বাংলার নেত্র-এ সংবাদ প্রকাশের পর সেই অসহায় দম্পতি পাচ্ছেন সরকারী ঘর

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণার জঙ্গলের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করা অসহায় সেই বৃদ্ধ দম্পতি পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার সরকারী ঘর। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে ‘রক্তদানে নেত্রকোণা’ নামে একটি সংগঠন। এছাড়াও তাদের জন্য করে দেওয়া হচ্ছে একটি দোকানের ব্যবস্থা। প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে আর্থিক অনুদান। বিষয়টি নিয়ে গত ১৭ আগস্ট দৈনিক বাংলার নেত্র পত্রিকায়, ‘ খোঁজ রাখেনা সন্তানেরা, ঝুপড়ি ঘরে দিন কাটে বৃদ্ধ দম্পতির’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন মহলের।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের দুগিয়া গ্রামে জঙ্গলের ভেতর ৪ শতাংশ জায়গায় একটি কুঁড়ে ঘরে বসবাসরত আব্দুল জব্বার(৭০)কে দেখতে যান।


জন ছেলে মেয়ে তার। ৭ মেয়ে, ২ ছেলে। ছেলে। কিন্তু কেউই বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভাত না দেয়ায় শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে চলেন তিনি। বিক্রি করেন বুট, চানাচুর, কেক। বয়সের ভারে জীবন চলতো না আর। স্ত্রী রাজু আক্তারের বয়সও ৬৫। তিনিও শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। জন্মগত পঙ্গুত্বের কারণে একা একা উঠে বসতেও পারেনা। সবসময় শুয়ে থাকতে হয়। সারাদিন পাড়া মহল্লায় বুট, চানাচুর বিক্রি করে সন্ধ্যায় অসুস্থ স্ত্রীকে দেখাশোনা ও রান্নাবান্নার কাজও বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার নিজেই করেন।
বয়সের ভারে বৃদ্ধ আব্দুল জব্বারের চোখ দুটোতেই ছানি পড়েছে। চোখেও কম দেখেন। শারীরিকভাবে নিজেও অসুস্থ। কয়দিন আগে উনার স্ত্রীর পা কেটে যাওয়ায় সেই পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। চিকিৎসার অভাবে সেই ক্ষত পচে গিয়ে পোকা ধরেছে। স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী যুবক মাসুদুল করিম মাসুদ চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই পরিবারকে করছিলেন সার্বিক সহযোহিতা।

মাসুদ বলেন, ‘উনার নয়জন ছেলে মেয়ে থাকার পরও তাকে ভরণপোষণ করতো না। বিষয়টি শুনে একদিন দেখতে গিয়ে দেখি খুব অসহায় জীবন যাপন করছেন তারা। বসবাসের ঘরটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। কোনো মানুষ এই ঘরে বসবাস করছে দেখে খুব খারাপ লেগেছে। বৃদ্ধার কেটে যাওয়া পায়ে পচন ধরেছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলার নেত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রচারের পর প্রশাসন সহ সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তাদের একটা উপায় হচ্ছে জেনে খুব ভালো লাগছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তদানে নেত্রকোণা পরিবারের প্রতিষ্টাতা সভাপতি মাকসুদুল হাসান জনি বলেন, ‘ সংবাদটি প্রকাশের পর এক মাসের খাবার এবং ২ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি। ওই জব্বার চাচার চোখ দুটিতেই ছানি পড়ে গেছে। তার দু’চোখের ছানির অপারেশন সহ চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা আমরা সংগঠন থেকে করবো।’ এছাড়াও নেত্রকোনা শহরের এক ব্যবসায়ী জহিরুল কবীর শাহীন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর আমরা কয়েকজন মিলে ঘর করে দেয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়ে ছাব্বিশ হাজার ৫শ টাকা সংগৃহ হয়েছে। আমার লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহের টার্গেট ছিল। যেহেতু জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’

বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার বলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে শারীরিক প্রতিবন্ধী স্ত্রীর দেখাশোনা করি, মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরী করে বুট, চানাচুর, কেক বিক্রি করতাম। ঘরে বৃষ্টির পানি পড়তো। খাবার পেতাম না। আপনারা পেপারে লেখার পর অনেক লোকজন বাড়িতে এসেছে। সরকার ঘর করে দেবে। খাবার দাবার টাকা পয়সা দিয়ে যাচ্ছে। আমি খুব খুশি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে একটি ঘর করে দেয়া হচ্ছে। রক্তদানে নেত্রকোনা নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলা সমাজ সেবার সামাজিক নিরাপত্তার চলমান ভাতা সব সময় প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে তাৎক্ষণিক ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। আত্নকর্মসংস্থানের জন্য তাকে একটি দোকান করে দেয়া হবে। নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত¦াবধায়কের সাথে কথা বলে অসুস্থ বৃদ্ধার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুুুুর রহমান বলেন, ‘দৈনিক বাংলার নেত্র র সংবাদটি আমার এবং উদ্বোতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। আমি নিজে উনার বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এলাম। রির্পোটের বিষয়ের সাথে বাস্তবতার মিলে দেখেছি। আমরা নগদ কিছু টাকা দিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি আধা পাকা বাড়ি করে দিচ্ছি। আর্থিকভাবে সচ্ছল করার জন্য একটি দোকানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সংবাদটি প্রকাশের জন্য সাংবাদিক সহ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।