ধর্মপাশায় জলমহাল দখলে নিতে জেলেকে জবাই করে হত্যা: ঘরে আগুন

বিশেষ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের এক সদস্যকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সুনই জলমহালের পাড়ে নির্মিত ওই সমিতির দুটি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খুন হওয়া ব্যক্তির নাম শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫)। তিনি সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি চন্দন বর্মণের বাবা। পুলিশ তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সুনামগঞ্জ জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কয়েকজন সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, ধরমপাশা থানা-পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই জলমহালটি উপজেলার সুনই মৎস্যজীবী সমবায় লিমিটেড বাংলা ১৪২২ সাল থেকে ১৪২৭ সাল পর্যন্ত ছয় বছর মেয়াদে ইজারা পায়। যথারীতি ওই সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ ইজারামূল্য পরিশোধ করেন এবং জলমহালটির পাড়ে দুটি অস্থায়ী ঘর তৈরি করে সমিতির সদস্যদের নিয়ে জলমহালটি রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করেন।
কিন্তু সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি দাবি করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারী সুনই গ্রামের বাসিন্দা সুবল বর্মণ (৩০) তিন মাস আগে ১৫-২০ জন লোক নিয়ে সুনই জলমহালটির পাড়ে ঘর তৈরি করে সেখানে বাস করতে শুরু করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নওধার গ্রামের রিপন মিয়ার নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জলমহালটির ইজারাদার চন্দন বর্মণের সমিতির সদস্যদের নির্মিত দুটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় তারা সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণের বাবা শ্যামাচরণ বর্মণের গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
আমরা জলমহালটির বৈধ ইজারাদার হলেও এটি ভোগদখলে বাধা দিয়ে আসছিলেন ধরমপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারীরা।
সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহসভাপতি মনীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমরা জলমহালটির বৈধ ইজারাদার হলেও এটি ভোগদখলে বাধা দিয়ে আসছিলেন ধরমপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারীরা। উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশেই বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে তার ৩০০-৪০০ জন লোক আমাদের খলার দুটি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। হামলার সময় আমাদের সমিতির সভাপতির বাবার গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের সমিতির ১৫-২০ জনকে আহত করা হয়েছে। তারা জলমহালের মাছও লুট করেছে।’
জলমহালের ইজারাদারের ঘরে অগ্নিসংযোগ ও সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতির বাবার ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।
তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষের পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফেরদৌসুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ও আমি বৃহস্পতিবার সারা দিন সুনামগঞ্জ শহরে ছিলাম। সেখানে আমরা দুজনই সুনামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। আমার জানা মতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই জলমহালে কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাকে জড়িয়ে যেসব অপবাদ রটানো হচ্ছে, তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’
ধরমপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া রাত ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শ্যামাচরণ বর্মণের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, মনাই নদী প্রকাশিত সুনই জলমহালটি নিয়ে সমিতির দুটি পক্ষের মধ্যে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। আদালতের নির্দেশে জলমহালে এখন স্থিতাবস্থা রয়েছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।