
বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণার প্রতারনা মামলার আসামি মো. ফখরুজ্জামান তপুকে (৪০) নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে নেত্রকোণার গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
ডিবির ওসি শাহ্্নুর এ আলম প্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃত তপু নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার বড় বিনারচর গ্রামের মৃত মহিবুর রহমানের ছেলে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ২৮ মে ২০১৯ মঙ্গলবার সকালে নেত্রকোণার সদর উপজেলার মদনপুরের সুরাইয়া আব্বাস ডি.এম.সি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আহমাদুল্লাহ ওরফে হারুনকে গ্রেফতারকৃত তপু সরকারী ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে মোবাইলে স্কুলের নামে বরাদ্দ আসিয়াছে বলে জানায়। তার কথা মতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোক্তারপাড়া মাঠ সংলগ্ন মহুয়া অডিটোরিয়ামের সামনে সাক্ষাৎ করতে এসে দেখে তাঁর স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র পলাশকে নিয়ে ঠিকাদার দাঁড়িয়ে থাকে।
এক পর্যায়ে বরাদ্দের তিনটি স্কুলের নাম সম্বলিত কাগজ দেখায়। সেখানে এ বিদ্যালয়ের নামটি লিপিবদ্ধ থাকায় ঠিকাদারের কথা মতে প্রধান শিক্ষক মোক্তারপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন উৎসব ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক্স দোকানে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ১টি ভাউচারে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬২২ টাকা অন্য ১টি ভাউচারে ৮ হাজার ৫৮৭ টাকার ইলেকট্রিক তার, ফ্যান ও অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে মি. জামাল ভূঁয়া নাম ভাউচারে উল্লেখ করে। পরে মালামালগুলো সাদা রংয়ের প্রাইভেটকারে তুলে। মালামালের মূল্য বাবদ দোকানদারকে একটি চেক দেয়।
এসময় দোকানদার চেক নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সাথে থাকা প্রধান শিক্ষক দোকানদারের পরিচিত থাকায় ঠিকাদার মালামালগুলো স্কুলে রেখে এসে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নগদ পরিশোধ করবে বলে জানায়। ওই প্রাইভেট কারে স্কুলের ছাত্র পলাশ ও ঠিকাদার মালামাল নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিছুক্ষণ পর ঠিকাদারের মোবাইলে প্রধান শিক্ষক ফোন দিলে ঠিকাদার বলে বনুয়াপাড়া মোড়ে জ্যামে রয়েছে। প্রধান শিক্ষক ছাত্রের সাথে কথা বলতে চাইলে ঠিকাদার বলে পলাশকে পুলিশ লাইন মোড়ে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপর থেকে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক সন্দেহ হলে তাৎক্ষনিক মোটর সাইকেল নিয়ে দ্রুত স্কুলের পৌঁছালে প্রাইভেট কার ও ঠিকাদারকে দেখতে না পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক বুঝতে পারে সে প্রতারণার শিকার হয়েছে।
পরে বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির লোকজনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দদেরকে জানালে বেশ কয়কেদিন খোঁজখুজির পর কোন সন্ধান না পেয়ে প্রধান শিক্ষক নিজে বাদি হয়ে ১৫ জুন ২০১৯ তারিখে নেত্রকোণা মডেল থানায় মামলা দায়ে করেন। এই বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসলে ওই মামলা নেত্রকোণা ডিবি পুলিশের কাছে ন্যাস্ত হয়। তথ্য প্রযুক্তিকে কাছে লাগিয়ে মো. ফখরুজ্জামান তপুকে নেত্রকোণা ডিবি পুলিশের এসআই ফরিদ ও তপন বাখালী কয়েকদিন অভিযান চালানোর পর শনিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানা এলাকার গ্রেফতার করে।
নেত্রকোণার ডিবির ওসি শাহ্্নুর এ আলম রোববার রাত আটটার দিকে বলেন, মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ড্রাইভার মো. ইয়াসিনকে (২৭) আটকের পর ফরিদ হোসেন (২৬) নামে আরেক ড্রাইভারের সন্ধান মিলে। তাদের সহযোগিতায় ফাঁদ পেতে তপুকে আটক করা হয়। এভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গাড়ী ভাড়া করে প্রতারনামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল তপু। প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদে তপু প্রতারনার কথা স্বীকার করেছে এবং অভিনব কায়দায় ময়মনসিংহ জেলার মাইজবাড়ি আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয়েও একই ধরণের প্রতারনা করেছে সে। তাঁর দেয়া তথ্যে ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ফারিয়া ইলেকট্রিক নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।