বিপ্লবী জ্ঞান চন্দ্র মজুমদারের ৪৯তম প্রয়াণ দিবস আজ

বিশেষ প্রতিনিধি: ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগে আপাদমস্তক বিপ্লবী জ্ঞানচন্দ্র মজুমদারের ৪৯তম প্রয়াণ দিবস আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর)। ১৯৭০ সালের এই দিনে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতমাতার মুক্তি সংগ্রামের এই অগ্রসেনানী।
জ্ঞানচন্দ্র মজুমদারের জন্ম ১৮৮৯ সালে নেত্রকোোণা(তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত) জেলার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর গ্রামে। বাবার নাম মহেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার।
অনুশীলন সমিতির অন্যতম শীর্ষ নায়ক হিসেবে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ ছিলেন জ্ঞানচন্দ্র মজুমদার।
১৯০৬ সালে এন্ট্রান্স পাস করে ঢাকা কলেজে পড়ার সময় অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা পি. মিত্রের সংস্রবে আসেন এবং তিনিই সমিতির সর্বপ্রথম সদস্যরূপে বিধিবদ্ধ শপথ গ্রহণ করেন।
১৯০৬-১০ সালে সমিতির সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে তার বিশেষ ভূমিকা ছিলো। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ঢাকার ব্রাহা রাজনৈতিক ডাকাতির ঘটনা। এই বিপ্লবী কাজের মধ্যেও তিনি ১৯১০ সালে বি.এস.সি. পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে এম.এস.সি. পড়ার সময় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পুলিশি তৎপরতার জন্য তার পড়া শেষ হবার আগেই ১৯১৬ সালে তিন ধারা আইনে আটক থাকেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে ১৯১৯ সালে ছাড়া পেয়ে কংগ্রেস আন্দোলনে যোগ দেন এবং ময়মনসিংহ জেলায় কংগ্রেস সংগঠন গড়ে তুলে বহু বছর তার সম্পাদক এবং পরে সভাপতি হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৫-৩০ সালে তিনি বাংলার প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ১৯৩৮ সনে তদানিন্তন কংগ্রেস হাইকমান্ডের বিপক্ষে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে মিলিত হয়ে তার মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের শাসন-শোষণ থেকে ভারতমাতাকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞায় আমৃত্যু এই বিপ্লবী সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার হাসিমুখে কারাবরণ করেছেন। দেশবিভাগের পর ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানে বাস করেন। ওই সময়কালে তিনি ছিলেন পাক-গণপরিষদের অন্যতম সদস্য। জীবনের ২৬টি বছর ব্রিটিশ রাজের চক্ষুশূল হয়ে কারান্তরীণ ছিলেন এই মহান বিপ্লবী।
সত্য ও স্বাধীনতার পথে ভারতমাতার মুক্তিতে আপসহীন জ্ঞানচন্দ্র মজুমদার  বরাবরই শোষণমুক্তি ও ভারতবাসীর স্বাধীনতায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন । আর সেই স্বাধীনতার অর্জনের জন্য জীবনের সোনালী সময়কে যৌবনের শ্রেষ্ঠ মধ্যাহ্নকে উপেক্ষা করে তিনি সামিল হয়েছিলেন ভারতমুক্তি সংগ্রামের প্রথম কাতারে, বিপ্লবের অগ্নিঝরা কাফেলায়।
পারিবারিকভাবেই রাজনৈতিক শিক্ষাগ্রহণ করা জ্ঞানচন্দ্র মজুমদার সম্পর্কে উপমহাদেশের ইতিহাসবেত্তারা জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে নেত্রকোনার বারহাট্টার রায়পুর গ্রামের বাড়িতে রাজাকাল-আলবদররা এই বিপ্লবীর কর্মকম জীবনের অনেক স্মৃতি, সাক্ষ্য-প্রমাণাদিই নষ্ট করে দেয়। তাঁর উত্তরসূরিদের কাছে খোঁজ নিয়েও মহান এই বিপ্লবীর কোনও ছবি পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বাড়িতে কয়েক দফা হানা দেয় পাকপন্থি রাজকার-আলবদররা। তখনই জ্ঞানচন্দ্র মজুমদারের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সব প্রমাণাদি নষ্ট করে দেয়া হয়।
তবে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত ‘সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান’ গ্রন্থ, ২০০৪ সালে একুশে গ্রন্থ মেলায় প্রকাশিত ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর ‘জেলে ত্রিশ বছর, পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ ও দরজি আবদুল ওয়াহাবের ‘ময়মনসিংহের চরিতাভিধান’ গ্রন্থে জ্ঞানচন্দ্র মজুমদারের সদাবিপ্লবী রাজনৈতিক জীবনের নানা তথ্যের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।
আজকের এই দিনটিতে সম্রাজ্যবাদের শাসন-শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াকু সৈনিকেরা শ্রদ্ধার সঙ্গে বিপ্লবের আদর্শ পুরুষ জ্ঞানচন্দ্র মজুমদারকে স্মরণ করছেন।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।