কবি দুনিয়া মামুন এর কয়েকটি কবিতা

কবি দুনিয়া মামুন এর কয়েকটি কবিতা

 

একটি ফুল

অনেক গাছের মালিক আমি

অনেক সম্পদ, গাড়ি ও বাড়ি,

অনেক শস্য, দোকান, কর্মচারী

স্বর্ণ-রূপা, শাসক-প্রশাসকে দামী

অথচ একটি শুদ্ধ ফুলের ঘ্রাণে

আজীবন আমাকে টানে

একটি ফুলের বিশ্বস্ত মালিক হতে পারিনি।

###

 

বিভক্ত রাস্তা

কুয়াশার পাখা নয়, দৃষ্টির অলংকার নয়

দূরের বাতি আর তারাদের মতো এ রহস্য

এক ঝাক বলাকা উড়ে উড়ে যায় সুদৃশ্য

পৌষের উষ্ম রোদের অনন্তকালীন রেশম ছুঁয়ায়

অনুভব ফিরে আসে- ফিরে আসো তুমি

ফিরে আসে দৃষ্টির সেই বৃহস্পতি অমলিন বৃহস্পতি

ফুলকপি-বাঁধাকপিদের মতো আরো বহুকিছু ফিরে আসে

স্বাদের ব্যত্যয়- দৃষ্টির ব্যত্যয়- বয়সের ব্যত্যয় তারা বোঝে না

ফিরে আসে অনুভব- ফিরে আসে বৃহস্পতি

বিভক্ত রাস্তায়- বিভক্ত সুখের ঠিকানা

ফিরে আসে কুয়াশা- ফিরে আসে জাগতিক আরো দৃশ্য

ফিরে আসে এ্যালবাম- পড়ে থাকা এ্যালবাম

ক্যালেন্ডারে সুখের বর্ণনা নেই- দিন মাস সবই আছে।

###

অহংকার

আমরা অনেক কিছু নিয়ে ধনী

এ শুধু আমাদের অহংকার

চোখ-মুখ-চুলের অবয়বসহ মানুষ

যা সবারই আছে কম অথবা বেশি

পোশাক তো পঙ্গুত্বকেও ঢেকে রাখে

চশমা ঢেকে রাখে অন্ধত্ব অথচ

কারো চোখ পৃথিবীর চশমায় আঁটা

নৈতিকতার বুলিতে আঁটা তার মন

পৃথিবী যার কাছে- অনেক বড়

জানার জন্যে এ তার শিশুতোষ

আমরা গাড়ি-বাড়ি-সতেজতা নিয়ে ধনী

তা শুধু আমাদের অহংকার

আমরা প্রস্ফুটিত হই ফুলের মতো

ঝড়েও যাই ঠিক তেমনি

অনেক গাছের সমারোহে একটি বাগান

অনেক ফুলের সমারোহে উজ্জ্বল কয়েকটি ফুল

অনেক মানুষের সমারোহে সজ্জিত পৃথিবী

কয়েকজন কৌলিন মানুষ মনে করে

তারা ওই উজ্জ্বল ফুলটির মতোই

এ শুধু অহংকার, অহংকার ছাড়া কিছু নয়।

###

 

আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারি

 

আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারি

দেখা অদেখা বড় কথা নয়…

যখন কিঞ্চিৎ অন্যরকম স্বাদ অনুভবে

আপনাকে সমুখে রেখে শান্ত থাকে মন

পেছনে-অগোচরে আপনাকেই দেখি বারবার

অথবা একাকিত্বে আত্মার সূতোয় অবিচ্ছেদ্য

দেখা অদেখা বড় কথা নয়…

নেশার চেয়েও যদি উত্তম কিছু থাকে

এমন প্রেমের ঘোর তার চেয়েও বেশি

আমি আপনাকে ভালোবাসেছি এখুনি

এই যে দু’জনের নিরব শত কথন ভাসছে

আত্মপক্ষ সমর্পণের উহ্য বাক্যে

ভালোবাসা ছাড়া- এ অন্য কিছু নয়।

###

এসো বাঁচি প্রণয়ের সুরে

চোখ খোলো- দেখো আমার ভেতর আর কোনো সংকেত নাই

বচনরুদ্ধ আমি কেবল- তোমার অনুভূতির দরোজা-জানালায়।

তোমার ভ্রু-ফলকে এঁকে যাই অবাধ পাখিদের কাকলী-ধ্বনি

চোখের পাতায় শৈবাল আর কর্ণিয়ায় সুখের স্বপ্ন-আবরণী

চোখ খোলো- আমাকেই দেখবে এমন কিশোর-অবুঝ মিশেল

সময় সময় নেই- দিন-মাস বয়ে- এ স্বর্ণোজ্জ্বল বিকেল

চোখ খোলো- কৈশরের স্বপ্ন-সমীরণে যাবর কাঁটা সেই চোখ

এসো বাঁচি প্রণয়ের সুরে ভাসি- ঘোচাই আঁধার মর্ত্যলোক।

###

বর্ষার গাঁ

এখানে বর্ষায় বৃষ্টি আর মাটির স্পর্শ কর্দমাক্ত

তুমুল বৃষ্টিতে গাঁ’য়ের মানুষ ওমের দরজায় না ঢুকে

ভিজে ভিজে অনুভব করে বৃষ্টির বীকন ছন্দ

কয়েকটি গাঁ বর্ষার ফ্রেমে একত্রিত হলে

কাঁচা পাতির চা পানের মতো ছন্দে ছন্দে দোলে গাঁ-গোত্র

আমিষের অভাব নেই- সব্জিও ক্ষেতে ক্ষেতে

কাঁথার ভেতর অলস মুড়িয়ে রেখে শুভন সকালে

বিস্তৃর্ণ মাঠে কৃষক বুলিয়ে দেয় হাত ও চোখের অন্তঃমিলন

শিশু-কিশোরের বৃষ্টিস্নান পুকুরের মাছের মতো লাফিয়ে ওঠে

অমনষ্ক পৃথিবীর প্রাচীন আবহ কিছুটা মেঘের ফাঁকে রোদের জানালায়

এখানে-সেখানে জমা পানিতে তুলির আঁচড়ের মতো ডিমেড অথবা

কিছুটা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বৃষ্টি নূহ্য গাছ

ভেঙে যাওয়া সত্য নয় এসব, এসব আদি ও দৃশ্যিত সত্য

গাঁ’য়ের মানুষের পা- শহুরে মানুষের পা’য়ের মতো পাথুরে নয়

মনোজ মাটির সম্পাদক- সে প্রায়শই বলে-

কাজে-অকাজে খুশি-অভিমানে সারাদিন নাকি তারা তরতর করে

দেখুন প্রতিটা ভ্রুণ একেকটি আকাশের তারা ঝুলন্ত অথচ সাবলীল

এখানে ধীর সময়ের সন্তান নয় কেউ

কর্দমাক্ত, উষ্ম অথবা শীতল সবকিছুর স্পর্শেই বেঁচে থাকে

সন্ধ্যা এলে মনে হয় কোনো এক আলোহীন ঘরের দরজা খোলে যায়

তারপর একরাত কারো সাথে কারো- সহসায় দেখা হয় না।

###

শাণিত

বৃষ্টি শাণিত করে মাটি, উদ্ভিদও শাণিত হয়

ফুয়েলে শাণিত গাড়ি, দ্রোহে আগুনো কম নয়

লবণ যদিও তেতো, পরিমাণে তরকারি স্বাদ

সদাসয় অনজ্ঞের যজ্ঞে কর্তৃত্বও কুপোকাত

 

খাবারে শাণিত দেহ, দৃষ্টি স্নিগ্ধ রাতাকাশে

ভুলে যুক্তি নয়, ভুল স্বীকারে আত্মা হাসে

দেবতা মার্জিত, অনিয়মে লঙ্ঘিত নিশ্চয়

নীরবে মার্জিত পুস্তক, ক’জনেই খোঁজ লয়

 

কথার অগ্নিতে পুড়ে পুড়ে- মানুষে মন ভেঙে গড়ে

কে জানে যুগে যুগে সমালোচনাও- শাণিত করে।

###

অজানা বিশ্বাস

তুই যা ওরে বাতাস- তাকে ছুয়ে ফিরে আয়

তবু যদি তার শ্বাস আর স্পর্শের- ঘ্রাণ পাই

রাঙাছড়া ফারংপাড়া নিত্য সম্পর্কে- অপরাপর

বর্ষায় ধূতির রঙে আকাশ ছুয়েছে বৃষ্টির ঝালর

বিজলী চমকালে- ও তো মনে হয় প্রিয়ার হাসি

মেঘ যেনো ময়লা জোব্বা বহুদিনের পুরোনো-বাসি

এ জোব্বা এক প্রেমিকের শত বেদনারই এমন রঙ

তুলির আঁচড়ে ছিলো যে আকাশ তার নাম ফারং

প্রিয়ার নিঃশ্বাস এখনো বাতাস পশ্চিমে নিয়ে আসে

জেনো শুধু তাকে চিনে বেঁচে থাকি অজানা বিশ্বাসে।

###

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।