নেত্রকোণায় অভিনব কায়দায় ট্রাক বোঝাই ধান চুরি : গ্রেফতার ৩, ট্রাকসহ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার

বিশেষ প্রতিনিধি: বিশেষ কায়দায় ধান বোঝাই ট্রাক উধাও হয়ে যাওয়ার তিনদিন পর ট্রাকসহ ধান বিক্রির টাকা উদ্ধার করেছে নেত্রকোণা জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মসাতকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। শনিবার বিকেলে এক প্রেসব্রিফিং এ জেলা পুলিশ সুপার জনাব আকবর আলী মুন্সি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) এস এম আশরাফুল আলম জানান, বারহাট্টা সদরের জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে ২শ বস্তা (৩৭৫ মণ) ধান নিয়ে গত ১৭ তারিখ বিকালে টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ঢাকা মেট্রো-ট-১৪-৫৯৭৮ নাম্বারের একটি ট্রাক। ট্রাকে বোঝাইকৃত ধানের মূল্য প্রায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৮৭৫ টাকা। পরদিন সকালের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলায় গীতা অটো রাইছ মিলে পৌঁছার কথা থাকলেও ধানসহ ট্রাকটি উধাও হয়ে যায়। এ ঘটনায় মৃত লাল হোসেনের ছেলে মোঃ শফিকুল ইসলাম বারহাট্টা থানায় একটি জিডি করেন। উক্ত জিডির প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সির নিদের্শে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার) এস এম আশরাফুল আলম ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেন।
এদিকে চুরি যাওয়া ধানের মালিক মোবাইল নাম্বারে ট্রাকের ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায় ট্রাকের ইঞ্জিনে সমস্যা পৌঁছাতে আরো দেরী হবে। পরদিন আবারো ড্রাইভারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পায়।

পরবর্তিতে এস এম আশরাফুল আলম এর নেতৃত্বে বারহাট্টা থানার একটি টিম ধানের চালানে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তদন্তে নামে এবং চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতার করতে গাজীপুর জেলায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে হোতাপারা থেকে ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সংশ্লিষ্টতা না থাকায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে তারাও ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপার ছিল এবং গত ১৫ তারিখ সেহেরির সময় নেত্রকোণার ঠাকুরাকোণা নামক জায়গায় তদের একটি মোবাইল চুরি হয় বলে জানায়।

পরবর্তিতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সদর থানার ঠাকুরাকোণা জায়গা হতে প্রথমে রতন মিয়া (৩৫) নামের একজনকে আটক করা হয় এবং থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে চুরির ঘটনাটি স্বীকার করে এবং তার হেফাজত থেকে পূর্বে উল্লিখিত মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তাকে নিয়ে মধ্যপাড়া শ্রীপুর গাজীপুর এর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চুরি কাজে ব্যবহৃত ট্রাক, ধান বিক্রির ৫০ হাজার টাকা সহ ট্রাকের মালিক রফিক ও ট্রাক ড্রাইভার শামিমকে গ্রেফতার করা হয়।
থানায় এনে ব্যাপক  জিজ্ঞাসাবাদে তারা চুরির ঘটনাটি স্বীকার করে এবং তারা জানায় পূর্ব থেকে পরিকল্পনা করে যে এক ট্রাক ধান চুরি করে আত্মসাৎ করবে। এর অংশ হিসাবে পূর্বে উল্লিখিত মোবাইলটি অন্য এক ড্রাইভারের গাড়ি থেকে শামিম চুরি করে। অত:পর গাড়ি নাম্বারপ্লেট পরিবর্তন করে একটি ভূয়া নাম্বারপ্লেট গাড়িতে লাগায়। পরবর্তীতে বারহাট্টায় গিয়ে চুক্তি অনুযায়ী ধান লোডের সময় চালানে ঐ চুরি করা মোবাইল উল্লেখ করে, ভূয়া গাড়ির নম্বর দিয়ে বারহাট্টা থেকে ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
ওইদিন সন্ধ্যায় ট্রাকটি ঠাকুরাকোণা বাজারে পৌঁছলে রতন পূর্বপরিকল্পনানুযয়ী ধান বোঝাই ট্রাকটি টাঙ্গাইলের দিকে না দিয়ে ভোর ৪ টার দিকে বারহাট্টা থানার নৈহাটি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে রতন ৫৭ বস্তা ধান বিক্রয় করে দেয়। বাকী ধান ভর্তি ট্রাক শ্যামগঞ্জ বাজারে ১০ বস্তা মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স নামক দোকানে বিক্রি করে। অবশিষ্ট ধান মোঃ রফিক ও মোঃ শামীম গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার জৈনা বাজার এলাকায় যায় রফিকের বাড়িতে ১০ বস্তা ধান নামিয়ে রাখে। ট্রাকের বাকি ১২৩ বস্তা ধান রফিক ও শামীম ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায় বিক্রয় করে।
গ্রেফতারের সময় তল্লাসী ও ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আসামী রফিক এর নিকট হতে চোরাই ধান বিক্রির নগদ ৫০,০০০/-টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
পরবর্তিতে উক্ত তিন আসামিই আদালতে বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্যাটের কাছে স্বীকারোক্তি জবানবন্দী প্রদান করে।

প্রেসব্রিফিং এ পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী আরো বলেন, এখন বোর মৌসুম শেষের দিকে। প্রতিদিনই প্রচুর ট্রাক ধান বোঝাই করে নেত্রকোণা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরিচিত ড্রাইভারের মাধ্যমে ধান পরিবহনের জন্য পরামর্শ দেন। তা সম্ভব না হলে ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফটো সংরক্ষণ রাখতে বলেন।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।