সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরীর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নেত্রকোণায় স্মরণসভা

বিশেষ প্রতিনিধি: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলা একাডেমী ও ২১ পদক প্রাপ্ত প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক, সাংবাদিক মরহুম খালেকদাদ চৌধুরীর ৩৪তম মৃত্যু-বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি ও খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মরহুম খালেকদাদ চৌধুরীর ছেলে সাংবাদিক হায়দার জাহান চৌধুরী সভাপতিত্বে ও কবি তানভীর জাহান চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান, নেত্রকোণা সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুজ্জামান জুয়েল প্রমুখ।
১৯০৭ সালে খালেকদাদ চৌধুরী নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলার চানগাঁও-এ তার নানার বাড়ীতে জন্মগ্রহন করেন। ১৯২৪ সালে নেত্রকোণার দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং ১৯২৪ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে সুনামের সাথে আইএ পাশ করেন। পরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ইংরেজীতে অনার্সে ভর্তি হন। ১৯২২ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবি বন্ধে আলী মিয়া সম্পাদিত বিকাশ পত্রিকায় তার লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের একটি স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর ১৯৪১ সালে তথ্য অফিসার হিসেবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৪১ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ‘দৈনিক নবযুগ’ পত্রিকার শিশু বিভাগ সম্পাদনা করতেন। সেই সূত্রেই কাজী নজরুল ইসলামের সাথে তার ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৬১ সালে সরকারী চাকুরী ইস্তফা দিয়ে সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। সে সময় নেত্রকোণা থেকে ‘উত্তর আকাশ’ নামে মাসিক সাহিত্য পত্রিকা বের করেন। তার সম্পাদিত বহুল আলোচিত ‘উত্তর আকাশ’ সাহিত্য পত্রিকাকে কেন্দ্র করে সে সময় নেত্রকোণায় গড়ে উঠেছিল কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের এক মিলন মেলা। এই পত্রিকায় সাহিত্য চর্চা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, রফিক আজাদ, জীবন চৌধুরী, শান্তিময় বিশ্বাসসহ অনেক কবি সাহিত্যিক। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি চালু ছিল। কোমলমতি শিশু কিশোরদের বই পড়ার অভ্যাস এবং আলোকিত মানুষ গড়ে তুলার লক্ষ্যে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড় তুলেন নেত্রকোণা সাধারণ গ্রন্থাগার। সেই গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক থাকা কালে ‘সৃজনী’ নামে আরেকটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। তার লেখা ও প্রকাশিত ডজন খানেক বইয়ের মধ্যে ‘রক্তাত্ত অধ্যায়’, ‘একটি আত্মার অপমৃত্যু’, ‘এ মাটি রক্তে রাঙ্গা’, এবং শতাব্দীর দুই দিগন্ত উল্লেখযোগ্য। তিনি বিখ্যাত ‘মরু সাহারা, ‘বাহার-ই-স্তান-ই-গায়েবী’ ও ‘ওরসে কারবালা’, ‘বেদুইনের মেয়ে’ নামের অনুবাধক। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমী ১৯৮৩ সালে তাকে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে এবং ২০১৮ সালে ২১ পদকে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালের ১৬ অক্টোবর এই কৃতি সাহিত্যিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ধক্য জনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। সৃজনশীল সাহিত্য চর্চার বিকাশ এবং কথা সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্যকর্ম নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতেই নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজ ১৪০৩ সাল থেকে পহেলা ফাল্গুন বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসব ও খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে আসছে। ইতিমধ্যে দেশ বরেণ্য অনেক কবি সাহিত্যিকরা এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।