নার্সারি করে কোটিপতি হয়েছেন নাটোরের দীপক

নাটোর প্রতিনিধি: শুরুটা ছিল ২০০৩ সালে। মাত্র ১০ কাঠা জমি লীজ নিয়ে নার্সারি ব্যবসা চালু করেন শহরতলীর বনবেলঘড়িয়া এলাকার যুবক দীপক কুমার ঘোষ। তিনি ১০ কাঠা জমিতে পেয়ারা, লেবু, আম সহ বিভিন্ন জাতের কলম চারা তৈরী শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে এতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বছর না ঘুরতেই সেই ১০ কাঠা জমির কলম চারা বিক্রি করেন দ্বিগুণ দামে। এরপর থেকে দীপক কুমার ঘোষকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এক বছরের মাথায় আরো তিন বিঘা জমি লীজ নিয়ে ‘মেসার্স প্রকৃতি নার্সারি’ নাম দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমান দীপক কুমার ঘোষের প্রকৃতি নার্সারি পরিমান ১০০ বিঘাতে ঠেকেছে । দীপক শুধু নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেনি, বর্তমানে তার নার্সারিতে প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। বেকারত্ব ঘোচানোর পাশাপাশি নিয়মিত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়েছে অনেক নারী-পুরুষের।
বর্তমানে দীপক কুমার ঘোষের নার্সারি ছাতনি পন্ডিতগ্রাম, ছাতনী স্লুইচগেট, ছাতনী স্কুল পাড়া, পাইকেরদোল সহ ৬/৭টি স্থানে চারা তৈরী হচ্ছে। বর্তমানে ১০০ বিঘা জমিতে নার্সারি থাকলেও প্রতিবছর ৫ থেকে ১০বিঘা জমিতে নার্সারির পরিধি বাড়ছে। এসব জমি থেকে তার প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ লাখ পিচ চারা উৎপাদন হয়। যা থেকে আয় আসে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। বর্তমানে নার্সারি ব্যবসা দীপককে বানিয়েছে কোটিপতি। তার নার্সারিতে উৎপাদিত চারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদের মধ্যে নারীরা নার্সারির বিভিন্ন কলমের বেড পরিস্কার করছেন, কেউ গাছে পানি ঢালছেন। এমন ব্যস্ততার মাঝে কথা হয় পারুল বেগম, রেশমা খাতুন, সিরাজুল ইসলাম, রবি, মিলন সহ বিভিন্ন শ্রমিকদের সাথে।
নার্সারি শ্রমিক রেশমা বেগম বলেন, দীপক কুমার ঘোষ নার্সারি চালু করার পর থেকে এখানে কাজ করি। নিয়মিত কাজ হওয়ার কারণে আমাদের কোনদিনই বসে থাকতে হয়না। তাছাড়া অল্প শ্রমে আমরা মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা করে পায়। এতে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
পারুল বেগম বলেন, বাড়ির পাশে হওয়ার কারণে আমাদের দূরে কোন কাজের সন্ধানে যেতে হয়না। পরিবার সামলেই আমরা নার্সারিতে কাজ করতে পারি। আমার মতো অনেক নারী এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
আগে মরিচের ব্যবসা করতেন সিরাজুল ইসলাম। নার্সারি শুরুর এক বছরের পর থেকেই তিনি দীপক কুমার ঘোষের সকল কিছু দেখাশুনা করছেন। সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, এখানে একেক জন শ্রমিক সপ্তাহে পারিশ্রমিক নেয়। একেকজন মাসে ৮ থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পায়। অন্য কাজে শ্রম বেশি, কিন্তু টাকা কম, আর এই কাজে শ্রম কম, টাকা বেশি। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এখানে শ্রম দিয়ে আসছি।
বর্তমানে সারাদেশেই দীপকের নার্সারিতে উৎপাদিত চারা বিক্রি হয়। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী, নওগাঁ, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেটে বেশি চারা যায়। ভালমানের চারা হওয়ার কারণে সারাদেশেই প্রকৃতি নার্সারির চারার কদর রয়েছে। তাছাড়া অনেক চারা ভারত থেকে আমদানী করেন দীপক কুমার। নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি দীপক কুমার থাই পেয়ারা ৪৫বিঘা, কাশ্মীমেরি কুল ৭ বিঘা, মাল্টা বাগান ৮ বিঘা, আমের বাগান ২৫বিঘা, ড্রাগন ৭ বিঘা জমিতে বাগান রয়েছে।
দীপক কুমার বলেন, ২০০১ সালে এসএসসি পড়াশুনার পাশাপাশি গুড় ব্যবসা শুরু করি। গুড় ব্যবসা চলাকালীন সময়ে এইচএসসি পাশ করি। এরপর ২০০৩ সালে ছোট পরিসরে বাণিজ্যিক ভাবে নার্সারি ব্যবসা চালু করি। নাটোরের সাবেক উদ্যানতত্ত্ববিদ ও বর্তমানে ঈশ্বরদীর টেবুনিয়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আব্দুল আউয়াল স্যারের পরামর্শে আমি নার্সারি ব্যবসা চালু করার পর থেকে পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি। প্রতিবছর আমার নার্সারিতে ২০ লাখের বেশি চারা উৎপাদন হয়। যা থেকে বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা বিক্রি হয়।
দীপক কুমার আরও বলেন, আমার নার্সারিতে অনেক বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়েছে। কম পরিশ্রমে তারা বাড়তি আয় করতে পারছে। তাছাড়া আমার দেখা দেখি অনেক বেকার যুবক এই পেশার দিকে ঝুঁকছে।
নাটোরের সাবেক উদ্যানতত্ত্ববিদ ও বর্তমানে ঈশ্বরদীর টেবুনিয়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আব্দুল আউয়াল বলেন, দীপক ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখনতার নার্সারির পরিধি বেড়েছে। তার নার্সারি কিভাবে আধুনিকায়ন করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। তাছাড়া ভালমানের চারা কিভাবে তৈরী এবং বাজারজাত করা যায় সে পরামর্শ দীপক কাজে লাগিয়ে আজ সফল ব্যবসায়ী।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।