নেত্রকোণায় ভেসে গেছে প্রায় ১১ কোটি টাকার মাছ

স্টাফ রির্পোটার: গত রোববার রাত থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে তৃতীয়দফা বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নেত্রকোণায়। এরই মধ্যে সোমবার রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা পযন্ত জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ওই সব এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। খালিয়াজুরীর বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ১১৫ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ধনু ও উব্দাখালী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার দুর্গাপুরে বুধবার সকালে ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
গত এক সপ্তাহ আগে জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে প্রায় সাতটি উপজেলাতে দ্বিতীয়বার বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তখন অন্তত ৯৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ ঠাঁই নেয়। এরমধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কলমাকান্দা উপজেলায়।
স্থানীয় বাসিন্দা, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত জুনের শেষ দিকে অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, খালিয়াজুরি, মদন, মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টা উপজেলার আংশিক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এর দুই সপ্তাহ ব্যবধানে আবার বন্যা হয়। তখন প্রায় ৯৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় প্রায় ৭০ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী হয়। বন্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি বাঁধ, উঁচু স্থানসহ সড়কে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। টানা পাঁচ দিন ধরে কলমাকান্দার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে। কলমাকান্দায় উব্দাখালি নদীর কলমাকন্দা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার সর্বোচ ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। ওই সময়ের বন্যায় একহাজার ২০০ কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি আসে। এ ছাড়া প্রায় তিনশত একর আমন বীজতলা ও বিভিন্ন ধরনের সবজি খেত নষ্ট হয়। মৎস সম্পদেরও বিরাট ক্ষতি হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুল কবীর জানিয়েছিলেন, অন্তত ৩ হাজার ৩৬২ জন খামারির ৩ হাজার ৬৭৩টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। এতে ৯৩৯ দশমিক ৭৪ মেকট্রিক টন মাছ ও ১৯২ দশমিক ১৮ মেকট্রিক টন পোনার ক্ষতি হয়েছে। মাছ, পোনা ও অবকাঠামোগত ক্ষতিসহ সব মিলিয়ে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি ৯১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। গত মঙ্গলবার থেকে বন্যার পানি কমে তিন দিন পর গত শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়। কিন্তু গত রোববার রাত থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও জেলার কংস, সোমেশ্বরী, উব্দাখালি, ধুনুসহ প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বুধবার বিকেল আড়াইটার দিকে জানান, জেলার সব কটি প্রধান নদ-নদীর পানিই একটু একটু করে বাড়ছে। তবে ধনু ও উব্দখালী ছাড়া অন্যান্য নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে রয়েছে। কলমাকান্দার উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদ সীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৬ দশমিক ৮২ মিটার। দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে বিপদ সীমা ১৫ দশমিক ৮৯ মিটার। সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৬ মিটার। ওই নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপদ সীমা ১৪ দশমিক ২৬ মিটার। সেখানে বর্তমানে প্রবাহিত হচ্ছে ১২ দশমিক ১০ মিটার। কংস নদের জারিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমা ১০ দশমিক ৫৫ মিটার, সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৯ দশমিক ৯৫ মিটার। আর খালিয়াজুরির ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপদ সীমা ৫ দশমিক ৬১মিটার, সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৬ দশমিক ৭৩মিটার মিটার দিয়ে। আক্তারুজ্জামান জানান, আজ মোহনগঞ্জে ২৭ দশমিক ৪ মিলি মিটার, সদর উপজেলায় ১৭.০০ মিলি মিটার, জারিয়ায় ৩০ মিলি মিটার ও দুর্গাপুরে ৫৩ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়।


খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, খালিয়াজুরীতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এরিমধ্যে ৪৫ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ১১৫ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে আবারও কিছু পানি বাড়ছে। তবে বৃষ্টি না হলে হয়তো পানি কমে যেতে পারে। তিনি জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যায় এ পযন্ত ১৬৫ মেকট্রিকটন চাল, তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, জেলায় ৪০০ মেট্রিক টন জিআর, নগদ আট লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য দুই লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য টাকা দুই লাখ টাকা এবং দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।