সেই শেফালীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক: মমেক এ ভর্তি

বিশেষ প্রতিনিধি: দৈনিক বাংলার নেত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রচারের পর খালিয়াজুরীর হাওরাঞ্চলে ভুয়া চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে জীবন হারাতে বসা বিধবা নারী শেফালী আক্তারের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক। শনিবার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শেফালীর বাড়ি পাঁচহাট থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম মাধ্যমে শনিবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে শেফালীকে।
চলতি বছরের সাত এপ্রিল খালিয়াজুরী উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের বিধবা শেফালী আক্তার (৩২) বুকে ব্যথা নিয়ে যান স্থানীয় চিকিৎসক মানিক তালুকদারের নিকট। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ওই চিকিৎসক জানান স্তনে টিউমার হয়েছে। যা অপারেশন করাতে হবে। বিশ হাজার টাকায় অপারেশন করে দেয়ার কথা বলে টাকা সংগ্রহ করতে বলে শেফালীকে। কদিনে মধ্যেই টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে গেলে ব্লেড দিয়ে স্তনের অর্ধেক অংশ কেটে ফেলে ওই গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসক। এরপর থেকে অবনতি হয় শেফালির শারীরিক অবস্থা। এনিয়ে দৈনিক বাংলার নেত্র পত্রিকা সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আর এঘটনায় খুশি এলাকাবাসীও।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, শনিবার রাত ৯ টায় ওই ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০ নং সার্জারি বিভাগে তিনি ভর্তি হন জেলা প্রশাসনের ও খালিয়াজুরী প্রশাসনের সহায়তায়।
তিনি আরো জানান, প্রায় দু’মাস পূর্বে টিউমার অপারেশনের নামে শেফালি আক্তারের একটি স্তনের পুরো অংশই কেটে ফেলে দিয়েছে এক প্রতারক। সেই থেকে অসহায় শেফালি আক্তার অর্থাভাবে কাটা স্তনের চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। বিষয়টি গণমাধ্যেমে দেখে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম স্যারের নির্দেশনায় স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা করানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরে আমি শেফালি আক্তারকে তার বাড়ি থেকে এনে একটি এ্যাম্বলেন্স ভাড়া নিয়ে শনিবার রাত ৯ টায় মমেক হাসপাতালে গিয়ে সেখানে তাকে ভর্তি করিয়েছি। প্রাথমিক ভাবে নেত্রকোণা জেলা ও খালিয়াজুরী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে কিছু অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, নেত্রকোণার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সি নগদ ১০ হাজার ও নেত্রকোণা জেলা ছাত্র লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সোবায়েল আহমেদ খান নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে শেফালি আক্তারকে সহায়তা করেছেন।


চিকিৎসাধীন শেফালী আক্তার জানান, তার বাম স্তনে সমস্যা ছিল। বিষয়টি জেনে নেত্রকোণার মদন উপজেলার কাতলা গ্রামের আমির উদ্দিন তালুকদারের ছেলে মানিক তালুকদার (৪৫) চিকিৎসক সেজে তাকে অজ্ঞান করে ব্রেড দিয়ে তার বাম স্তন কেটে ফেলেন।
তিনি আরো জানান, টিউমার হয়েছে ও টিউমার থেকে ক্যানসার হবে এসবের ভয় দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে খালিয়াজুরীর পাঁচহাট বাজারের ইকবাল হোমিও হলে তার ওই স্তনটি কেটেছেন মানিক তালুকদার। সেই থেকে তার কাটা স্তনের স্থানে পূঁজ ও রক্ত ঝড়ছে। অর্থাভাবে তার চিকিৎসাও তিনি করাতে পারছিলেন না।
এদিকে, গত ১০ সেপ্টেম্বর মানিক তালুকদার ও ফার্মেসীর মালিক ইকবালকে আসামি করে শেফালি আক্তার নিজেই বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন বলেও জানান ওই শেফালি।
খালিয়াজুরী থানার ওসি এটিএম মাহমুদুল হক বলেন, মামলা করার পরের দিনই মানিক তালুকদাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সে একজন ভূয়া চিকিৎসক। গ্রেপ্তারের পর মানিক তালুকদার নিজেকে হোমিও চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। তার কাছে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। তিনি মা ও শিশু, চর্ম, যৌন সার্জারীতে বিশেষ অভিজ্ঞ পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন।
শেফালি আক্তার নেত্রকোণার খালিয়াজুরী উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের মৃত সাব্বির মিয়ার স্ত্রী। তিনি আর্থিক দুর্দশাগ্রস্থ খেটে-খাওয়া নারী। তার ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে। তারা কেউই উপর্জনশীল নয়।তার মা ভিক্ষা করে সংসার চালান।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।