নেত্রকোণায় শিশু সজিবকে বলৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করা হয়-অতিরিক্ত ডিআইজি

স্টাফ রির্পোটার: নেত্রকোণায় শিশু সজিবকে বলৎকারের পর গলা কেটে শিশু হত্যা করে মাদকাসক্ত যুবক রবিন। প্রতিবেশীর ছেলেকে ফুসলিয়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনের তিন তলা একটি কক্ষে নিয়ে বলাৎকারের পর লোকলজ্জার ভয়ে গলা কেটে হত্যা করে মস্তকটি লুকানোর উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। পোস্টমর্টেম রির্পোটে এমন তথ্য এসেছে বলে জানান, ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূইয়া। তিনি নেত্রকোণা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে ছেলে ধরা, পস্মা সেতুনিয়ে গুজব,জনগণ কতৃর্ক আইন হাতে তুলে নেয়া এবং সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরণের অপপ্রচার সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় এতথ্য জানান। পদ্মসেতুতে মাথা লাগবে এটা গুজব। যারা এধরণের গুজব ছড়াচ্ছে তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তিনি আরো জানান, সামাজিক মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত আটারো জুলাই নেত্রকোণা শহরের কাটলী এলাকায় শিশুটির মাথা কেটে নিয়ে পালানোর পর গণপিটুনিতে যুবক নিহতের ঘটনায় থানায় পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নেত্রকোণা মডেল থানায় এই দুটি মামলা হয়।
শিশু সজীব মিয়া (৭) হত্যার বাদী তার বাবা রইছ উদ্দিন। এতে গণপিটুনিতে নিহত রবিন মিয়ার (২৮) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। আর রবিন হত্যায় নেত্রকোণা মডেল থানার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) রফিক বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এ দিকে বুধবার জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জানান, ‘এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা পোস্টমর্ডেম রিপোর্টে এসেছে শিশুটি সজীবকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। অথবা পারিবারিক দ্বদ্ব থেকেও এই হত্যাকা- হতে পারে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছেলে ধরা ও পদ্মা সেতুতে মাথা দরকার এমন গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। যারা এ রকম মনগড়া ও অসত্য তথ্য দিয়ে প্রচারণা চলানোর চেষ্টা করবে তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ গন্য হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, রবিন মিয়া মাদকাসক্ত ছিলেন। তার নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। রবিনের জব্দকৃত মুঠোফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্ত করা হচ্ছে। ময়না তদন্ততে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে হত্যার আগে শিশুটির ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে শহরের কাটলি এলাকায় রাস্তার পাশে একটি নির্মানাধীন ভবনের তিনতলায় টয়লেটে শিশু সজীবকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এর পর রবিন মিয়া সজীবের ছিন্ন মাথা একটি ব্যাগে করে চকপাড়া সুইপার কলোনিতে নিয়ে যান। সেখানে মদ খেতে গেলে স্থানীয়দের নজরে পড়ে। এ সময় রবিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা ধাওয়া করে নিউটাউনের অনন্তপুকুরপাড়ে তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ দিকে শহরের উত্তর কাটলি এলাকায় শিশু সজীব ও রবিন মিয়াদের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায় উভয় পরিবারের বাসায়ই তলাবদ্ধ। স্থানীয় অন্তত ১৫ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিন মিয়ার বাবা এখলাস উদ্দিন কাটলি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি পেশায় রিকশা চালক। এক সময় এখলাছ উদ্দিন বেশ স্বচ্ছল ছিলেন। তার নিজস্ব বাসাসহ প্রচুর জায়গা জমি ছিল, কিন্তু এখন নিঃশ্ব। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ভাড়া বাসায় থাকেন। বর্তমানে রাজু মিয়ার বাসার একটি কক্ষে এক হাজার টাকা ভাড়ায় তিনি ১০ মাস ধরে আছেন। পাঁচ ছেলের মধ্যে রবিন মিয়া সবার বড়। এক ছেলে বিয়ে করে নরসিংদী থাকেন। আরেক ছেলে সিলেটে। ছোট দুই ছেলে পায়েল মিয়া ও হাসান মিয়া বাবা-মার সঙ্গে থাকে। বাড়ির মালিক রাজু মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া আক্তার, প্রতিবেশী সৌকত হোসেন জানান, রবিন মিয়া প্রায় পাঁচ বছর আগে সদর উপজেলার মইষাখালি গ্রামের মারুফা আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বছর খানেক ধরে তাঁর স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। মাদক সেবনের কারণে রবিনকে তার বাবা চার পাঁচ মাস আগে পুলিশে দিয়েছিলেন। মাস দেড়েক আগেও তিনি জেল খেটে এসেছেন। প্রায় মাসখানেক আগে তাকে শিকলে তালা বেঁধে তার বাবা পুলিশে খবর দিতে চান। এ সময় তিনি ছুটে পালিয়ে যান। এরপর থেকে আর বাড়িতে আসেনি। তবে বিভিন্ন সময় এলাকায় ঘুরাঘরি ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করতে তাকে দেখা গেছে। শিশু সজীবরা যে বাসায় ভাড়া থাকতো সেই বাসার মালিক হিরা মিয়া জানান, দেড় মাস আগে সজিবের বাবা এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তাদের বাসায় থাকছেন। আগে পাশের একটি বাসায় তারা ভাড়া থাকতো। তবে কি কারণে কেন সজীবকে রবিন হত্যা করলো তা বুঝা যাচ্ছে না। তিনি জানান, সজিবের বাবার সঙ্গে রবিনের বাবার ভালো সম্পর্ক। তারা একই সঙ্গে রিকশা চালান। ওই এলাকার স্বপন মিয়া ও স্কুল শিক্ষক এমদাদ মিয়া বলেন, ‘রবিন মাদক সেবনের চূড়ান্ত পযায়ে গিয়েছিল। সে যা উপার্জন করতো তা সবসময় নেশা সেবন করে উড়িয়ে দিত। তবে শিশুটিকে হত্যার পেছনে কারণ বলা যাচ্ছে না।’
পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূইয়া, পৌরমেয়র আলহাজ্জ নজরুল ইসলাম খান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সীতাংশু বিকাশ আচায্য, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) এসএম আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোঃ ফখরুজ্জামান জুয়েল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ, প্রেসক্লাব সম্পাদক শ্যামলেন্দু পালসহ জেলা সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।