হাওরাঞ্চলে ৯৫ ভাগ ধান কাটা শেষ : ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা

স্টাফ রির্পোটার: নেত্রকোণার হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পযায়ে। শনিবার পর্যন্ত জেলার বিভিন্ হাওর এলাকায় ৯৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি বা আগাম বন্যা হলে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা কমে গেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাওর পাড়ের চাষিরা।
স্থানীয় কৃষক ও জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। এর মধ্যে জেলার ছোটবড় ১৩৪টি হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে অর্ধেকের মতো জমি রয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ওই সব জমির পাঁকা বোরো ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকরা। এর মধ্যে আগাম বন্যা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পাউবো পৃথকভাবে বিভিন্ন উপায়ে কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। করোনার প্রভাবে প্রথম দিকে ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিলেও পরে তা কেটে যায়। জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হওরে প্রায় ১২ হাজারের মতো শ্রমিক বর্তমানে ধান কাটছেন। এ ছাড়া ৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা হচ্ছে। ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক প্রতিদিন যে পরিমাণ জমির ধান কাটতে পারেন, একটি মেশিনেই তা সম্ভব হচ্ছে। ওই মেশিনে ১০ শতক জমির ধান কাটতে কৃষকের ৫০০ টাকা দিতে হয়। শনিবার পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে প্রায় ৯৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামী তিন চার দিনের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে। এর পর শুধু উঁচু জমির ধান থাকবে। এখন বৃষ্টি বা বন্যা হলে তেমন কোন প্রভাব পড়ে না বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এর আগে তারা খুবই আতঙ্কে ছিলেন। কারণ করোনায় একদিকে ধান কাটার শ্রমিক সংকট যেমন ছিল অন্য দিকে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় হাওরে ফসল রক্ষায় বাঁধের কাজ শেষ হয়নি।
এবার ৯২ দশমিক ১০৯ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের জন্য পাউবো ১১৩টি পিআইসির মাধ্যমে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ৮১ হাজার টাকা অনুমোদন দেয়। কিন্তু বিভাগটি এই কাজ সঠিক সময়ে শুরু ও শেষ করতে ব্যর্থ হয়। করোনার অজুহাতে বর্তমানে কাজ শেষ না করে এভাবেই ফেলে রাখা হয়। ফলে বন্যা হলে ফসল হারাতে হতো। স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, ফসল রক্ষার বাঁধগুলোর পিআইসি গঠনের কাজটি মূলত স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবোর লোকজন করে থাকেন। কোন রকম মাইকিং বা গণশুনানি ছাড়াই তারা তাদের পছন্দ মতো পিআইসি কমিটি করে যেন তেন কাজ করে শেষে টাকার ভাগ বাটোয়া ছাড়া আর কিছুই হয় না। ওই এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক আরো জানান, করোনার প্রভাবে এবার স্থানীয় বাজারগুলোতে মহাজনরা ধান কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সরকারিভাবে দ্রুত ধান ক্রয় শুরু না হলে প্রান্তিক কৃষকরা স্থানীয় হাট-বাজারে ও মহাজনদের কাছে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। এলাকার বাজারে এখন প্রতি মণ ধান সর্ব্বোচ ৬০০ টাকা থেকে ৬৬৫ টাকা। এই দরে ধান বিক্রি করলে কৃষকের লোকসান হবে। কৃষকদের দাবি, সরকার যদি ধানের বরাদ্দ বাড়িয়ে এখন পুরোদমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে পারত, তাহলে ধানের বাজারে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ত।
খালিয়াজুরির পুরানহাটি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, হাওরে এখন ধানকাটা প্রায় শেষের দিকে। এখন কৃষকের কাছে ধান আছে। কিন্তু আর কয়েক দিন পর এই ধান তাদের হাতে থাকবে না। ধান চলে যাবে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের হাতে। কারণ প্রান্তিক কৃষকেরা মহাজনসহ বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে ফসল ফলান। এখন ঋণ পরিশোধের জন্য ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। তিনি আরো জানান, সরকারি দাম আর স্থানীয় বাজারের দামের মধ্যে অনেক তফাত। সরকারি ক্রয়ের পরিমাণ আরও না বাড়ালে বাজারের এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন বলেন, ‘জেলায় ১০টি উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহের কথা রয়েছে। এ ছাড়া ৩৬ হাজার ৫২৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করার কথা। ধান প্রতিকেজি ২৬ টাকা, সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা ও আতপ চাল ৩৫ টাকা কেজি। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পযন্ত চলবে। এরমধ্যে মোহনগঞ্জে ধান সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে অন্য উপজেলাগুলোর তালিকা পেলে দ্রুত ধান সংগ্রহ অভিযান করা হবে।


এ ব্যাপারে জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান জানান, ‘হাওরাঞ্চলের ধান ৯০ ভাগ কাটা শেষ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ওই সব এলাকায় শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। এখন আর বন্যার ঝুঁকি নেই।’
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, এবছর বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা ঘরে ফসল তুলতে পেরেছে। কৃষিবিভাগকে বলা হয়েছে দ্রুত কৃষকদের তালিকা করে জমা দেয়ার জন্য। তালিকা পেলে দ্রুত ধান কেনা শুরু হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।