নেত্রকোণার জনবান্ধব ডিসি প্রত্যাহারে হতবাক স্থানীয়রা

সৈয়দ আরিফুজ্জামান: মঈনউল ইসলাম একজন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। এ পদে নেত্রকোণা জেলায় তাঁর দায়িত্ব পালন প্রায় দুই বছর। দায়িত্বকালীন সংশ্লিষ্টজনদের কাছে তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠা আর দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।

গত ৩ আগষ্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক নির্বাহী আদেশ তাঁকে পরবর্তী পদায়নের জন্য সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ে ন্যাস্ত করা হয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলী একটি নিয়মিত স্বাভাবিক ঘটনা। তবে সচেতন মহলের প্রশ্ন,  জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলামের হঠাৎ প্রত্যাহার প্রসঙ্গে। সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ও আস্থাভাজন সকলের প্রিয় মানুষটির এমন সংবাদে যেন খানিকটা ছন্দপতন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কয়েকটি গণমাধ্যম এ বিষয়ে আলোকপাত করেছে বেশ গুরুত্ব সহকারে। সচেতন মহল থেকে এর সাথে কোন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহলের ষড়যন্ত্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগ জোড়ালো হচ্ছে।

বিষয়টি স্পর্শকাতর ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য বিব্রতকরও বটে। তারপরও বিষয়টির অবতারনা করছি প্রাসঙ্গিক বিবেচনাবোধ থেকেই। জেলার একজন নাগরিক হিসেবে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম এঁর সেবা গ্রহণ ও তাঁর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ আমার বেশ ক’বার হয়েছে। তাঁর প্রশাসনিক দায়িত্ববোধ, জনসম্পৃক্ততা, নীতিবোধ, সততা ও নৈতিকতা আর সিদ্ধান্ত গ্রহণে বস্তুনিষ্ঠতার জন্য কাউকে কখনো আহত করেছে এমন নজির বিরল।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পেশাজীবী সংগঠন, সংবাদকর্মীসহ সকলের অভিভাবকতুল্য দায়িত্ববোধের জন্য তিনি সর্বসময় প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর হঠাৎ প্রত্যাহার সঙ্গত কারণেই সর্বমহলে আলোচনার ডাল-পালা ছড়াচ্ছে।
যে অভিযোগ লোকমুখে ছড়িয়েছে একে নেহায়েৎ ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অনেকে মনে করেন। পূর্ববর্তী কর্মস্থলেও অভিযোগকারীর উদ্ভট আচরণের এমন অনাহুত ঘটনার নজির বেশ আলোচিত।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম এঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গত বছর জানুয়ারী মাসের। তাঁর সহ-কর্মীদের কাছ থেকেও এমন অভিযোগের কোন প্রমাণ মিলেনা। যার জন্যই ষড়যন্ত্রের অভিযোগটি বেশ জোড়ালো। জনপ্রশাসন সচিবের বরাতে জানা যায় সার্বিক বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম এঁর বেশকজন সহকর্মী বিশেষ করে নারী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে উল্লেখিত অনভিপ্রেত অভিযোগের বিষয়ে বিস্ময় ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাদের ভাষ্যমতে জেলা প্রশাসককে একজন রুচিশীল উন্নত আচরণের উর্দ্ধতন কর্মকতা হিসেবে সম্মান ও তাঁর পেশাগত আচরণ অনুকরণীয় মনে করেন। তারা প্রশাসনকে এমন বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবী জানান।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম ছিলেন জেলার হাওড়, পাহাড়, খাল, নদী, সড়কসহ অবকাঠামো উন্নয়নে সচেষ্ট নিবেদিতপ্রাণ। বিশেষ দৃষ্টি দিতেন নেত্রকোণাকে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে। নিরলস পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন স্থানীয় কৃষ্টি-কালচার উন্নয়নে। প্রতিটি পেশার মানুষের কর্মতৎপরতার উৎকর্ষতা সাধনে সহায়তা দিয়েছেন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। নেত্রকোণার আইটি সেক্টরকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এই করোনার দু:সময়েও তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের হিতৈশী বন্ধু। তাঁর সম্পাদিত “নেত্রকোণার সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস” গ্রন্থখানি এক নতুন সংযোজন। তিনি ছিলেন প্রকৃতপক্ষেই একজন জনবান্ধব মাঠ প্রশাসনের মূর্ত প্রতীক।

প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তার কর্মস্থল পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। মঈনউল ইসলামও তাঁর যোগ্যতা, মেধা আর দক্ষতার জন্য নতুন দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত হবেন। অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে আলো ছড়াবেন। জাতীর কল্যাণে দৃপ্ত হবে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ এমনটাই সর্বমহলের প্রত্যশা। শুধু নেত্রকোণাবাসীর অপ্রাপ্তি থেকে যাবে স্বল্পকালীন দায়িত্ব পালনে তার কথা ও আচরণে পরিমিতবোধ, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করনে বস্তুনিষ্ঠ ও অবিচল পদক্ষেপ আর জেলার কল্যাণে তার বাস্তব ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের জন্য। আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর শুভকামনা অটুট থাকবে এমন জনবান্ধব একজন কর্মকর্তার জন্য বহুদিন।

সকল ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে দৃঢ় পদক্ষেপে আপনার মত করেই এগিয়ে যান সমুখের বাকিটা পথ। মর্যাদাপূর্ণ সাফল্য আপনাকে আলিঙ্গন করুক বারে বার। একজন শ্রদ্ধাভাজন মঈনউল ইসলাম এঁর জন্য নিরন্তর শুভকামনা।

লেখক : সৈয়দ আরিফুজ্জামান,সভাপতি, পূর্বধলা প্রেসক্লাব,সম্পাদক, আজকের আরবান

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।