সংবাদ প্রকাশের পর: অগ্নিদগ্ধ সেই তানজিনা সুস্থ হয়ে ফিরেছে নতুন বাড়িতে’

স্টাফ রির্পোটার: নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার শুনই ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের হতদরিদ্র অসহায় আব্দুল মজিদের মেয়ে অগ্নিদগ্ধ তানজিনা আক্তার (১০) জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় চিকিৎসা শেষে ফিরেছে নতুন বাড়িতে। ‘১ মাস ধরে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে অগ্নিদগ্ধ শিশু তানজিনা’ শিরোনামে চলতি বছরের ১৭ মে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয় দৈনিক বাংলার নেত্র পত্রিকাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে। এরপর জেলা প্রশাসক শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় পাঠান। সংবাদটির গুরুত্ব দিয়ে বসরকারি প্রতিষ্ঠান ফরিদা মান্নান এন্ড মুন ফাউন্ডেশন ঢাকায় তার দেখভালের দায়িত্ব নেন।
গত ৩ রমজান দুপুরে রান্না করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে যায় শিশু তানজিনা আক্তার (১১) এর দেহের প্রায় অর্ধেক অংশ। তার দরিদ্র বাবা উপজেলা হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাকরা ময়মনসিংহে রেফার্ড করলেও অর্থাভাবে নিতে পারেনি। দীর্ঘ একমাস স্থানীয় কবিরাজি চিকিৎসাধীন থেকে মরণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল শিশুটি।
দগ্ধ শিশু তানজিনা আক্তারের বাবা মইজ উদ্দিন বলেন, ‘মেয়েটি পুড়ে যাওয়ার পর আমি বারহাট্টা হাসপাতালে নিয়ে গেছি। তারা মমিনসিং লইয়া যাইতে কইছিল। আমার কাছে ভাড়ার টাকা আছিন না। আমি বাড়িত নিয়ে আইচি। কবিরাজি ওষুধ দিতাছি। ভালা অয়না। শরীর পচে গন্ধ অইছিন। নিউজের পর মেয়ে আমার সুস্থ অইছে। ঘর বানাইয়া দিছে । আমি অনেক খুশি।’
শিশুটির প্রতিবেশি খুদেজা বেগম বলেন,‘সাত মাস আগে অসুস্থ অইয়া তার মা মইয়া গেছিন। মা মরার পরে ঘরের কাজ মেয়েটিই করতো। রোজার তিন তারিখ রান্না করতে গিয়া শইল পুইয়া গেছিন। কবিরাজ আইয়া ধূপ আর তেল দিয়া যাইতো। ঘর গন্ধ অইয়া গেছিন। সারা রাইত চিল্লাইতো। শুইতে ঘুমাইতে পারতো না। অহন বালা অইছে। আল্লায় আপ্নেরার ভালা করুক।’
জেলা প্রশাসক কাজি আব্দুর রহমান ঢাকায় যোগাযোগ করতে শুরু করলেন। শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করার জন্য জেলা প্রশাসক কথা বলেন। বেসরকারি একটা প্রতিষ্ঠান ফরিদা মান্নান এন্ড মুন ফাউন্ডেশন ঢাকায় তার দেখভালের দায়িত্ব নিলেন।


গত ১৮ মে আগুনে পুড়া ওই শিশুকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করার পর জেলা প্রশাসক তার জন্য কেবিন এর ব্যাবস্থা করে দেন। ভর্তি করার পর থেকে তার চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসায় তানজিনা ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করে। জেলা প্রশাসক নিয়মিত তানজিনার খোঁজ খবর রাখতেন। কখন কি প্রয়োজন সবকিছুই দেখভাল করতেন জেলা প্রশাসক। ঢাকার ফরিদা মান্নান এন্ড মুন ফাউন্ডেশন হাসপাতালে দেখভাল করতেন। গত দুই মাস এই অগ্নিদগ্ধ শরীর নিয়ে যুদ্ধ করে তানজিনা। অবশেষে আজ (৭ জুলাই) বুধবার সুস্থ হয়ে নিজ গ্রামে ফিরে যায় তানজিনা।
এদিকে জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান এর সাথে কথা বলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফরিদা মান্নান এন্ড মুন ফাউন্ডেশন তানজিনার জন্য একটি আধা পাকা ঘরের ব্যবস্থা করেন। তানজিনা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রাসহ তানজিনার পরিবার জেলা প্রশাসক সহ গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান বলেন, ওই শিশুটির সংবাদটি প্রথমে দৈনিক বাংলার নেত্র পত্রিকাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে পেয়েছি। এরপর তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। একটি বেসরকারী প্রতিষ্টানের উদ্যোগে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।  বাড়িতে ফিরিছে শুনে খুব ভাল লেগেছে।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।