একজন প্রয়াত কমরেড খন্দকার গোলাপ মিয়া

কমরেড আনোয়ার হোসেন ফকির: নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলার চল্লিশ কাহনিয়া গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহন করেছিলেন। পিতাঃ খন্দকার মিরাস উদ্দিন, মাতা: সালেমা খাতুন। তার একাডেমিক শিক্ষা তেমন ছিল না, মাত্র অষ্টম শ্রেণী। তিনি ছিলেন আন্তরিক, চঞ্চল ও সাহসী। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ট। দরিদ্র এই পরিবারে জন্মে ছিলেন তিনি। তার বড় ভাইয়ের ছোট্ট একটা চাকুরি ছিল। এই বেতন দিয়ে সাত ভাইবোন নিয়ে সংসার চালাতেন খুব কষ্ট করে। তখন তার বাবা বেঁচে নেই।
তিনি বড় ভাই ও মায়ের সঙ্গে না বলে চলে গেলেন বাড়ি থেকে। কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন হুদিস নেই। বেশ কিছু দিন পর জানা গেল, সিলেট এক সিনেমা হলের টিকিট বিক্রি করেন। আবার প্রায়ই দলের অফিসে যান। তিনি মার্কসবাদ, লেনিনবাদের ধারা রক্ষা করেই চলেছেন। তার কিছুদিন পর সিলেট থেকে চলে আসেন কলমাকান্দা থানার রংসিনপুর গ্রামে, তার বোনের বাড়িতে। বোনজামাই ডাক্তার হেলিম ছিলেন এই এলাকার একজন সুনাম ধন্য পল্লী ডাক্তার। তাহার সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজে লেগে যান তিনি। কিছুদিন যাওয়ার পর ডাক্তার তাকে একটি বিয়ে করালেন। তিনি ক্ষেত মজুর সংগঠনের কাজটাও চালিয়ে যান। এতে তার স্ত্রীর ভাল লাগেনা। তাদের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এক পর্যায়ে এসে তাদের মধ্যে ঘটে গেল বিচ্ছেদ।
দেশে শুরু হলো স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, তিনি চলে আসেন নিজ এলাকায়। যুক্ত হলেন গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনে। স্বৈরাচারের পতন ঘটল, আন্দোলন শেষ হলো। তিনি এলাকায় শুরু করেন রাজনীতির পাশাপাশি ঔষধের ব্যবসা।
তারপর ১৯৯৮ সালে নেত্রকোণা সদর উপজেলার আব্দুর রহমান নামের এক হোটেল ব্যবসায়ীর মেয়ে নূরজাহান বেগমকে বিয়ে করেন। ২০০১ সালে জন্ম নেয় এক ছেলে সন্তান। নাম রাখা হয় বাকিবিল্লাহ। ২০০৫ সালে স্থাপিত হয় ফকির আশরাফ ডিগ্রী কলেজ, সেখানে চাকুরি নেন এম.এল.এস.এস পদে। ২০০৮ সালে কঠিন হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এলাকার মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় চিকিৎসা করা হয়, ঢাকা শেরে বাংলা নগর হৃদরোগ ইনিস্ট্রিটিউটে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ এর কেন্দ্রিয় ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক কমরেড রেজাউর রশিদ খান হাসপাতালে এসে গোলাপ মিয়াকে দেখে যান ও চিকিৎসার জন্য তার হাতে কিছু টাকা দেন। কেন্দ্রীয় কমরেডগণ প্রতিদিন কেউ না কেউ হাসপাতালে গোলাপ মিয়ার নিকট আসতেন। ওপেন হার্ট সার্জারী হল। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে এলেন।

নন এমপিও কলেজে বেতন-ভাতা ছাড়া চাকুরিতে তিনি আর যোগদান দিলেন না। শারীরিক বার্ধক্য আর দরিদ্রতা বেড়েই চলেছে। সংসার অচল, অপারগ হয়ে, অল্প বেতনে ছোট একটা চাকুরি নিলেন- বর্ণমালা বিদ্যানিকেতন নামে একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে। এখানে কিছুদিন ছিলেন। যে বেতন পান তাতে সংসার চলে না। তাই চাকুরি ছেড়ে দিলেন। তারপর তিনি ফকিরের বাজার ইজারাদারের হিসাব-নিকাশ করে কিছু টাকা পেতেন। এতেও তার সংসার চলে না। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক এই তিনটি চলেছে দ্রুত গতিতে অবনতির দিকে।

অনাহারে অর্ধহারে এ জীবন আর কত দিন চলবে? হঠাৎ একদিন তার ব্রেনষ্ট্রোক হয়। নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বেশ কিছুদিন ছিলেন হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায়। তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠলেন না। ৭ই জুলাই ২০১২ইং শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে চলে গেলেন না ফিরার দেশে। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও অনেক গুনগাহী রেখে যান।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।