিনি। এসব অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নব্বই দশক ও তার পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে পরিচিতি পান তিনি। একাধিকবার গান করেছেন দেশের বাইরেও।
তার মৃত্যুতে নেত্রকোণা ৩ আসনের এমপি অসীম কুমার উকিল, নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মো: আবদুর রহমান, জেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি হায়দার জাহান চৌধুরী, শিকড় শিল্পী গোষ্টির সম্পাদক জিয়াউর রহমান খোকন সহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।