নেত্রকোণার সরিষা ক্ষেতে হলুদের হাতছানি

বিশেষ প্রতিনিধি: কৃষি প্রধান অঞ্চল হিসেবে দেশে নেত্রকোনার যতেষ্ট নাম রয়েছে। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। ধান উৎপাদনের পাশাপাশি নেত্রকোনায় বিভিন্ন উপজেলায় অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সামান্য পরিচর্যা আর অল্প সার ব্যবহার করে সরিষা চাষে বেশি লাভের আশা করছেন চাষিরা।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, চলতি বছর নেত্রকোনায় ৫ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৪ হাজার সাতশ পনেরো হেক্টর। জেলার সব উপজেলাতেই কমবেশী সরিষার আবাদ হয়েছে। তবে কেন্দুয়া, কলমাকান্দা, মদন, পূর্বধলা ও জেলার হাওরাঞ্চল উপজেলাগুলোতে সর্বাধিক পরিমাণ সরিষার আবাদ হয়েছে। হলুদ সরিষা ফুলের অবারিত সৌন্দর্য এখন লুটোপুটি খাচ্ছে এসব উপজেলার মাঠে মাঠে। শীতের কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চাষিরা সরিষা ক্ষেতের যত্ন নিচ্ছেন চাষীরা। আবহাওয়া অনুকূলে এবং সার বীজ সংকট না থাকায় সরিষা ভাল ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। মাঠের পর মাঠ সরষেক্ষেত প্রকৃতিতে যেন অন্য এক মাত্রা এনে দিয়েছে। এতদিন যে সব আমন জমির ধান কাটার পর জমিতে পতিত থাকত সে সব জমিতে স্বল্প জীবনকালের ধান আগাম কেটে সরিষার আবাদ করা সম্ভব। সামান্য পরিচর্যা আর সার ব্যবহারে ফসল ভালো হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে সরিষার আবাদ। পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন চাষিরা। এক সময় কি ধনী কি গরিব, ভোজ্য তেল বলতেই সরিষার তেল ব্যবহার করত। তখন প্রচুর সরিষার আবাদও হতো। কিন্তু কালক্রমে সয়াবিন তেলের প্রচলন হওয়ায় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্যশস্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরিষার আবাদ মাত্রাতিরিক্ত হারে হ্রাস পেয়েছে। সরিষার জমিগুলো গ্রাস করেছে ধান। তবে স্বল্প জীবনকালের ধান আবাদের প্রচলন আরো বাড়লে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে আবারও সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
নেত্রকোণার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ফসলের মাঠগুলোতে এখন সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে বিরাজ করছে থোকা থোকা হলুদ ফুলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য। সরিষার ফুল আকৃষ্ট করছে মৌমাছিসহ প্রকৃতিপ্রেমীদের। কয়েক দিন পরই সরিষা উঠবে ঘরে। কৃষকরা আরও জানান, সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় আবাদে মনোযোগ দিয়েছে এলাকার কৃষকরা। এছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা ভাল ফলন পাওয়ার আশা করছেন তারা।
পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের সরিষা চাষি বখতার উদ্দিন বলেন, এক একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। মাঠে বেশ ফুল ফুটেছে। আসা করছি ভাল ফলন হবে। গত বছর অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে সরিষার ভাল ফলন পাইনি। কিন্তু এবার আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছি।
বারহাট্টা উপজেলার লামাপাড়া গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষা চাষ ভালো হয়েছে। এ উপজেলার সব কটা ইউনিয়নে এখন হলুদ গালিচায় ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। গাছজুড়ে ফুটে রয়েছে উজ্জ্বল হলুদ ফুল। এ উপজেলার যে সব এলাকায় সরিষার আবাদ হয়েছে সেখানে এখন যেন হলুদ আভায় উদ্ভাসিত। সে যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
নেত্রকোণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর নেত্রকোণার ১০টি উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বারি ১৪ এবং বিনা-৯ ও ১০ জাতের সরিষার চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার ফলে মাঠ পরিদর্শন করে দেখা গেছে মাঠে সরিষা চাষের ফলন খুব আশাব্যঞ্জক। যদিও সরিষার কর্তন এখনও হয়নি। আশা করছি, কৃষকেরা ভাল ফলন পাবেন এবং বোরো ও আমনের মাঝখানে মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে কৃষকেরা লাভবান হবেন। আগামীতে সরিষার চাষ আরো সম্প্রসারিত হবে বলেও আশা করেছেন তিনি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।