কলমাকান্দায় অনিয়মের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

বিশেষ প্রতিনিধি: জাতীয়করণের পর শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ সৃজন সম্পর্কিত চিঠি গোপন, অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, অসদাচারণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে নেত্রকোণার কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যানারে এই অনুষ্ঠান করা হয়। এতে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রধান শিক্ষক এ সময় অনুপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক এ কে এম এমদাদুর রহমানের সভাপতিত্বে শুরুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারী শিক্ষক এইচ এম ইলিয়াস। পরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন, সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসেন, আলী উছমান, নিবেদিতা সাহা, লাকি তালুকদার, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৪২ সালে তিন একর ৯৩ শতক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল তা জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীসহ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পযন্ত প্রায় ১৭০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, ইলিয়াস হোসেন গত ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম করে আসছেন। সর্বশেষ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ার পর শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ সৃজন সম্পর্কিত চিঠি গোপনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, জেলার পূর্বধলা ও বারহাট্টা উপজেলার দুটি বিদ্যালয় একই সময়ে জাতীয়করণ হয়। ওই বিদ্যালয়গুলো যথা সময়ে পদসৃজনের তথ্য প্রেরণ করায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু কলমাকান্দা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন পদ সৃজনের তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যথা সময়ে প্রেরণ না করে ওই চিঠিটি তিনি গোপন করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি তরিগরি করে গত জুনে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রদান করেন। তথ্য গোপনের বিষয়ে শিক্ষকরা জানান, ইলিয়াস হোসেনের সকল একাডেমিক সনদ তৃতীয় বিভাগ থাকায় আত্মীকরণ হলে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন না। এ ছাড়া যথা সময়ে পদ সৃজন হলে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার চাকুরি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেন, ইলিয়াস হোসেন গত ২০১৮ ও ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে জেএসসি ও ২০১৯ ও ২০২০ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্পেশাল ক্লাসের নামে জন প্রতি রশিদ ছাড়া ৩০০ টাকা করে আদায় করেন। এ ছাড়া গত ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় জন প্রতি ১৭০ টাকা আদায় করে বিধি মোতাবেক ব্যয় না করে আত্মসাৎ করেন। ওই বছর প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি ফরম ক্রয় করে। এ ছাড়া তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করেন। এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করতে গত ২১ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক কাযালয় থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) দায়িত্বে থাকা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে এডিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ শুক্রবার বিকেলে বলেন, ‘আমি বিষয়টি তদন্ত করে গত জুলাইয়ের শেষ দিকে জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছি। ওই প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমার সমন্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি কোন অসদাচারণ, অর্থ আত্মাসাৎ, বা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নই। একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে আমি তা করতে পারি না। আর চিঠি গোপনের বিষয়ে আমার হাত নেই। ওই চিঠিটি আমার ইমেইল বা ডাকযোগে আসেনি। গত ১৪ জুন আমাদের বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক কালবের ইমেইল থেকে তা বের করে আমাকে দেখানো হয়। পরে আমি জেনে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রেরণ করেছি।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।