কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ: ৬ বার নোটিশ

বিশেষ প্রতিনিধি: সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে প্রায় বছর খানেক আগে। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদকাল চলে গেছে মাস দুইয়েক আগে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি সামান্যই। বর্তমানে মাস দেড়েক ধরে সংস্কারকাজও বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে করে সড়কের স্থানে স্থানে সৃষ্টি হচ্ছে গর্ত। বৃষ্টির পানি জমে গর্ত রূপ নিয়েছে ছোটখাটো পুকুরের। এরই মধ্যে হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। কখনো গাড়ি উল্টে যাচ্ছে, কখনো আটকে পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
স্থানীয়রা বলছেন, ঠিকাদারের চরম গাফিলতি এবং সড়ক সংস্কার কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যই এমনটি হয়েছে। এ চিত্র বন্যা দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্থ পল্লী সড়ক পুর্নবাসন প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোণার কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়ক।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নেত্রকোণা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণার কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কটি গত বছরের মে মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সড়কটির দৈঘ্য ২৪.৬৮ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮ ফুট। প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ পায় ডলি কনস্টাকশন লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট থেকে সংস্কার কাজ শুরু করে চলতি বছরের ৬ মে তা শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু টিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা করেনি। ওই সংস্কার কাজে দুইটি প্যাকেজের মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার অংশে নাজিরপুর পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার এবং নাজিরপুরের পর থেকে দুর্গাপুর উপজেলার অংশে ১০ কিলোমিটার পথ রয়েছে। কলমাকান্দা অংশে উপজেলা মোড় থেকে বরদল বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটারের কিছু বেশি সংস্কার করে বাকি কাজ অন্তত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ ছয় ইঞ্চি মেকাডাম করে ফেলে রাখা হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এভাবে থাকায় সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে বৃষ্টির পানি জমে তাতে ছোটবড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে যানবাহন নিয়ে চলাচলকারী ও পথচারীরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। দুইটি উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটিই। এতে চলাচল করে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপ, সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন। ব্যস্ত ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ হাজারের মতো মানুষ চলাচল করে। এ ছাড়া স্কুল কলেজে যাওয়া-আসা করে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী।গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বরদলের পর থেকে ভোগান্তির শুরু। ভাঙা সড়কের কারণে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। স্থানে স্থানে গর্তে জমাবদ্ধ পানিতে আটকা পড়ে রয়েছে বিভিন্ন যানবাহন। চালাক ও যাত্রীদের অভিযোগ, সড়কটি সংস্কারের নামে আরো দুর্ভোগ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ ফেলে রাখায় সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে।
কলমাকান্দার ভবানীপুর গ্রামের সিএনজি চালক রফিক মিয়া বলেন, ‘আগে সিএনজিতে করে দুর্গাপুর থেকে কলমাকান্দায় সর্বোচ্চ আধাঘণ্টায় পৌঁছা যেত। কিন্তু এখন দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। স্থানে স্থানে গর্তে আটকা পড়তে হয়। যানজট লেগে থাকে।’
নাজিরপুর এলাকার বাসিন্দা আশিক মিয়া বলেন, ‘সড়কটির সংস্কারকাজ বহুদিন ধরে এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। যত ভোগান্তি যাত্রীদের।’


কলমাকান্দার ব্যবসায়ী শাহেদ আলীকে নিয়মিত দুর্গাপুর যেতে হয় ওই সড়ক দিয়ে। তিনি বলেন, ‘সংস্কার কাজের দীর্ঘ সূত্রিতার জন্য এখন এই দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ রীতি মতো অতিষ্ট হয়ে পড়ছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণেই এমনটি হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকলে তা হতো না।’
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘কলমাকন্দার সঙ্গে জেলাসহ সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা দিনে দিনে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। মানুষ খুবই দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছে। রোগীসহ প্রয়োজনীয় কাজে কেউ কোথাও সহজে যেতে পারছে না। সব রাস্থাঘাটই বেহাল। এক ঘণ্টার পথ তিন থেকে চার ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হয়। কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কটি দ্রুত সংস্কার করতে সংশিষ্ট বিভাগকে বলা হয়েছে।’
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. জামালের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. হাসান বলেন, ‘আমি কিছু দিন আগে থেকে ওই কাজের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিয়েছি। তবে যতটুকু জানি বৃষ্টির কারণে প্রায় দুই মাস ধরে কাজটি বন্ধ রয়েছে। ঈদের পর থেকে একটানা কাজ করে তা শেষ করা হবে। আর মেয়াদ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে তদারকির দায়িত্বে থাকা নেত্রকোণা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে শনিবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। তবে এলজিইডির কলমাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দিন বলেন,‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি নিয়ে প্রচুর সময় ক্ষেপণ করছে। এ নিয়ে আমরাও খুব বিপদে আছি। দ্রুত কাজ শেষ করতে প্রতিষ্ঠানটিকে এ পর্যন্ত ছয়বার নোটিশ দিয়েছি। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এখন সাড়া না দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।