করোনা সংকটে নেত্রকোণার শান্তু মিয়ার ঘুড়ি বানানোর ব্যতিক্রম উদ্যোগ

বিশেষ প্রতিনিধি: মহামারী করোনা কালীন সময়ে যুব সমাজকে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে এবং আড্ডা থেকে দূরে রাখতে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহন করে সরব আলোচনায় চলে এসেছেন নেত্রকোণার চা বিক্রেতা শান্তু মিয়া (৬০)।
নেত্রকোণা সদর উপজেলার লক্ষীগঞ্জ ইউনিয়নের গদাইকান্দি গ্রামের শান্তু মিয়া একজন চা দোকানদার। লক্ষীগঞ্জ বাজারে তার একটি চায়ের দোকান রয়েছে। তেমন জমি-জমা না থাকায় চা দোকানদারী করেই তিনি সংসার চালান। তার সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে আনন্দ মোহন কলেজে মাস্টার্সে পড়াশুনা করেন। তিনি বলেন, দেশে প্রাণঘাতী করোনার ভাইরাস রোধকল্পে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষনা করে সবকিছু বন্ধ ঘোষনা করে। সেই থেকে আমি সরকারী নির্দেশ মেনে বাজারের চায়ের দোকান বন্ধ করে বাড়ীতে বসে সময় কাটাচ্ছিলাম। টিভিতে দেখলাম দেশের বিভিন্ন স্থানে যুব সমাজ করোনা ভাইরাসে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। আমি বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করলাম যুব সমাজ কেন বেশী করে আক্রান্ত হচ্ছে। দেখতে পেলাম যুব সমাজকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। তারা অপ্রয়োজনে বাড়ী থেকে বের হয়ে বাজারে যাচ্ছে আর বিভিন্ন দোকান পাঠে অযথা আড্ডা দিচ্ছে। এসব কারণে যুব সমাজ বেশী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমি আমার ছেলেকে বাড়ীতে ধরে রাখার জন্য একটি ঘুড়ি বানিয়ে দেই। আমার ছেলেটি সেই ঘুড়ি উড়িয়ে বাড়ীর সামনেই বেশীর ভাগ সময় কাটায়। এই চিন্তা থেকেই আমি যুব সমাজকে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরণের ঘুড়ি বানিয়ে দিয়ে নির্মল চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করি। অনেকেই সেইসব ঘুড়িতে মোবাইলের ব্যাটারী দিয়ে আলোকসজ্জ্বার ব্যবস্থা করেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে আমার ইউনিয়নের পাশাপাশি জেলা শহর থেকে প্রতিদিন ১২ বছরের কিশোর থেকে ৪০ বছর বয়সের অসংখ্য লোকজন আমার কাছে ঘুড়ি বানাতে আসে। আমি হাসি মুখে তাদের আবদার রক্ষা করে চলেছি। আমার এলাকার যুব সমাজ বিভিন্ন ধরণের ঘুড়ি পেয়ে অত্যন্ত আন্দিত। তারা এখন আর বাজারে গিয়ে অযথা আড্ডা দেয় না। তারা দিনের বেলায় এমনকি সন্ধ্যার পরও রং-বেরংয়ের ঘুড়ি উড়িয়ে সময় কাটায়। সন্ধ্যার পর আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় অসংখ্য তারা মাটির কাছাকাছি চলে এসেছে। তিনি বলেন, আমি দিনে তিন থেকে চারটি ঘুড়ি বানাতে পাড়ি। করোনার লকডাউনের সময় লক্ষীগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় তিন শত যুবককে বিনামূল্যে ঘুড়ি বানিয়ে দিয়েছি। এতে একদিকে আবহমান গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐহিত্য যেমন ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে অপরদিকে যুব সমাজকে অপ্রয়োজনে বাজারে গমন ও আড্ডাবিমুখ করা যাচ্ছে।
তার ছেলে মোবারক হোসেন বলেন, আমার বাবা একজন সহজ সরল মানুষ। মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই তিনি বিনামূল্যে সবাইকে ঘুড়ি বানিয়ে আনন্দ পান। আমার বাবার এ ধরণের ব্যাতিক্রমী উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।