ইউএনও-র প্রচেষ্টায় বাল্যবিবাহ মুক্ত বারহাট্টা : দু’বছরে আটান্ন বিয়ে বন্ধ

বারহাট্টা প্রতিনিধি: নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলাকে মঙ্গলবার দুপুরে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
বারহাট্টা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বারহাট্টা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থী,অভিভাবক, সরকারী কর্মকর্তাসহ এলাকাবাসীকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সিফাত আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন),(সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) এসএম আশরাফুল আলম,বারহাট্টা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মাঈনুল হক কাসেম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া উম্মুল বানিন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শাহ্ মো. আব্দুল কাদের, বারহাট্টা থানার ওসি মোঃ বদরুল আলম খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আজাদ, নারী প্রগতি সংঘের ম্যানেজার সুরজিত ভৌমিক প্রমুখ।


বারহাট্টা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের ৯ মে ফরিদা ইয়াসমিন বারহাট্টায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রায় ৫৮টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন। এর মধ্যে শিশু, কিশোরী, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন শিক্ষার্থীদেরকে শুধু বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষাই করেন নি। অনেকের পড়াশুনার ব্যবস্থা করেন। তিনি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মানুষকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝানোর চেষ্টা করেন এবং বুঝাতে সক্ষম হন।
এসময় জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, নেত্রকোণার ১০টি উপজেলার মধ্যে এই প্রথম বারহাট্টাকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দুই বছরের প্রচেষ্টায় তিনি অন্তত ৫৮টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন। এর মধ্যে চারজন অস্বচ্ছল পরিবারের ঝড়েপড়া মেয়েদেরকে নিজ খরচে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন। আজকের এই শপথ রক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন জানান, দুই বছরে তিনি যখনি বাল্য বিবাহের সংবাদ শুনেছেন তখনই ছুটে গেছেন বিভিন্ন এলাকায়। কোনো কোনো সময় গভীর রাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যেতে হয়েছে তাঁেক। কিন্তু বাল্য বিবাহের কোন ছাড় দেননি তিনি। দুই বছরে আটান্নটি বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছেন বলেও জানান তিনি। এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দিচ্ছেন পড়াশোনার খরচ। ঝরে পরা শিক্ষার্থীদের জন্য গড়ে তুলেছেন সুহৃদ নামের সংগঠন। যেখান থেকে দরীদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ চালানো হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন,উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাইনুল হক কাশেম ও বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পাওয়া সিকেপি পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্ঠম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শরীফা আক্তার। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, কাজী, ইমাম, ধর্মীয় নেতা, সমাজকর্মী, শিক্ষার্থী, শিক্ষক,অভিভাবক,সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে বাল্যবিবাহ ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের ব্রিগেড তৈরী করে ৩৮ জন শিক্ষার্থীকে সাইকেল তুলে দেন জেলা প্রশাসক।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।