নেত্রকোণায় ঘরে ঘরে বাড়ছে করোনার উপসর্গ

বিশেষ প্রতিনিধি: করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটলেও নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। ১শ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে আজও চালু হয়নি সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থার। চারটি ভেন্টিলেটর থাকলেও এখনো চালু হয়নি সেগুলো। একটি আইসিইউ বেডও নেই। রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্কটও। জরুরী চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য এসব ব্যবস্থা না থাকায় চলমান করেনা পরিস্থিতিতে জেলাবাসীর মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে জেলার দশ উপজেলার গ্রামে গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই করোনার উপসর্গের রোগী রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না গ্রামের মানুষ। অনেকেই এখনো স্বাভাবিক সর্দি জ¦র মনে করেই ওষুধ পথ্য খাচ্ছেন। শনিবারও জেলার মোহনগঞ্জে ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৪ জনই আক্রান্ত বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স। পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে গেলেও জেলা সদর হাসপাতালের করোনা চিকিৎসার নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ। পরিস্থিতির অবনতি হলে সামলানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল। করোনা উপসর্গের রোগী জেলা সদর হাসপাতালে গেলে ময়মনসিংহে পাঠিয়ে দেয়ারও রয়েছে অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালটি জেলা সদরের একমাত্র সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্র। সদর ছাড়াও বাকি ৯ উপজেলার রোগীরাও উন্নত চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালটির ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে হাসপাতালটি ১শ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনও এটির কার্যক্রম চলছে ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই।
করোনা পরিস্থিতির শুরুতে হাসপাতালটিতে ৩৬টি শয্যা নিয়ে করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়। কিন্তু কেবল ৩৬টি শয্যা, ১শ ২৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ১৩টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ছাড়া যেন আর কিছুই নেই সেখানে। কিছুদিন আগে হাসপাতালটির জন্য চারটি ভেন্টিলেটর মেশিন সরবরাহ করা হলেও এনেসথেটিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমের অভাবে একটিও চালু করা যায়নি। মেডিসিন বিশেষজ্ঞের দু’টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। পুরো হাসপাতালে একটি আইসিইউ বেডও নেই। শ^াসকষ্টের রোগীদের জন্য অক্সিজেন-সহায়তা অপরিহার্য হলেও হাসপাতালটিতে আজও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু করা হয়নি।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের উদ্যোগে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালুর কাজ চলমান রয়েছে। শীঘ্র তা চালু করা যাবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিম মিয়া। এদিকে ব্যাপক দাবি সত্ত্বেও করোনা পরীক্ষার জন্য এ হাসপাতালে আজও পিসিআর ল্যাব চালু করা হয়নি। একটি জিন এক্সপার্ট মেশিনে দিনে দুইবারে সর্বোচ্চ ১৬টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। এ কারণে বেশিরভাগ নমুনা পাঠাতে হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যালে। একটিমাত্র এ্যাম্বুলেন্সে চলছে করোনায় আক্রান্ত রোগী পরিবহনের কাজ, যা একেবারেই অপর্যাপ্ত। এছাড়াও হাসপাতালটিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সঙ্কট রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগীরা পরীক্ষা করাতে না পেরে ঘুরে যাচ্ছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, দুই দিন গিয়ে ঘুরে আসছি। সদর হাসপাতালের ল্যাবরেটরীতে গিয়েও পরীক্ষা করাতে পারছি না। তারা বলে, আজ হবে না। আবার কেউ কেউ এরিমধ্যে পরীক্ষা করিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এএসএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু হলে করোনা রোগীদের আরেকটু ভালো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। এটির কার্যক্রম চলছে। নানান কারণে কাজ শেষ হচ্ছে না। সব্বোে এছাড়াও হাসপাতালটিতে ৪২ টি চিকিৎসকের পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৩ জন চিকিৎসক। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নার্স আয়া নিয়োগ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। রোগী বেশি হলে একদিনেই অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। প্রতিদিন ময়মনসিংহ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করে এনে রোগীদের সরবরাহ করা হয়। তাই গুরুত্বর রোগীদের ময়মনসিংহে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’
নেত্রকোণার সিভিল সার্জন মোঃ সেলিম মিঞা বলেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় জেলায় ৪ জন কভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ জন। এপর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩০০১ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৭৩৫ জন। মোট মারা গেছেন ৭২ জন।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।