বারহাট্টার রায়পুরে ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে তেরো কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ

বিশেষ প্রতিনিধি: চার দশক ধরে স্থানীয় সাংসদসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বারবার ধর্ণা দিয়েছেন এলাকাবাসী। সবাই রাস্তা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তুকেউ আর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। শেষে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান নিজ উদ্যোগে প্রায় ১৩ কিলোমিটার রাস্তা বানিয়েছেন। রক্ষা করেছেন নির্বাচনের সময় জনগণকে দেয়া নিজের প্রতিশ্রুতি। সরকারী পর্যায়ে সড়ক নির্মাণের দীর্ঘ দিনের দাবী থাকলেও তা পূরণ না হওয়ায় নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যানের নিজস্ব অর্থায়নে নির্বাচিত এলাকার ১৬ ফুট প্রশস্থ ১৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক নির্মাণ করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজু। এ সড়ক নির্মাণে তার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, বারহাট্টা উপজেলার অবহেলিত ইউনিয়ন রায়পুর। ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। ইউনিয়নটিতে ওয়ার্ড রয়েছে ৯টি। ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডে জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। স্বাধীনতা সংগ্রামের পর থেকে ওই ইউনিয়নের কুড়ালদেও, গাইকুড়িবর, মেন্নাগাতি, শ্যাম্পনিবাজারসহ প্রায় পনের থেকে বিশটি গ্রামের লোকজন স্থানীয় ফকিরের বাজার ও বারহাট্রা সদরে যাওয়ার সড়ক ছিল না। গ্রামের আকাঁবাঁকা মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে হত জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে। জনগণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বর্তমান চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজু ওই এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তেলসিন্দুর মাদ্রাসা থেকে কুড়ালদেও গাইকুড়িবর, মেন্নাগাতি থেকে শ্যাম্পনিবাজার এবং তেলসিন্দুর বাজার থেকে ফকিরের বাজার দুধকুড়া রাস্তা পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক নির্মাণ কাজ করেছেন। অন্যদিকে ছিচড়াকান্দা-রত্নপুর-লামাপাড়া এলাকায় ২২ শ মিটার সড়ক নির্মাণ করেছেন।

ওই ইউনিয়নের দুধকুড়া গ্রামের শিক্ষক আব্দুল হাই ও গাইকুড়িবর গ্রামের আবদুর রশিদ ও সিদ্দিকুর রহমান, তিলসিন্দুর গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুস সালাম এবং সিম্পনী বাজারের মাহাবুবুর রহমান জানান, ২২ বছর যাবৎ মাদ্রাসায় চাকুরী করেছি উপজেলা সদর থেকে প্রতিদিন পায়ে হেঁটে মাদ্রাসায় আসতে হয়। চেয়ারম্যান সেই কষ্টের লাঘব করেছেন। তার এই কাজে এলাকাবাসীও সহযোগিতা করেছেন। এই সড়কটি নির্মাণের ফলে ভুক্তভোগি এলাকার মানুষ দুর্দশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

গাইকুড়িবর সিদ্দিকুর রহমান, তিলসিন্দুর গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুস সালাম,সিম্পনী বাজারের মাহাবুবুর রহমান,ছিচড়াকান্দা গ্রামের ফজলুর রহমান ও মজিবুর রহমান ও বালুচড়া গ্রামের শহীদ মাষ্টার জানান, “এতদিন জনপ্রতিনিধিগণ শুধু আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাজু জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নিজস্ব অর্থায়নে এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক মাস যাবৎ দিনরাত কাজ করে সড়কটি নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছেন। সড়কটি নির্মাণ হলে এলাকার কৃষক কৃষিপণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।অসুস্থ হলে জরুরী হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবে। এককথায় মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে এই সড়কের কারণে। আর চেয়ারম্যানও এলাকায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে”

বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজু জানান,“ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সরকারী অনুদানের অপেক্ষা না থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ১৩ কিলোমিটার নতুন সড়কের কাজ শুরু করি। ইতিমধ্যে শতভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ইচ্চাশক্তি আর অদম্য স্পৃহা থাকলে কোন কঠিন কাজ মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে না। তাই আমি জনগনকে সাথে নিয়ে এই জটিল ও কঠিন কাজটি করতে সক্ষম হয়েছি। প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি সহ সকলকে আমার কাজটি দেখার আহ্বান জানাই। তারাও ছোট খাটো কাজ সরকারী অনুদানের প্রতি না থাকিয়ে নিজ উদ্যোগেও করে ফেলতে পারেন।
তিনি আরো জানান, আমার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমি নিজের টাকা এবং নিজের জমি বিক্রি করে নির্বাচনের সময় দেয়া কথা রক্ষা করেছি। এ সড়ক নির্মাণের ফলে এলাকার মানুষের প্রাণের দাবিটি পূরণ হয়েছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।