গলায় রসি বেঁধে নিজের প্রতিবন্ধি সন্তানকে টেনে টেনে ভিক্ষা করেন নেত্রকোণার দুর্গাপুরের এক মা

স্টাফ রির্পোটার: গলায় রসি বেঁধে পশুর মতো নিজের প্রতিবন্ধি সন্তানকে টেনে টেনে ভিক্ষা করেন এক মা। বসত করেন অন্যজনের বাড়ির বারান্দার একটি ছোপড়া ঘরে। এভাবেই চলছে বছরের পর পর ধরে। সমাজের চোখে বিষয়টি দৃষ্টি কটু হলেও সাহায্যের হাত বাড়াতে কেউই এগিয়ে আসেননি। প্রতিদিন এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে ছুটে দিনাতিপাত করলেও জীবন সায়াহ্নে এসে ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত মা। জীবনের পরন্ত বেলায় ছেলের চিকিৎসা আর প্রতিবন্ধি ছেলের মাথা গুজার ঠাঁই চান তিনি।
নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে, মানুষের দোয়ারে দোয়ারে ভিক্ষা করে চললেও এই হতভাগা মা ছেলের চিকিৎসা আর মাথা গুজার একটু জায়গার জন্য করছেন করুণ আকুতি। নিজের সন্তানের গলায় পশুর মতো রসি বেঁেধ টেনে টেনে ভিক্ষা করেন প্রতিবন্ধি জাকিরের মা। প্রতিদিন এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে ছুটে চলেন বেঁচে থাকার তাগিদে। বিষয়টি দেখে অনেকেরই খারাপ লাগে। সহায় সম্বলহীন বিধমা মায়ের প্রতিবন্ধি সন্তান জাকির হোসেন। জন্মের পর থেকেই শ্রবণ ও বুদ্ধিপ্রতিন্ধি হয়ে জন্ম নেয় জাকির। জন্মের কিছুদিন পর জাকির হারায় দরিদ্র বাবাকেও। এরপর থেকেই একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মা ঘুরেন জীবনের তাগিদে।
নেত্রকোণার দুর্গাপুর পৌরসভার শৈলাডহর গ্রামের প্রতিবন্ধী জাকিরের মা জামেনা খাতুন জানান, “জন্মের পর এমন শরীল নিয়ে আইচে আমার বাবা। চিকিৎসা করাইতে পারিনাই।শরিল আর যায় না, বান্দিয়া টাইনে টাইনে ভিক্ষা করি। মিললে খাই, নাইলে নাই। খাওন না পাইলে আমারে মাইর দেয়,কামরায়। মাঝে মাঝে ছুট্টেয়া যায়গা। মানুষে পাগল কইয়া ধইয়া মারধর করে। আমি মরলে কি অইবো।কব্বরের জাগা নাই। এর কিতা অইবো ? কেউ দেকে না।”
ভিক্ষুক মা আর প্রতিবন্ধী সন্তানের সাহায্যে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার দাবী করেন স্থানীয়রাও। প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসায় সবাইকে এগিয়ে আসার দাবী তাদের।


পৌরসভার শৈলাডহর গ্রামের প্রতিবেশি বিলকিস বেগম, হালিমা বেগম ও বাকের আলম বলেন, “বাড়িতে বেঁধে রেখে গেলে, দড়ি ছিঁড়ে চলে যায়। পথে ঘাটে মানুষে মারধর করে। জাকিরের মা এভাবে দড়িতে বেঁধে ভিক্ষা করলে সমাজের চোখে খুব খারাপ লাগে। পশুর মতো মানুষকে বেঁধে নিয়ে নিয়ে ঘুরে। আমরা সাধ্যমত সাহায্য করি। ঘর দোর নাই। আপন কেউ নাই। একজনের ঘরের চোপড়া একটি বারান্দায় থাকে। রোদ বৃষ্টিতে ভিজে। খুব খারাপ লাগে। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে অসহায় মা ও প্রতিবন্ধি ছেলের একটা ব্যবস্থা হতো।”
দুর্গাপুর উপজেলার দক্ষিণ ভবানিপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর মাহমুদ বলেন, “এই ছেলেটা ও তার মাকে প্রায়ই দুর্গাপুরে দেখা যায়। বিষয়টা খুবই অমানবিক। একটা মানুষকে গলায় রসি দিয়ে ঘুরানো এটা খুব অমানবিক একটা কাজ। অসহায় এই মায়ের পাশে বিত্তবান এবং সরকারের দাঁড়ানো উচিত।তাহলেই হয়তো এই অমানবিক ঘটনা থেকে মা ছেলে মুক্তি পাবে।”
দুর্গাপুর সার্কেলের এএসপি মাহমুদা শারমিন নেলী বলেন,“ বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টা খুবই অমানবিক। এটা আসলেই অমানিক একটা ঘটনা। আমরা সাধ্যমত এই অসহায় মা-ছেলের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো। এই সমাজে বিত্তবানরা হয়তো ভাবছেন এটা তার বোঝা। যে বয়সে সে তার মায়ের দায়িত্ব নেয়ার কথা সেই সময়ে মাকে তার দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে। সবাই এগিয়ে এলে মায়ের এই দুদর্শা থেকে লাঘব হবে।
দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম বলেন, জাকির হোসেনকে প্রতিবন্ধি ভাতা দেয়া হচ্ছে। আমি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য কিছুটা সাহায্য করেছি। সে পৌরসভায় বাস করাতে একটু সমস্যা হচ্ছে। আমরা তার জন্য এবং তার মায়ের জন্য সরকারী সহযোগীতার চেষ্টা করবো।
গলায় রসি বেঁধে পশুর মতো নিজের প্রতিবন্ধি সন্তানকে টানার মতো সামাজিক অসংগতি দূূর করতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার দাবী স্থানীয়দের।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।