
বিশেষ প্রতিনিধি : নেত্রকোণার দুর্গাপুরে কাওছার তালুকদার (১৮) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় উত্তাল রয়েছে দুর্গাপুর। এঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে কাওছারের বড় ভাই স্বপন তালুকদার বাদি হয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান (সাদ্দাম আকঞ্জি) কে প্রধান আসামী করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামী করা হয়েছে ছাত্রদলের নেতা মো. মেহেদি হাসান সাহস (২১),শামীম আহমেদ, পরশ মিয়া সহ সতেরো জন। ঘটনার পর থেকে দফায় দফায় হচ্ছে বিক্ষোভ। ঘটনার পর থেকে উত্তাল রয়েছে দুর্গাপুর। বৃহষ্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে নেত্রকোণা জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে শহরের ছোট বাজারস্থ দলীয় কার্র্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দায়ীদের বিচার দাবী করেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাওছার তালুকদারের সঙ্গে ছাত্রদল নেতা মেহেদি হাসানের বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে বেশ কয়েক জন উচ্ছৃঙ্খল যুবক কাওছারের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। এ সময় কাওসার পুলিশ মোড় এলাকায় তার নিজস্ব মোটরসাইকেলে মেরামতের দোকানে বসে স্মার্ট মুঠোফোন হাতে নিয়ে দেখছিলেন। হামলাকারীরা কাওছারকে হর্কিস্টিক দিয়ে বেধরক মারধর এবং রামদা দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় পাশের দোকানিরা ও পথচারীরা বাঁধা দিলে হামলাকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক কাওছারকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই তিনজনকে আটক করে। আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন, মেহেদি হাসানের দাদা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাসান আবুচান, ইমাম হাসানের ছেলে মো.জুলহাস ও অপর ছেলের দিকের নাতি পরশ মিয়া। এ দিকে, কাওছার হত্যার পর বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর শহরে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। এতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠন সহ নানা শ্রেণি পেশার-লোকজন অংশ নেন।
নিহত কাওছার তালুকদার দুর্গাপুর উপজেলা শহরের মেছুয়া বাজার এলাকার মৃত আলাল উদ্দিন তালুকদারের ছেলে। সে নেত্রকোণা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের তিন বারের সাবেক সাংসদ প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মো. জালাল উদ্দিন তালুকদারের ভাতিজা। তিনি দুর্গাপুর পুলিশ মোড় এলাকায় একটি মোটরসাইকেল মেরামতের দোকান চালাতেন। নবীনলীগের রাজনীতির সঙ্গে সে জড়িত ছিল। তবে ছাত্রলীগ বলছে, কাওছার ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্র্মী ছিল।
অপর দিকে আর মেহেদি হাসান সাহস দুর্গাপুরের মাঝিয়াল গ্রামের মঞ্জুরুল হকের ছেলে ও সুসং সরকারি ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক। ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট জেলা ছাত্র দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরিত কমিটি এই অনুমোদন দেন ।
জেলা ছাত্রলীগের যুগ্নসম্পাদক সোবয়েল আহম্মদ খান জানান, কাওছার তালুকদার ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল। তাকে হত্যা করেছে ছাত্রদলের ক্যাডাররা। যারা কাওছারকে হত্যা করেছে, যারা এই হত্যার সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবী করছি।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়জুর মুর্শেদ অমি বলেন, কাওছার তালুকদার ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিল। আমরা জেলা ছাত্রলীগ এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তাকে যারা হামলা করে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করছি।
বৃহষ্পতিবার দুপুরে সুসং ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ থেকে মিছিল করে দুর্গাপুর থানায় গিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় বিক্ষোদ্ধ শিক্ষার্থী পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলে, এর মধ্যে প্রধান আসামী সহ আসামীদের গ্রেফতার না করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন,‘নিহতের লাশ ময়না তদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান (সাদ্দাম আকঞ্জি) কে প্রধান আসামী করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ১৭ । এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।