
কবি নেহাল হাফিজ-এর তিনটি কবিতা
কথার কথা
এটা আজকের কথা নয়, তখন
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি।
গণিতের স্যার বোঝাচ্ছেন, ” বার ফুট লম্বা
তৈলাক্ত বাঁশটিতে একটি বানর প্রতি মিনিটে
……..ফুট উপরে উঠে এবং…… ফুট নিচে নামে।
মনে করি, প্রতি মিনিটে বানরটি……. ফুট উপরে উঠে এবং…….. ফুট নিচে নামে। ”
অসৎ দুধওয়ালা দুধের সাথে পানি মেশানোর
অংকটি প্রতিদিন খুব করে মনে পড়ে।
দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ও সেই
বানরটিকে উপরে উঠার নিরবচ্ছিন্ন
চেষ্টা করতে দেখেছি, মোটেও ভুলিনি।
স্যার বলেছিলেন, ” মনে করি….মিনিটে বানরটি
…..ফুট উপরে উঠতে গিয়ে
……..ফুট নিচে নামে!”
আজ এতো বছর পর সেই বানরটি
বেঁচে নেই আর, তার উপরে উঠা হয়নি!
তৈলাক্ত বাঁশটি এখন ঘুণ পোকার দখলে।
গণিতের সূত্র ধরে, ——মনে করি……..
অন্ধকারে পরস্পর মুখোমুখি আমরা।
মনে করি…………!
এভাবে অনেক কিছুই তো মনে করতে পারি!
আমার এসব মনে করা শুধুই কথার কথা,
অথবা কেবলই কথার কথা!
পাজামার গিঁঠ খোলো
আমাদের মাথাগুলো শুধুই
তোমাদের কুর্ণিশের জন্য।
আমাদের হাতগুলো প্রণাম ভঙ্গিতে
রাস্তায় বাতিস্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে বহুকাল,
বুকগুলো ট্রাফিক পুলিশের
নির্দেশ মেনে শুয়ে থাকে পিষ্ট হতে
তোমাদের গাড়ির চাকায়,
আমাদের আঙুল হাতুড়ির
স্বরবৃত্ত ছন্দের নীচে রক্ত প্রনালী হয়ে
নির্মাণ করে তোমাদের স্নান ঘর,
আমরাই আমাদের চোখের আলোয়
সাজিয়ে দেই তোমাদের
বর্ণমালা বাতিঘর।
পাজামার গিঁঠ খুলে দেখো,
শ্রমিকের রক্ত এবং ঘাম ছাড়া
তোমাদের লজ্জাও লজ্জাহীন, বিবস্ত্র।
মিথ্যে
কৈশোরে মাকে একটি মিথ্যে বলেছিলাম
কিন্তু জানতাম না, একটা মিথ্যে
মাকে বিশ্বাস করাতে
অনেক মিথ্যের প্রয়োজন হবে,
অনেক মিথ্যের জন্য আরো
অনেক, অনেক মিথ্যে।
এভাবে একটা সময় আর
মিথ্যে খুঁজে পাচ্ছিলাম না;
আমার মনের অবস্থা বুঝে মা বললেন,
“কিরে! এত অল্পতেই
দম ফুরিয়ে গেলো বুঝি!”
উপায়ান্তর না দেখে মাকে জড়িয়ে ধরে
বললাম,”ভুল হয়ে গেছে মা,
ক্ষমা করে দাও!”
আজ মা নেই, কিন্তু মিথ্যেরা আছে;
দিনে দিনে সংখ্যাহীন শঙ্কায়
মিথ্যের বংশ বিস্তার ঘটেছে।
আজ মা বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন,
“খোকা! সত্যি তোরা পারিস বটে! “