দুর্গাপুরে চাঞ্চল্যকর সাইদুল হত্যার রহস্য উন্মোচন : গ্রেফতার-৩

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণার পুলিশ সুপার মোঃ আকবর আলী মুন্সী এঁর তদারকিতে উন্মোচিত হয়েছে নেত্রকোণার দুর্গাপুর থানার অটোচালক সাইদুল ইসলাম (২৭) এর হত্যার রহস্যের ঘটনা। গত ২ সেপ্টেম্বর রাত আটটার দিকে প্রতিদিনের মত নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার পশ্চিম বিলাশপুর গ্রামের মৃত সদর আলী সাইদুল ইসলাম (২৭) তার ব্যাটারি চালিত অটো নিয়ে বাড়ী হয়ে বের নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন তাকে খোঁজাখুঁজি করে। খোঁজ না পেয়ে পরদিন দূর্গাপুর থানায় একটি জিডি করে। জিডি নং ১১৫।
এরপর ৫ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার দিকে দূর্গাপুর থানার মিনকিফান্দা গ্রামের মরাখলা পাহাড়ের পাশে বান্দরের টিলায় ৪০ ফুট উপরে দুর্গম জঙ্গলে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ পড়ে আছে এমন সংবাদ পেয়ে দূর্গাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলেই পরনের শার্ট ও স্কচটেপ দ্বারা হাত পা বাঁধা অবস্থায় অর্ধগলিত দেহটি উদ্ধার করে।
নিহত ওই ব্যক্তির পরনের শার্ট ও প্যান্ট দেখে তার স্বজনরা নিখোঁজ সাইদুল ইসলামের মৃতদেহ বলে সনাক্ত করে। লাশ উদ্ধারের পর মৃতের স্ত্রী আকলিমা আক্তার বাদী হয়ে ৮ সেস্টেম্বর দূর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। দূর্গাপুর থানার মামলা নং ০৬। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে নেত্রকোণার পুলিশ সুপার মোঃ আকবর আলী মুন্সী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন আলামত জব্দ ও আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
মামলার ঘটনা সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, প্রশাসন (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) এসএম আশরাফুল আলম জানায়, গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার কাঠালডাংড়ি গ্রামের আব্দুর রহমান এর ছেলে শাহীন মোল্লা (৩৫), শেরপুর জেলার পাকুরিয়া গনই মমিনাকান্দা গ্রামের আশরাফুল ছেলে মানিক মিয়া(২৭) এবং তাদের অন্যতম সহযোগী দূর্গাপুরের লক্ষীপুর বাসিন্দা কমর উদ্দিনের ছেলে সেকুল ইসলাম (২৭) এর সহযোগিতায় অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক পহেলা সেপ্টেম্বর শাহীন মোল্লা এবং মানিক মিয়া গাজীপুর থেকে দূর্গাপুর আসে। ভিকটিম সাইদুল ইসলামকে সহজ সরল পেয়ে এবং তার অটোটির কন্ডিশন ভাল দেখে ৩ জন ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন বিকালে অটোটি ভাড়া করে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু ছিনতাইয়ের কোন সুযোগ না পেয়ে সাইদুল ইসলামের মোবাইল নম্বর রেখে তাকে ছেড়ে দিয়ে বিরিশিরিস্থ স্বর্ণা গেষ্ট হাউজে রাত কাটায়। পরদিন দুপুরে তারা মোবাইল ফোনে ভিকটিম সাইদুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে পুনরায় অটোযোগে ঘুরতে থাকে। একপর্যায়ে ওই ৩ জন ভিকটিম সাইদুল ইসলামের সাথে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করে বান্দর টিলা পাহাড়ে ঘুরতে যায়। হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সেকুল, মানিক ও শাহিন দূর্গাপুর বাজার হতে গামছা ও স্কচটেপ কিনে সাথে নিয়ে যায়। তারা সন্ধ্যার দিকে ভিকটিমকে দুর্গম বান্দর টিলা পাহাড়ে আনুমানিক ৪০ ফুট উপরে নিয়ে স্কচটেপ দিয়ে হাত পা বেঁধে গলায় গামছা পেঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে অটোটি নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন উঁচাখিলা বাজারের হক্কানি সাউন্ড এন্ড ব্যাটারির মালিক সবুজের কাছে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা ইতোপূর্বে সবুজ মিয়ার নিকট আরও চোরাই অটো তারা বিক্রি করেছে।
পরবর্তীতে নেত্রকোণা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আকবর আলী মুন্সী এঁর তদারকিতে নেত্রকোণা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) এসএম আশরাফুল আলম, পিপিএম-সেবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আলামিন হোসাইন (দূর্গাপুর সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত)এঁর সমন্বয়ে একটি চৌকস টীম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে সেকুলকে দূর্গাপুর থানাধীন লক্ষীপুর বাজার হতে আটক করে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন উঁচাখিলা বাজার হতে আসামী সবুজ মিয়ার হেফাজত হতে চোরাই অটোটি উদ্ধার করে এবং আসামী সবুজ মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ধৃত আসামীদের দেয়া তথ্যমতে ওইদিন গভীর রাতে শেরপুর জেলার সদর থানাধীন পাকুরিয়া গণই মমিনাকান্দা হতে হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যতম আসামী মানিক মিয়াকে গ্রেফতার করে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।