নেত্রকোণায় শিশু হত্যার ঘটনায় পৃথক মামলা: আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ এসপির

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণা জেলা শহরে শিশু সজিবের গলা কাটা মস্তক নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং গণপিটুনিতে শিশু হত্যাকারী যুবক রবিন নিহত হওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সজিবকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় শিশু সজিবের পিতা রইস উদ্দিন বাদী হয়ে রবিনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত ব্যক্তিদেরকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গণ পিটুনিতে শিশু হত্যাকারী রবিন নিহত হওয়ার ঘটনায় নেত্রকোণা মডেল থানার এ এস আই রফিক বাদী হয়ে অজ্ঞাত সংখ্যক ব্যাক্তিকে আসামী করে অপর মামলাটি দায়ের করেন।
এ উপলক্ষ্যে নেত্রকোণা জেলা পুলিশ শুক্রবার বেলা ১১টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং-এর আয়োজন করে। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকরা ঘটনার বাস্তবচিত্র তুলে ধরলেও উক্ত হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে কতিপয় লোক ছেলে ধরা ও পদ্মা সেতুতে ছেলে শিশুদের মাথা দেয়ার কথা বলে যে গুজব ছড়াচ্ছে, তা আদৌ সত্য নয়, নিতান্তই অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে এ ধরনের গুজব না ছড়ানোর জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। পাশাপাশি সকল অভিভাবকদেরকে আতংকিত না হওয়ারও পরামর্শ প্রদান করেন। তবে প্রেস ব্রিফিংয়ে কি কারণে এ নৃশংস হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে তা এখন বলতে পারেননি তিনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসময় তিনি (পুলিশ সুপার) জানান,“ধারণা করা হচ্ছে মনের পুরনো কোন জেদ বা বিকৃত মানসিকতা থেকেই সজিবের সাথে নির্মম ও বর্বরোচিত এ ঘটনা ঘটেছে। শিশু সজিবের গলা কাটার বিষয়টি শুধুই একটি হত্যাকান্ড। এর সাথে ছেলে ধরা বা পদ্মা সেতু গুজবের কোন সম্পর্ক নেই। এদিকে ঘটনার পরপরই নেত্রকোণা জেলা পুলিশ এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সজিবের পিতা রইছ উদ্দিন নেত্রকোণা মডেল থানাধীন আমতলা ইউনিয়নের কুমারপুর সাকিনের বাসিন্দা। বর্তমানে নেত্রকোণা পৌরসভাধীন কাটলিস্থ ডাক্তার মোঃ জালাল উদ্দিন এর বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছে। রবিন পেশায় রিক্সা চালক এবং মাদকাসক্ত। শিশু সজিবের পিতা রইছ উদ্দিনও পেশায় একজন রিক্সা চালক। শিশু সজিবের পিতা রইছ উদ্দিন এবং রবিন উভয়েই পূর্ব পরিচিত এবং একই এলাকার বাসিন্দা। ইহা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ঘটনাটি পারিবারিক দ্বন্দ্ব অথবা পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা হতে পারে। এ সংক্রান্তে নেত্রকোণা মডেল থানায় ০২ টি পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে। সজিব হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা নং-১৯, তারিখ-১৮-০৭-২০১৯ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দন্ডবিধি এবং গণপিটুনিতে রবিন হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা নং-২০, তারিখ-১৮-০৭-২০১৯ খ্রিঃ, ধারা-৩০২ দন্ডবিধি। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে।
পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী আরো বলেন,অপরিচিতি হলেই সন্দেহ করে কাউকে মারপিট করা যাবে না। এ ধরণের ভুল সিদ্ধান্তে নিজেও অপরাধী হয়ে যেতে পারেন। এতে যে কাউকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। এলাকা, পাড়া বা মহল্লায় অপরিচিত ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে আগে তার সাথে কথা বলুন এবং তার পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হন। তারপর কোথাও কোন সমস্যা মনে হলে পুলিশকে সংবাদ দিন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলে ধরা নিয়ে ভীত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। রবিন ছিল ঐ শিশুরই প্রতিবেশী এবং এলাকার চিহ্নিত মাদকাসক্ত যুবক। যদি গণপিটুনি দিয়ে রবিনকে না মেরে ফেলা হত তবে প্রকৃত ঘটনা পুলিশের মাধ্যমে অথবা সরাসরি তার মুখ থেকে দেশবাসী দ্রুত সময়েই শুনতে পারত। আইন কারো হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তদন্তাধীন বিষয়ে মনগড়া ও অসত্য তথ্য দিয়ে প্রচার প্রচারণা চালানো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপরাধ। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাটিকে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলে ধরা ও পদ্মা সেতুর গুজবের সাথে মিশিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে যা নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য। ঘটনাটি পদ্মা সেতুর গুজবের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই। পদ্মা সেতু ও ছেলে ধরা সংক্রান্ত গুজবে কান না দেয়ার জন্য নেত্রকোণাবাসী তথা দেশবাসীকে অনুরোধ করা হলো।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রবিন শিশু সজিবকে হত্যা করে তার মস্তক (মুন্ডু) নিয়ে জেলা শহরের বারহাট্টা রোডস্থ শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে হরিজন পল্লীতে মদ পান করে মাতলামি করার সময় তার ব্যাগ থেকে শিশুর গলাকাটা মস্তক মাটিতে পড়ে যায়। তা দেখে উত্তেজিত জনতা তাকে ধাওয়া করে নিউটাউন পঁচা পুকুর (অনন্ত পুকুর) পাড়ে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।