শ্রমিক সংকট,বন্যার ঝুঁকিতে হাওরের আড়াই লক্ষ মেট্রিকটন বোরো ধান

স্টাফ রির্পোটার: নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলসহ নিন্মাঞ্চলে পাকা বোরো ধান মাঠ থেকে কেটে বাড়িতে আনতে কৃষকদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। ২০ এপ্রিলের মধ্যে প্রবল বৃষ্টিপাতসহ উজান থেকে নেমে আসা পানি বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে এ আশঙ্কায় কৃষকদের দ্রæত ধান কাটার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলার কৃষি বিভাগ। করোনা মহামারীর কারণে একদিকে শ্রমিক সংকট অন্যদিকে আগাম বন্যা হলে হাওরের প্রায় আড়াই লক্ষ মেট্রিকটন উঠতি বোরো ফসল হুমকিতে পড়বে।
জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পাউবো পৃথকভাবে বিভিন্ন উপায়ে এই নির্দেশ দিচ্ছেন। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে মসজিদ মন্দিরগুলো থেকেও মাইকিং করা হচ্ছে।
প্রশাসনের জরুরী বার্তায় বলা হয়েছে, ‘আগামী ১৭-২০ এপ্রিল নেত্রকোণা এবং এর উজানে (ভারতে) প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে মর্মে আবহাওয়ার প‚র্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির প্রভাবে জেলার নদ-নদী, হাওরসহ হাওরাঞ্চলে পানি বাড়বে। ফলে, হাওরে সোনালি ধান ঘরে তোলার জন্য জরুরি কাযক্রম গ্রহণ করা আবশ্যক। উক্ত প্রেক্ষাপটে চাষিদের মধ্যে সচেতনতাম‚লক ও অবহিতকরণ প্রচার করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, পযাপ্ত শ্রমিক নিয়োগ এবং মেসিন ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের জরুরি ভিত্তিতে তাদের জমিতে থাকা পাকা ধান কাটার অনুরোধ করা যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, জেলা পউবো ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নেত্রকোনার ১০ উপজেলার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে পাকা বোরো ধান রয়েছে। জেলায় ছোট-বড় ১৩৪টি হাওরে প্রায় সব হাওরে খেতের বোরো ধান পেঁকে গেছে। অনুক‚ল পরিবেশ থাকায় এবার ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রæত ধান কেটে মাঠ থেকে বাড়িতে আনতে কৃষকদের প্রতি আহŸান জানানো হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে প্রবল বৃষ্টিপাতসহ উজান থেকে নেমে আসা পানি বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় কৃষকদের দ্রæত ধান কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে আসা করোনা দুর্যোগ এখন কৃষকদের চরম উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা সংকটের কারণে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। হাওরের বেশ কয়েকজন কৃষকরা জানান, হাওরের মানুষদের বোর ফসলই একমাত্র সম্বল। এই ফসলের ওপরই নির্ভর করে সারা বছরের সংসার খরচ ধরে চিকিৎসা, সন্তানদের লেখা-পড়ার, আচার-অনুষ্টান সব কিছু।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, হাওরভুক্ত সাতটি উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ফসল রক্ষায় ৩৯০ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে। এই বাঁধগুলোর মধ্যে ৯২ দশমিক ১০৯ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের জন্য এ বছর পাউবো ১১৩টি পিআইসির মাধ্যমে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ৮১ হাজার টাকা অনুমোদন দেয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এই কাজ সঠিক সময়ে শুরু ও শেষ করতে পারেনি। এ ছাড়া করোনার প্রভাব পড়লে তরিগরি করে কিছু মাটি কেটে কাজ রেখে দেওয়া হয়। কাজ মজবুত ও শেষ না হওয়ায় বৃষ্টি শুরু হলে বন্যায় ফসলহানি ঘটতে পারে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন। তবে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের দাবি, ‘মাটি কাটারকাজ দেরিতে শুরু হলেও সব বাঁধের কাজই প্রায় শেষ হয়েছে। হয়তো কমপ্রেসার বা ঘাস লাগালো সম্ভব হয়নি। আর কয়েক দিনের মধ্যে দ্রæত ফসল কাটলে আশা করা যায় বন্যায় ফসলহানি ঘটবে না। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের দ্রæত ধান কাটতে অনুরোধ জানিয়েছি।’


খালিয়াজুরির চাকুয়া গ্রামের কৃষক শাহীন তালুদার ও মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর গ্রামের কৃষক কাজল চৌধুরী বলেন, ‘এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক সংকটে ধান কাটা যাচ্ছে না। দ্রæত ফসল কাটতে না পারলে বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, সরকারিভাবে ধান কাটার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিক না পেলে ধান কাটা হবে কীভাবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান জানান,‘জেলার হাওরাঞ্চলে প্রায় চল্লিশ হাজার হেক্টর জমিতে এবছর প্রায় আড়াই লক্ষ মেট্রিকটন উঠতি বোরোর ফসল মাঠে পাকা রয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ হার্ভেস্টার দিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকবে।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান কাটা-মাড়াইয়ের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জেলায় নতুন পরাতন মিলিয়ে প্রায় একশত চব্বিশটি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা চলছে। এ ছাড়া হাওরে ছয় সহস্রাধিক ধান কাটার শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। ওই শ্রমিকদেরকে সামাজিক দ‚রত্ব বজায় রেখে কাজ করার পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি জানান,’যে ভাবে ধান কাটা চলছে, আশা করা যাচ্ছে আর এক সপ্তাহের মধ্যেই সব হাওরের ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।