ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে ধলাই নদী : দূষিত পানি ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা

বিশেষ প্রতিনিধি: দখল দূষণে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নেত্রকোণার পৌরশহরের ধলাই নদী। দ্ইু যুগ ধরে নদীটি এভাবে পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নদীর দু’পাড়ের কয়েক হাজার পরিবার নদীর দূষিত পানি ব্যবহার করে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পানি সংকটের কারণে বাধ্য হয়েই ময়লাযুক্ত দূষিত পানি ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। তবে পৌরমেয়র বলছেন, নদীটি খননসহ সৌন্দয্য বর্ধনে নেয়া হবে ব্যবস্থা।
ময়লার স্তুপের পাশে দূষিত পানিতে স্থানীয় লোকজন পানির অভাবে দৈনন্দিন কাজ সারছেন স্থানীয়রা। সারছেন কাপড় ধূয়া সহ রান্না বান্নার কাজও। পৌর শহরের বুক ছিড়ে বয়ে চলা ধলাই নদীর পানি হয়ে গেছে দূষিত হয়ে আছে দুই যুগ। ধলাই নদীর প্রায় দুই কিলোমিটার স্থানের দু’পাড়ে এভাবেই ময়লা আর কুছুরীপানা পঁচে নষ্ট হচ্ছে আশপাশের পরিবেশও।
জেলা শহরের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ‘ধলাই’ নদী। কংস থেকে এর উৎপত্তি। স্থানীয় ভাষায় ‘ধলা’ শব্দটি ‘স্বচ্ছ’ বা ‘সাদা’ শব্দের প্রতিশব্দ। প্রচলিত আছে, ধলাইয়ের পানি এতই স্বচ্ছ ও টলটলে ছিলÑযা রোদের আলোতে ‘সাদা’ মনে হতো। আর এ কারণেই নদীটির নাম হয়েছিল ‘ধলাই’। এককালের বেগবতী ধলাইয়ের কোন কোন অংশে এখন পায়ের পাতাও ভিজে না।
এরকম নেত্রকোণার ৩৯টি নদ-নদী হারিয়ে গেছে। পরিণত হয়েছে মরা খালে। হারিয়ে যাওয়া এই নদ-নদীগুলো হচ্ছে তেওড়াখালি, ধুপিখালি, লাউয়ারি, সুরিয়া, সাইডুলি, কানাই, কাওনাল, সোনাই, বাউরি, ছিলা, তুষাই, বিষনাই, বেতাই, পাতকুড়া, সুতি, বারুনি, ছেলা, বলী, নয়া নদী, পিয়াইন, নিতাই, বাঁকহারা, কালিহর, বল, বালিয়া, গুনাই, কানসা, রাজেশ্বরী, পাটেশ্বরী, ফুলেশ্বরী, কালিয়ারা, ধোপকলা, জলকান্দি, জল শিমূলকান্দি, বালিয়া, মঙ্গেশ্বরী, রাজাখালী, বৌলাই ও কাউনাই নদী। মানচিত্রে থাকলেও এর অনেকগুলোর এখন আর কোন অস্তিত্বই নেই। কোন কোনটি টিকে আছে একাবারেই সরু খাল বা নালার আকারে।
নেত্রকোণা শহরের পূর্ব সাতপাই এলাকার বাসিন্দা মিসবাহ উদ্দিন খান আসাদ বলেন, ধলাই নদীটি দুই যুগ ধরে জমে থাকা কুছুরী পানা আর আশপাশ থেকে ফেলা ময়লায় নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। নদীর দুই পাড়ে টয়লেট নিমাণ করে তা নদীতে দেয়া হয়েছে। অন্যকোনো পানির ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে দূষিত পানি ব্যবহারে স্থানীয়দের হচ্ছে নানান বিভিন্ন চর্ম রোগও। এছাড়া নদীটির দুই পাড়েই দখল করছে দখলদাররা।


নেত্রকোণা শহরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন খান বলেন,“দীর্ঘদিনের পঁচা কচুরীপানার কারণে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। দু’দিকের বান্দিরা ময়লা ফেলে নদীটিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। আবার বাসা-বাড়িতে পানি সংকট থাকায় এই দূষিত পানিই ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। ফলে বিভিন্ন চর্মরোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। নদীটি খনন করে দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে দিলে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পানি সংকটও দূর হবে।”
নেত্রকোণার গবেষক আলী আহমদ খান আইয়ূব জানান, ধলাই নদী প্রায় ৮০ কিলোমিটার। নদীটি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেরার ভুরভুরিয়া বিল থেকে এসে নেত্রকোনা-পূর্বধলার সংযোগ স্থলে মিলেছে। এরপর লাউয়ারী হয়ে মগড়ার সাথে মিলে নেত্রকোনা শহরের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে নদীটির নাম পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত সেতু কালভার্টের কারণে ধলাই নদীর মরে গেছে।
নেত্রকোণা পৌরমেয়র আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম খান বলেন, “নদীটি মরে গেছে। নদীটি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু মহোদয়ের সাথে নদীটি খনন করার ব্যাপারে কথা হয়েছে। দু’পাড়ে ওয়াকওয়ে তৈরির পর লাইটিং করে সৌন্দয্য বর্ধন করা হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।