করোনা আতংকে রোগীশূন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল

স্টাফ রির্পোটার: করোনা আতংকে রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে একশো শয্যার নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল। স্বাভাবিক ভাবে প্রতিদিন হাসপাতালে চার থেকে পাঁচশ রোগীর সমাগম থাকলেও বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগী পাওয়া গেছে মাত্র আট জন। এরমধ্যে গাইনী ওয়ার্ডে ছয়জন। আর পুরুষ ওয়ার্ডে দুই জন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় আড়াই শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। বুধবার রাত বারোটা থেকে বৃহষ্পতিবার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালের আউট ডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন মাত্র বাহাত্তর জন রোগী। অন্যান্য সময় চার থেকে পাঁচ শতাধিক রোগী আউটডোরে সেবা নিয়ে থাকেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে শহরের জয়নগর এলাকায় ৫০শষ্যা বিশিষ্ট্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। গত নভেম্বরে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও চিকিৎসক সংকটে চরম ভোগান্তিতে ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালটিতে ৪২ জন মঞ্জুরীকৃত ডাক্তারের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৭ জন। এরমধ্যে সদ্য বিসিএসপ্রাপ্ত অনভিজ্ঞ রয়েছেন ৫ জন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ডেপুটেশনে নিয়ে আসা হয়েছে আরো ৯জন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মধ্যে রয়েছে একজন গাইনী আর একজন সার্জারী। নেই কোন শিশু বিশেষজ্ঞ ও ডেন্টালসার্জন।
হাসপাতালটিতে সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী), সিনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানাসথেসিয়া), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক) ডাক্তারের ১টি করে পদ মঞ্জুরী থাকলেও পদগুলোতে কোন চিকিৎসক নেই। এছাড়াও জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি/ইমেজিং) চিকিৎসকের ১টি করে পদ মঞ্জুরী থাকলেও পদগুলোতে কোন চিকিৎসক নেই। সহকারী সার্জন ৮টি পদের মধ্যে ৮টিই শূণ্য। ৭০জন সেবিকার পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৬৬ জন। পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদও ১টি করে শূণ্য রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ৩৮টি পদের মধ্যে ১৯টিই শূণ্য রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সেবিকা জানান, ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোন ইনডোর চিকিৎসক নেই। ভর্তিকৃত রোগীর চিকিৎসা এবং দেখভাল করে থাকেন দায়িত্বরত সেবিকারাই। প্রতিদিন সকাল বেলা একজন চিকিৎসক হাসপাতালে রাউন্ড দিয়ে থাকেন। পালাক্রমে ৩ জন ইর্মাজেন্সি মেডিকেল চিকিৎসক হাসপাতালে দৈনিক প্রায় ৫’শতাধিক আউটডোর রোগী দেখে থাকেন। বিশেষ প্রয়োজনে তাদেরকে ডেকে আনা হয়। করোনার আতংকে অনেক রোগীই হাসপাতাল ছাড়ছেন।
পুরুষ ওয়ার্ডের বি-২২ নং বেডে ভর্তি হয়েছিলেন নয়ন শীল। ভর্তি পর পরই তাকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। নয়নের ভাই রাজন শীল ও মা ময়না রানী শীল বলেন, “নয়নের মাথা ব্যাথা ও বমি এ রোগ দীর্ঘ দিনের। দারিদ্রতার কারণে নয়নের ভালো চিকিৎসা করাতে পারিনা। সকালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি তারা এখন বলছে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।”

গাইনী ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকা স্মৃতি বেগম জানান, “পঁচিশ বছর চাকুরী জীবনে এত কম রোগী জীবনেও দেখিনি। রোগীরা করোনা আতংকে হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছে। আমরা কোথাও যেতে পারবো না। আমদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী দেয়া হচ্ছে না।”
নেত্রকোণা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ তাজুল ইসলাম  জানান, “চিকিৎসক ও নার্সদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদা দিয়েছিলাম তা পেয়েছি। আমাদের যে পরিমান চিকিৎসক আছে তা দিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগী এখনো ভর্তি হয়নি। জেলার দশ উপজেলার ১০০ শয্যার আইসুলেশন ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে আমরা মাইকিংসহ বিভিন্ন ধরণের লিফলেট বিতরণ করছি।”

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।