বারহাট্টায় কংসের ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণার বারহাট্টায় কংস নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার দুপুরে বারই তাতিয়র গ্রামের নদের তীরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন, চল্লিশ কাহনীয় হাফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা মো. একদিল আলী, শিক্ষক স্বপন সরকার, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুছ, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো. হুমায়ুন কবির, কিতাব আলী, কালা মিয়া, কেরামত আলী, আবদুর রশিদ প্রমুখ।
মানববন্ধন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই যুগে রায়পুর ইউনিয়নের কর্ণপুর, ফকিরের বাজার, বারই তাতিয়র, রায়পুর, পাইকপাড়া গ্রামের অন্তত দুই সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি, স্থাপনা, কবরস্থান, শশ্মান, শতাধিক হেক্টর ফসলি জমি, বন-জঙ্গল কংস নদে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে পাঁচ শতাধিক লোক অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন। এ বছর বর্ষার শুরু থেকে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আগামী এক বছরে দুই শতাধিক বসতভিটা, কয়েক শ একর কৃষিজমি নদে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বারই তাতিয়র গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন বলেন, গত ২৫ বছরে ইউনিয়নের কর্ণপুর, রায়পুর, বারই তাতিয়র, পাইকপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার ঘরবাড়ি নদে বিলীন হয়েছে। এরমধ্যে কর্ণপুর গ্রামের কিছু অংশ ছাড়া পুরো গ্রামই নদের গর্ভে চলে গেছে। বর্তমানে ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এসব জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি জানান, গত চার বছরের মধ্যে নদে তাঁর সমস্ত জমি বিলিন হয়ে গেছে। এখন তিনি অস্থায়ীভাবে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্যের এক পযায়ে বারই তাতিয়র গ্রামের কালা মিয়া কেঁদে কেঁদে জানান, ‘তার ৩ হাজার ৫২০ শতক জায়গা ছিল। গত দুই যুগের মধ্যে ঘরবাড়িসহ সব জায়গাই নদে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তিনি অন্যের বাড়িতে আশ্রিত।
শিক্ষক স্বপন সরকার বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ না করা হলে কয়েক বছরের মধ্যে বাড়ি-ঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমিসহ সব কিছুই কয়েক বছরের মধ্যে নদের বুকে চলে যাবে।’

ওই গ্রামের গৃহবধূ আয়েশা আক্তার বলেন, গত এক মাসে তাদের নিজের এবং আত্মীয়-স্বজনের মোট সাতটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ছোট যে টিনের ঘরটি আছে, পানি কিছুটা কমলে সেটিও ভাঙনের কবলে পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কংস নদে ফকিরের বাজার, কর্ণপুরসহ কিছু এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণের জন্য ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। আর বারই তাতিয়র, রায়পুর এসব এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙন রোধে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য স্থায়ী সমাধানের অংশ হিসেবে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।