নেত্রকোণায় বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বাড়ছে ত্রাণের টান

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ত্রাণের টান বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। ঘর বাড়িতে বানের পানি থাকায় অনেকেই রান্না বান্না করতে পারছেন না। এজন্য সামাজিক অবস্থান নিয়ে আর কোনো হিসেব হচ্ছে না। বন্যাদুর্গত এলাকায় এখন সবার পরিচয় ‘বানভাসি’। এই ‘বানভাসি’দের ছোট-বড় সবার দৃষ্টি থাকে ট্রলারের জন্য। ট্রলার দেখা বা শব্দ শোনা মাত্রই শুকনো খাবার নিতে এগিয়ে আসেন তারা। অনেকটা আগে আসলে আগে পাবার আশায়।
সরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য-সহযোগিতাই এখন ভরসা। টিকে থাকার এই সংগ্রাম এখন নেত্রকোণার বেশিরভাগ প্লাবিত এলাকাজুড়ে।
সময় যত গড়াচ্ছে জেলায় বাড়ছে প্লাবিত উপজেলা ও গ্রামের সংখ্যা। শুরুর দিকে জেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলা বন্যার কবলে পড়লেও পর্যায়ক্রমে পূর্বধলা, আটপাড়া ও সদরের কয়েকটি ইউনিয়নসহ সব উপজেলার মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দি মানুষ।
নেত্রকোণা সদর উপজেলার বন্দ পাটলী গ্রামের জামাল মিয়া জানান, দুর্গম স্থানে ঘরবাড়ি থাকায় গত সাতদিনেও কেউই যায়নি তার বাড়িতে। সাঁতরে গিয়ে দুই দিন শুকনো খাবার কিনে এনেছেন।
জেলা সদরের কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের হাতকুন্ডলি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিমের স্ত্রী মনোয়ারা, সামছু মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মৎ সাহেরা জানান, একসপ্তাহ ধরে তারাসহ গ্রামের কয়েক শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা আসেনি। পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করে কোনোরকম পানিতে টিকে থাকা হচ্ছে তাদের।


নেত্রকোণা সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাকিরুল ইসলাম জানান, কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোণা ২১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে পানি গড়াচ্ছে। এতে করে সড়কটি আরও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও দুর্গাপুরের বিজয়পুর সড়কের বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্প এলাকায় ১৫ মিটার নতুন সড়ক, শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের ২০ মিটারের মতো অ্যাপ্রোচসহ ওই সড়কের ইন্দ্রপুর এলাকায় একটি বক্স কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, জেলার চার উপজেলার (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা-বারহাট্টা ও পূর্বধলা) ২১৭টি গ্রামের ১৭ হাজার ৬০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ৮৮ হাজারের মতো মানুষ। তবে স্থানীয়দের দাবি দুর্ভোগে পড়া মানুষের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১৩১ টি পুকুর/ ফিসারী তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১৬ হাজার ৭১.৬৬ মেট্রিক টন মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় প্রায় সতেরো কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে তাদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
নেত্রকোণার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, জেলার ৮৬ ইউুনয়নের মধ্যে ৩২টি ইউনিয়নের ২৬৪টি গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসেবে ১৮৫২৭ টি পরিবারের ৯৩১০৫ জন লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যা কবলিত মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ১২৫ মেট্রিক টন চাল, ১৮ লক্ষ টাকা ও ৩ হাজার ৩শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় মোট ৩৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২২৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও ৪৭৫ মেট্রিকটন জিআর চাল ও নগদ ৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং ৭শ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে জেলা প্রশাসনে। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সব বিতরণ করা হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।